ঘটনা-১. গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নারগানা খেয়া ঘাট সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে বুধবার রাতে নৌকার মধ্যে গনধর্ষণের শিকার হয়েছে প্রাণ কারখানার এক নারী শ্রমিক।থানা সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় পার্শ্ববর্তী নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার প্রাণ কারখানা ছুটি শেষে নৌকায় বাড়ি ফিরছিল মেয়েটি। পথে নারগানা খেয়া ঘাট এলাকায় ৪ মাঝি তাকে শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌকার মধ্যে উপর্যপুরি ধর্ষণ করে।
ঘটনা-২. গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন ওই নারী। শনিবার রাতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় ডাক্তার দেখাতে যান। পরে ওই রাতেই তারা বাসায় ফিরতে রাস্তায় গাড়ির জন্য দাঁড়ান। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও কোনো গাড়িতে উঠতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে একটি ট্রাক তাদের গাজীপুরে পৌঁছে দেবে বলে চুক্তি করে। পরে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ওই ট্রাকে উঠেন। ভূক্তভোগীর অভিযোগ, ট্রাকে করে বাড়ি ফেরার পথে চালক তাদের কৌশলে কোমল পানীয়র সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়। এতে তারা দু’জনেই অচেতন হয়ে পড়ে। এসময় স্বামীকে ট্রাকের পেছনের অংশে উঠিয়ে ভয় দেখিয়ে নারীটিকে ধর্ষণ করেন। পরে গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় স্বামীসহ ওই নারীকে ফেলে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা-মোবাইল সেটও নিয়ে যায় ওই চালক। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
ঘটনা-৩. রাজধানীতে আদিবাসী তরুনী মাইক্রোবাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ওই গারো তরুনী অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামী করে ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া ঢাকা মেডিকেলে এক রোগীর স্বজনকে হাসপাতালের আনসার ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভাটার থানার ওসি নূরুল মুক্তাকিন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার জন্য সিনা সিএনজি স্টেশনের সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন আনুমানিক ২১ বছরের ওই তরুণী। এসময় একটি মাইক্রোবাস থেকে ৪ যুবক নেমে জোরপূর্বক তাদের গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে অদূরেই চালকসহ ৫ যুবক ওই তরুণীকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। এক ঘণ্টা পর তারা উত্তরার (পূর্ব) জসিম উদ্দিন রোডের মাথায় অন্ধকারে তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে তরুনী বাসায় ফিরে বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানায়। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ওই তরুনী থানায় গণধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা করেন।
ঘটনা-৪. মাদারীপুরের ডাসার থানার পান্থাপাড়া গ্রামে রেশমা আক্তার (২৮) নামের এক গৃহবধুকে হাত-পা বেঁধে মুখে সুপারগ্লু দিয়ে মুখ বন্ধ করে।এরপর শরীরের বিভিন্ন গোপণ অঙ্গে সিগারের ছ্যাকা দিয়ে নির্যাতন করেছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত ঐ গৃহবধুকে গুরুতর আহত অবস্থায় কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি ঘটনা।এর প্রতিটি ঘটনাতেই আমাদের তীব্র প্রতিবাদ করা নৈতিক দায়িত্ব। এসব ঘটনা জড়িত পশুদের শাস্তির দাবীতে আন্দোলন করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব।ক্ষেত্র বিশেষ হয়তো কেউ কেউ করেছে কিংবা যাদের করার কথা তারা এড়িয়ে গেছে। তবে গারো তরুনী ধর্ষণের পর অন্য যেকোন ঘটনার তুলনায় নারীবাদী কিংবা এনজিও ব্যক্তিত্বরা বেশি সোচ্চার ছিল। তার প্রচার করেছে ওই তরুনী গারো বলে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।বিভিন্ন ধর্ষনের খবর পড়ে আমার কাছে কিন্তু এরকমটি মনে হয়নি।আমার কাছে মনে হয়েছে পুরুষ পরিচয়ে এই কামুক জানোয়ারগুলোর ধর্ষণের জন্য কোন জাত, বয়স, ধর্ম দেখে ওরা ধর্ষণ করে না।এই পশুগুলোর পশুবৃত্তি যখন জেগে ওঠে তখন পাঁচ হোক কিংবা পচাশি বছর হোক মুসলিম হোক কিংবা হিন্দু হোক, আদিবাসী হোক কিংবা অনাবাসী হোক কাউকেই রেহাই দেয়না।ওদের পরিচয় ওরা ধর্ষক, ওরা পশু ওরা জানোয়ার। আর যারা ওদের নির্যাতনের শিকার তারা আমাদের বোন, আমাদের মা, আমাদের সন্তান, এই দেশেরই নাগরিক। সর্বপরি তারা মানুষ।প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনাতেই কঠোর আন্দোলন হওয়া উচিত। কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।কিন্তু দেশের এনজিও নির্ভর নারীবাদী নেতা-নেতৃরা ক্ষেত্র বিশেষ আন্দোলন করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নিশ্চুপ থাকেন। সম্প্রতি টিএসটির ঘটনায় সুলতানা কামাল চক্রবর্তীরা নীরব ছিলেন।এরকম বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সুলতানা কামাল চক্রবর্তীরা নির্দিষ্ট সংখ্যক নির্যাতিতদের পক্ষেই সোচ্চার থাকেন বাকিদের বেলায় নয়।দেশের সকলেই জানে এই এনজিওগুলো বিদেশীদের অর্থে পরিচালিত হয়। দীর্ঘদিন যাবত অভিযোগ যেসব নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে আন্দোলন করলে বিদেশী ফান্ড আনা যাবে সেসব ঘটনা নিয়েই তারা আন্দোলন হয়েছে। উপরে কয়েকটি ঘটনার বর্ননা দিলাম। এসব ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে।প্রায় একই রকম ঘটনা হলেও বিশেষ একটি ঘটনাকে গণমাধ্যমগুলো বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।একই ধরনের অপরাধ, আদালতে সাজাও হয় একই ধরনের।নির্যাতনের শিকার যারা হয়েছে তারা সবাই আমার দেশের নাগরিক।তারপরও কেন একটি বিশেষ ঘটনাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হলো?যেসব ঘটনা নিয়ে আন্দোলন বেশি হয় সেসব ঘটনার নিউজ ট্রিটমেন্টও ভালো হয় কিংবা উল্টোও বলা যায় যেসব ঘটনায় নিউজ ট্রিটমেন্ট ভালো হয় সেসব ঘটনায় আন্দোলনও বেশি হয়। দেশের মুলধারার গণমাধ্যমগুলো কি এইসব এনজিও নিয়ন্ত্রিত কিংবা প্রভাবিত? নাকি গণমাধ্যম দ্বারা এইসব এনজিওগুলো প্রভাবিত?
লেখক: বেলাল রিজভী
গণমাধ্যম কর্মী
Belal Rezvi liked this on Facebook.
AK Azad liked this on Facebook.