ইরাক সরকার ও আইএসের মধ্যে ক্ষমতা আর ভুখন্ডের নিয়ন্ত্রন নিয়ে চলছে দোদুল্যমান লড়াই। এ লড়াইয়ে সর্বশেষ যুদ্ধক্ষেত্র এখন রামাদি। সরকারী বাহিনীকে হঠিয়ে শহরের নিয়ন্ত্রন নিয়েছে আইএস। রক্তক্ষয়ী ওই লড়াইয়ে অংশ নেয়া এক সেনা ব্যাখ্যা করলেন কেন আইএসের কাছে পরাজিত হয়েছে সরকারী বাহিনী। আসাদ আল ইয়াসিরি নামের ওই সেনা এজন্য দুষলেন সেনা নেতৃত্বকে। সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার বর্ণনা। রামাদি লড়াইয়ে বাম হাতে গুলিবিদ্ধ হন আসাদ। এ কারনে সেনাবাহিনী থেকে চিকিৎসা অব্যাহতি পেয়েছেন। আইএসের তীব্র অভিযানের মুখে রামাদি থেকে পিছু হঠা সর্বশেষ দলগুলোর মধ্যে ছিল তার কন্টিনজেন্টটি। কিভাবে তারা শহরটিকে ছেড়ে চলে এসেছেন সেসব ঘটনাপ্রবাহের ঘোর এখনও কাটেনি আসাদের। তার মনের মধ্যে এখনও পিছু হঠার আদেশের পেছনে রহস্যের আভাস ঘুরপাক খাচ্ছে। কেনই বা এর আগে আইসিস বন্দীদের মৃত্যুদন্ড থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় সেটাও তার কাছে স্পষ্ট নয়।
আসাদ ও তার কন্টিজেন্টের অবস্থান ছিল শহরের পশ্চিমে উন্মুক্ত স্থানে। আনুমানিক ১৪০ জনের এ দলটিকে ছোট ছোট দু’জডন ইউনিটে ভাগ করা হয়। আসাদের উইনিটের উভয় দিকেই টার্গেট করে আইএস। আসাদ জানান, রাস্তার পাশে পুতে রাখা বোমায় দুটি সামরিক যান বিধস্ত হয়ে আমাদের ৫ জন মারা যান। এরপর তারা আমাদের দিকে বিস্ফোরক লাগানো বুলডোজার নিয়ে এগিয়ে আসে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে বন্দুকযুদ্ধ। যুদ্ধের শেষ সময়টা ধারণ হয় এক সেনার মোবাইল ফোন ক্যামেরায়। এতে দেখা যায়, এক সেনা গুলি ছুড়ছেন আর তার পাশে পড়ে আছে নিহত এক সহযোদ্ধার লাশ। ক্রমেই পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হতে শুরু করে। বাড়তে থাকে বন্ধুকের আওয়াজ। আসাদের কমান্ডার রেডিওতে আকাশ পথে সহায়তার বার্তা পাঠায়। আর সেনাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন- ফাইট, হিরোজ, ফাইট! চলতে থাকে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই। একজন চিৎকার করে সতর্কবার্তা দেয়, ওরা অপর দিক থেকে আসছে। আসাদ বলেন, আইএস যোদ্ধারা তাদের চার দিক থেকে অগ্রসর হতে থাকে। পেছনের দিক থেকে যে ইউনিটের তাদের রক্ষা করার করার কথা ছিল তারা সেখানে ছিল না। ফলে শত্রুপক্ষের বন্দুকের মুখে অসহায় হয়ে পড়ে আসাদের কন্টিনজেন্ট। কেউ একজন আরও গোলাবারুদের জন্য চিৎকার দেয়। আসাদ সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে লাফ দিয়ে ওই সেনার কাছে যান। গুলি এসে লাগে তার হাতে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আরেক সেনা তাকে টেনে হেচড়ে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর আরেকটি ক্ষীন চিৎকরা শোনা যায়, ‘গোলাবারুদ শেষ, গোলাবারুদ শেষ’। এর কিছুক্ষণ পরই আসে পিছু হঠার নির্দেশ। আসাদ বলেন, আমাদের আদেশ অনুসরন করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
আসাদের দৃষ্টিতে যুদ্ধ করতে সেনাদের ইচ্ছায় কোন ঘাটতি নেই। তিনি দুষলেন সেনা নেতৃত্বকে। সবকিছু নিয়ে ক্ষুব্ধ এ সেনা। তিনি জানান, রামাদি পতনের দু সপ্তাহ আগে তার ইউনিট একটি আইএস লক্ষ্যবস্তু দখল করে। এতে ৬ আইএস জঙ্গি নিহত হয়। তাদের হাতে আটক হয় আরও ৭ জন। এদের মধ্যে ৪ জন ছিল বিদেশী। তাদেরকে তথ্যের জন্য নির্যাতন করা হয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দেয় তারা। আসাদ বলেন, আমরা আটক ৭জনকেই হত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারিনি কেননা আমাদের কমান্ডার এর আগেই সদরদপ্তরে জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আসাদের মতো ইরাকি সেনাদের য্দ্ধু করার দৃঢ় ইচ্ছা নেই এমন ধারণার বিষয়ে রীতিমতো ক্রোধ প্রকাশ করলেন তিনি। বরং তিনি দুষলেন সামরিক নেতৃত্ব আর লজিস্টিক্যাল ব্যার্থতাকে যে কারণে তাদের অপর্যাপ্ত সরবরাহ আর সহায়তার শিকার হতে হয়েছে। আসাদ মনে করেন, রামাদির যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হঠার নির্দেশ ছিল বিশ্বাসঘাতকতা। ইরাকি সরকার বলেছে, কি ঘটেছিল আর পিছু হঠার নির্দেশ কিভাবে এসেছিল তা খুঁজে বের করতে তারা তদন্ত শুরু করেছে। কিন্ত এখনপর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য কোন ব্যাখ্যা কেউ দেয়নি। ক্ষোভ আর আক্ষেপে আসাদ বলেন, আমি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করতে চাই। মিলিশিয়াদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আবারও লড়াইয়ে ফিরে যেতে চাই।
আতিক/প্রবাস
Md Fahad Abdullah liked this on Facebook.
Md Nirob Hossen Riaz liked this on Facebook.
Haji Rubel Sowkat Ramgonj liked this on Facebook.
Ekhlas Ahmed liked this on Facebook.
Ali Imran Shamim liked this on Facebook.