মোদির সফরে থাকছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ছক চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে ভারতের স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ এবং কমান্ডো ফোর্স ব্ল্যাকক্যাট। মোদির সফরের তিন দিন আগেই ভারত থেকে একটি বিশেষ বুলেটপ্রুফ গাড়ি ঢাকায় আসবে। এ গাড়িতে করেই মোদি ঢাকার রাস্তায় চলাচল করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় কোথায় অবস্থান করবেন সে বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এর আগে অন্যান্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ের তুলনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় বেশি কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যৌথভাবে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন।

এদিকে নরেন্দ্র মোদির সফরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আঞ্চলিক সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে। এতে সন্ত্রাস দমন ছাড়াও জাল মুদ্রা পাচার ও মানব পাচার রোধে উভয় দেশের যৌথভাবে কাজ করার বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট থাকবে। উভয় দেশের জন্য সন্ত্রাসের সাধারণ হুমকি চিহ্নিত করে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ৩ জুন থেকেই নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হবে ঢাকায়। ৭ জুন পর্যন্ত নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে রাজধানী। ৬ জুন সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নরেন্দ্র মোদি যে সড়ক দিয়ে আসবেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য যেসব সড়ক ব্যবহার করবেন সেসব সড়কের সার্বিক নিরাপত্তার অবস্থা এরই মধ্যে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকছে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ এবং কমান্ডো ফোর্স ব্লাকক্যাট। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের তিন থেকে চারদিন আগেই ঢাকায় আসবেন ভারতীয় দুটি নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা। এরই মধ্যে নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার আলাপ-আলোচনা করেছেন। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশের এসএসএফ, ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন, এসবিপিএন এবং ডিবি সমন্বয়ে গড়ে তোলা হবে শক্তিশালী নিরাপত্তাবলয়। শুধু সড়ক পথে নয়, নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের নিয়ে আকাশেও চক্কর দেবে বিশেষ হেলিকপ্টার।

কোথায় থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী :৩৬ ঘণ্টার সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকার কোথায় অবস্থান করবেন তা চূড়ান্ত হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে এ মুহূর্তে বিষয়টি প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ৩-৭ জুন পর্যন্ত হোটেল সোনারগাঁওয়ে নতুন কোনো অতিথি না তোলার জন্যও সরকারিভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাও। ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসভবন ইন্ডিয়ান হাউসও প্রস্তুত থাকছে। তবে নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় পেঁৗছার আগ পর্যন্ত তিনি কোথায় থাকবেন তা প্রকাশ করা হবে না। একটি সূত্র জানায়, মোদির সফরসঙ্গী হিসেবে পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা আসতে পারেন জানানো হলেও কোন কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আসছেন তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে জানানো হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর আসছেন এটা নিশ্চিত।মোদির সফরে সন্ত্রাস দমন ইস্যু :কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে আঞ্চলিক সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রস্তুতিও প্রায় চূড়ান্ত। দু’দেশের নিরাপত্তার জন্য সাধারণ হুমকিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের পাশাপাশি জাল মুদ্রা পাচার ও মানব পাচার সংক্রান্ত বিষয়ও সমঝোতা স্মারকে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, মানব পাচার, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার, জাল মুদ্রাসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হয়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরকালে এ সব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি। এবার নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন আলোচনার ফলে সমঝোতা স্মারক স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। অবৈধ পথে কেউ ভারতে গিয়ে আটক হলে তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও সমঝোতা স্মারকে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।সূত্র আরও জানায়, ভারতীয় জাল রুপি তৈরি করতে করাচিতে একটি গোপন টাঁকশাল গড়ে তোলা হয়েছে। পাকিস্তানি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ওই টাঁকশাল। মুদ্রা পাচারকারীরা বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। জাল রুপি চোরাচালানের সঙ্গে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবিও জড়িত বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে বিভিন্ন সময়ে তথ্য এসেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার উদ্বেগের কথা জানিয়ে জাল রুপির চোরাচালান ঠেকাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের প্রস্তাব করেছে। নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরকালে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকার পক্ষে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (ক্রাইম) হেলাল উদ্দিন বদরী এবং দিলি্লর পক্ষে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) আইজিপি সঞ্জীব কুমার সিং সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করবেন।

One thought on “মোদির সফরে থাকছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *