এক বিন্দু রক্ত থাকতেও দখলদারদের কাছে প্রেস ক্লাব ছেড়ে দেব নাঃশওকত মাহমুদ

‘সমঝোতার’ মধ্য দিয়ে গঠিত জাতীয় প্রেস ক্লাবের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাংবাদিক নেতারা। ভোটবিহীন এই কমিটিকে ‘দখলদার’ আখ্যায়িত করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বিএফইউজে সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেছেন, “আমাদের গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও অবৈধ এ দখলদারদের কাছে প্রেস ক্লাব ছেড়ে দেব না। তাদের কোন সিদ্ধান্তই আমরা গ্রহণ করবো না।”
‘জাতীয় পেস ক্লাবে দখলের প্রতিবাদে’ গতকাল প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে একথা বলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ।
সমাবেশে প্রেস ক্লাবের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরীও ছিলেন। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী।
তাদের হুঁশিয়ারির প্রতিক্রিয়ায় নতুন কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, “এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার কোন এখতিয়ার তাদের নাই।
“যেহেতু নির্বাচন হয়ে গেছে, এরা কয়েকজন বাইরে দাঁড়িয়ে কি বলেছে, সেটা নিয়ে বলার কিছু নেই।”
কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল নেতৃত্বাধীন প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ গত ৩১শে ডিসেম্বর শেষ হলেও ভোট নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।
এর মধ্যে গত সপ্তাহে প্রেস ক্লাবের আওয়ামী লীগ সমর্থক সদস্য এবং বিএনপি সমর্থকদের একাংশ বৈঠক করে ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে। ১৭ সদস্যের কমিটিতে বিএনপি সমর্থক সাতজন রয়েছেন, যাদের পরে নিজেদের ফোরাম থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন শওকত মাহমুদ নেতৃত্বাধীন অংশ।
ওই কমিটির সদস্যরা প্রেস ক্লাবের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চলে না গেলে ৪ঠা জুন থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি সমাবেশে দেন শওকত মাহমুদ।
তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের ধারক জাতীয় প্রেস ক্লাব আজ চক্রান্তে আক্রান্ত। দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভার নাম করে এক শ্রেণীর সাংবাদিক অবৈধভাবে কমিটি গঠন করেছে। তারা এখন রুম দখল করে বসে আছে।”
নতুন কমিটির সদস্যদের নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে শওকত মাহমুদ বলেন, “যারা এ কমিটিতে আছে, তারা কোনদিন নির্বাচিত হয়নি। আপনারা যদি নির্বাচনে জিততে পারেন, তাহলে হাতে চুড়ি পরে নেব।”
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নতুন কমিটিকে গ্রহণ না করে অতিরিক্ত সাধারণ সভা ডেকেছে। সেখানে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলছে তারা।
“নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হবে, যারা নির্বাচিত হবে, তাদের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে,” বলেন শওকত মাহমুদ।
গত কয়েক বছর ধরে প্রেস ক্লাবে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা নির্বাচিত হয়ে আসছেন। শওকত মাহমুদের নতৃত্বে প্রেস ক্লাবকে ‘রাজনৈতিক কার্যালয়ের’ মতো ব্যবহার হচ্ছিল বলে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোক্তাদের অভিযোগ।
নতুন কমিটি গঠনের সভায় আওয়ামী লীগ সমর্থক সাংবাদিকদের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছিলেন, বিদায়ী কমিটিকে ৩১শে মার্চের মধ্যে সাধারণ সভা ও নির্বাচনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তাতে ব্যর্থ হওয়ার পরও চেয়ার আঁকড়ে রেখেছেন।
“আমরা সাধারণ সদস্যরা এর জবাবে বলতে চাই, আপনারা অবৈধ, আপনারা আর ক্ষমতায় নেই। এরপরও যদি আপনারা ক্লাবের চেয়ার আঁকড়ে থাকেন, তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। সাধারণ সদস্যরা আপনাদের মোকাবিলা করবে।”
ওই সভায় বিএনপি সমর্থক সাংবাদিকদের নেতা আমানুল্লাহ কবীর নতুন কমিটি গঠনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, “জাতীয় প্রেস ক্লাবকে ইউনিয়নের মতো বিভক্ত করে এর অখণ্ড ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করায় আজকের এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যদি ব্যক্তিবিশেষ এই ক্লাবের নেতৃত্ব কুক্ষিগত না করত, তাহলে এই সংকট সৃষ্টি হতো না বলে আমি মনে করি। আমরা সেজন্য সমঝোতার একটি প্যানেলের মাধ্যমে এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই।

আতিক/প্রবাস

১৬ thoughts on “এক বিন্দু রক্ত থাকতেও দখলদারদের কাছে প্রেস ক্লাব ছেড়ে দেব নাঃশওকত মাহমুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *