মিনিটে এক ভোট, বেশি হলে ‘কারচুপি’

মক ভোটিং’-এ দেখা গেছে, প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ একটি ভোট পড়ে। এর বেশি ভোট পড়লেই তাতে কারচুপি হচ্ছে বলে সন্দেহ তৈরি হবে।

মাগুরায় এ ধরনের ঘটনা আঁচ করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইসি কর্মকর্তারা বলছেন।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের (ইটিআিই) একটি কক্ষে মাগুরা-১ আসনের চারটি প্রতীকে নমুনা ব্যালট পেপারে ভোটের মহড়া হয়।

ইটিআই মহাপরিচালক খোন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী দুই ঘণ্টায় সাধারণ কত ভোট পড়ে তা জানতেই এ মহড়া করা হয়। দেখা গেছে, প্রথম ঘণ্টায় বিরতিহীনভাবে ৭১ ভোট, দ্বিতীয় ঘণ্টায় ৮১ ভোট পড়েছে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই প্রতিঘণ্টায় গড়ে ৭৬ ভোট পড়েছে বলা যায়।”

এক্ষেত্রে প্রতিটি ভোটের জন্য ব্যয় হয়েছে এক মিনিটের সামান্য কম সময়।

“প্রতি মিনিটে একটির বেশি ভোট পড়লেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট কক্ষে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করা যাবে।”

‘মক ভোটিংয়ের’ ফলাফল জানিয়ে বুধবারই ইসিতে প্রতিবেদন দিয়েছে ইটিআই।

অভিজ্ঞতা থেকে মিজানুর রহমান বলেন, প্রথম ঘণ্টার চেয়ে দ্বিতীয় ঘণ্টায় ভোট পড়ার হার বেশি থাকে। প্রথমদিকে যাচাই-বাছাই ও ব্যালট সরবরাহে সময় নেন কর্মকর্তারা। পরে দ্রুত কাজের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন।

“স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের পরিস্থিতিই বিরাজ করে কেন্দ্রে। কখনো কেন্দ্রে উপস্থিতি কম থাকে। কিন্তু লাইনে অনেক লোক থাকলেও মহড়ার চেয়ে বেশি ভোট পড়া যুক্তিসঙ্গত হবে না।”

৩০ মে মাগুরা-১ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, এনপিপি, বিএনএফ ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে চারজন প্রার্থী রয়েছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ আগেই বলেছেন, ১৯৯১ সালের  মাগুরা নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে কমিশন এবার বেশি সতর্ক।

এই সতর্কতার অংশ হিসাবে কারচুপি ঠেকাতে ঘণ্টাওয়ারি ভোটের প্রতিবেদন সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ভোটের দিন কেন্দ্রভিত্তিক তথ্য ইসি সচিবালয় থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় সংগ্রহে মনিটরিং সেলও কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ

মাগুরা-২ আসনের সাংসদ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার ‘সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে’ সার্কিট হাউজ ব্যবহার, প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিয়ে ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন’ জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম।

সোমবার পাঠানো ওই চিঠিতে ইসি সচিব লিখেছেন, গত ২১ মে থেকে ২৩ মে মাগুরা সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন প্রতিমন্ত্রী, যা আচরণবিধির ১৪ (৬) ধারার লঙ্ঘন।

বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ‘নজরে আনার জন্য’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞাকে ওই চিঠিতে অনুরোধও করেছেন ইসি সচিব।

মামলা নিতে সিইসির নির্দেশ

মাগুরা উপ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তপন কুমার রায়। ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সিইসির কাছে করা এক আবেদনে রতন অভিযোগ করেছেন,  জেলা ছাত্রলীগের লোকজন প্রতিনিয়ত তার প্রচারে ‘বাধা দিচ্ছে’। পুলিশ প্রশাসন ‘হয়রানি করছে’ তার কর্মীদের।

“এ অবস্থা বজায় থাকলে ভোট আদৌ শান্তিপূর্ণভাবে হবে না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করতে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন জররি।”

সেনা মোতায়েনে অনুরোধে সাড়া না দিলেও স্বতন্ত্র এ প্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নিতে নির্বাচনী এলাকার শ্রীপুর ও মাগুরা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ।

তপন কুমার রায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলা নেওয়ার নির্দেশনাসহ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে ইসির উপ সচিব সামসুল আলম জানান।

২ thoughts on “মিনিটে এক ভোট, বেশি হলে ‘কারচুপি’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *