বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে বন্দি নারীদের উপর নির্যাতন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি নির্দিষ্ট করে বলেছেন, ঢাকা, সিলেট কারাগার এবং গাজীপুর নারী ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি গাজীপুরে নারী ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা জানান প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে অনেক যুবতী মেয়েকে ৫৪ ধারায় আটক রাখা হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির করা হয় না। জেলা জজকে এ বিষয়টি তদন্ত করে তালিকাসহ রিপোর্ট দিতে বলেছি। জেলা জজ জানিয়েছেন, মেয়েদের আদালতে উপস্থাপন করা হয় না। কারণ তাদের যৌন কাজে ব্যবহার করা হয়। তখন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে (ড. মিজানুর রহমান) সুপ্রিম কোর্টে আমার কার্যালয়ে ডেকে এনে লিস্টসহ ওইসব নারীর তালিকা দিয়েছিলাম। অনেক দিন হয়ে গেছে, দেখার মতো কিছুই হয়নি।’
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক যুগান্তকারী রায় :বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান’ শীর্ষক বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মানবাধিকার কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিলেট কারাগার পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সেখানে দেখলাম লোহমর্ষক ঘটনা। যুবতী নিরপরাধ অনেক মেয়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আছে, কারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এগুলো আপনারা খুঁজে বের করুন। অনেকে অভিযোগ করেছে তারা সেখানে নির্যাতিত হচ্ছে।’
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারের সঙ্গে কথা বলেও জানতে পারলাম, অনেক নারী আসামি রয়েছেন যাঁদের পক্ষে আইনি লড়াই করার মতো কেউ নেই। বিনা বিচারে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। অনেক নিরপরাধ আসামি রয়েছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে থাকায় অস্বাভাবিক আচরণ করছে। জুনে আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যাব। চাইলে আপনারা মানবাধিকার কর্মীরা আমার সঙ্গে যেতে পারেন।’
বিদ্যমান সাক্ষ্য আইন সংশোধনের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী, একজন নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আদালতে জেরার মাধ্যমে আবারও তাঁর সভ্রম নষ্ট করা হয়। এ আইনের ১৫৫ ধারায় জেরা করার সময় নির্যাতিত নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তাই ব্রিটিশ আমলে করা এই আইন সংশোধন করতে হবে।’
এ সময় কারাবন্দি নারীদের আইনী সহায়তা দিতে আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘টাকা-পয়সা না দেখে মাসে না পারেন, বছরে দুটি ফ্রিতে এ ধরনের মামলা শুনানি করেন। মানুষের জন্য এগিয়ে আসুন।’
বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হওয়া প্রায় সাড়ে তিন হাজার নারীকে সে দেশের বিভিন্ন হোটেলে অসামাজিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘এদের অধিকাংশই শিশু ও তরুণী। এসব নারী দেশে ফিরে আসতে চাইলেও উদ্যোগের অভাবে তাদের সীমান্ত থেকে দেশে আনা যাচ্ছে না। সরকারের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে উদ্যোগী হয়ে এসব নারীদের উদ্বার করতে হবে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি কয়েক মাস আগে একটি সেমিনারে অংশ নিতে ভারতের মুম্বাই শহরে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নারীকে ভারতে পাচার করে সেখানকার বিভিন্ন হোটেল ও বাসাবাড়িতে অসামাজিক কাজ করানো হচ্ছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করা হলেও সরকারের উদ্যোগের অভাবে সীমান্ত থেকে তাদের এ দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। তাই দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে পাচার হওয়া এসব মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।’
এ বিষয়ে ওই সব দেশের অনেক মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে প্রধান বিচারপতি জানতে পারেন, বাংলাদেশের অনেক মেয়েকে দেশে ফেরত পাঠাতে সীমান্তে আনা হলেও বাংলাদেশের উদ্যোগের অভাবে তাদের দেশে প্রবেশ করানো যায় না। আবার ওই নারীদের পরিবারও অনেক সময় তাদের কাজের কথা শুনলে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী হয় না। এটা খুবই দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন তিনি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সিগমা হুদা ও ফাউজিয় করিম ফিরোজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
আতিক/প্রবাস
Sadeq Hasan Mridha liked this on Facebook.
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.
Mahbub Samol liked this on Facebook.
Md Nasir liked this on Facebook.
Jhangir Alom liked this on Facebook.
Md Salahuddin Faisal liked this on Facebook.
Md Nirob Hossen Riaz liked this on Facebook.
Bilal Hasan liked this on Facebook.
Probaser Prohor liked this on Facebook.
Ali Imran Shamim liked this on Facebook.
Rashed Islam liked this on Facebook.