গাজীপুরের কালীগঞ্জে মাঝিদের হাতে নৌকাতেই গণধর্ষণের ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে সেসব চাপা পড়ে গেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানকার মাঝিরা খুব বেপরোয়া স্বভাবের। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন হরহামেশা। আর ভাড়া তোলার অজুহাতে কৌশলে নারী যাত্রীদের খুব অশালীন বাক্যে বিদ্ধ করেন। এসবের কোনো প্রতিকার নেই।
গত ২৫ মে রাতে কর্মস্থল নরসিংদী পলাশের বাগপাড়া থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে নিজবাড়ি কালীগঞ্জের নাগরানায় ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হন একজন নারী। নৌকা থেকে কালীগঞ্জ থানাধীন সাওরাইদ ঘাটে নামার সময় দুজন তাকে আটকে মোক্তারপুরে একটি নৌকার ভেতর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ রাতেই দুই ধর্ষক তাকে তুলে দেয় আরো দুজনের কাছে। তারাও তাকে ধর্ষণ করে পালাক্রমে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী- এরপর তাকে সেদিন ভোর চারটায় ফকিরবাড়ি ঘাটে নামিয়ে দেয় ধর্ষকরা। সেখান থেকে রিকশাযোগে এ নারী যান তার বোন নাসিমার বাড়ি সুলতানপুরে। এরপরই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে এই সাওরাইদ ঘাট থেকেই তুলে নিয়ে কিছু মাঝি একজন নারীকে নৌকায় গণধর্ষণ করেন। এ নারীর নাম-পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এ ঘটনা গ্রামের অনেকেই জানেন। ঘটনাটি থানা পর্যন্ত গড়ায়নি বলেও জানান তারা। এছাড়া প্রায় গত বছরের মাঝামাঝি সময়েও নৌকাতেই মাঝিদের হাতে আরও একটি ধর্ষণের ঘটনার কথা লোকমুখে শোনা গেছে। তবে ঘটনাস্থল এবং ধর্ষিতার নাম-পরিচয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
নাগরানা গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুর জানান, ওই নারীর বাড়ি সুলতানপুরে। এছাড়া তিনি আর কিছু জানাতে পারেননি। নাগরানা, জামালপুর, মোক্তারপুরের কয়েকজন বাসিন্দার মুখ থেকেও সুলতানপুরের নারীর ঘটনা আবছা আবছা শোনা গেছে। এটিও থানা পযন্ত গড়ায়নি।
ঘটনাগুলো থানা পর্যন্ত কেন গড়ায় না প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, থানা পুলিশ সম্পর্কে এ অঞ্চলের মানুষ ততটা সচেতন নন। এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে শিক্ষার হারও বেশ নিচে। অন্যদিকে এসব অঞ্চল খুবই প্রত্যন্ত।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এ গণধর্ষণের ঘটনায় মামলার আসামি কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তাপুর গ্রামের রিপন মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (২৮), রতন শেখের ছেলে শরীফ শেখ (২৫), খোরশেদ আলমের ছেলে ফাহিম মিয়া (২২) ও হেলাল উদ্দিনের ছেলে আলামিন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন পেশাদার মাঝিই মূলতঃ সেখানকার শীতলক্ষ্যায় ইঞ্জিন চালিত প্রায় সব নৌকার নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তাদের কেউ কেউ একাধিক নৌকার মালিকও বটে।
এ দলের আরও কয়েকজন মাঝির নাম এসেছে অনুসন্ধানে। তারা হলেনÑ জুলহাস, রতন, আমিনুল, রাজ্জাক ও সেলিম। তারাও মোক্তারপুরেরই বাসিন্দা। সেখানকার ৫-৬টি ঘাট সম্পূর্ণ তাদের নিয়ন্ত্রণে। পারিবারিক বা ব্যক্তিগতভাবে তারা প্রভাবশালী না হলেও গোষ্ঠীগতভাবে কিছুটা শক্তিশালী এবং বেপরোয়া স্বভাবের। তাদের পূর্বপুর’ষ এ পেশার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন।
এদিকে, ২৫ মে নারী শ্রমিককে গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার শরীফ ও ফারুকের ৫দিনের রিমান্ডের মধ্যে দুইদিন অতিবাহিত হয়েছে। গত শুক্রবার তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গত বৃহস্পতিবার ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়, যার বাদি ধর্ষিতা।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এসব এলাকায় আরও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। থানায় না আসা অস্বাভাবিক নয়। অঞ্চলটা খুব প্রত্যন্ত। মানুষও অসচেতন।
আতিক/প্রবাস
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.
Kholil Ahmed liked this on Facebook.
Monir Akbor liked this on Facebook.
Fazlul Haque liked this on Facebook.