বাংলাদেশ – ধর্ষক ও খুনীদের স্বর্গ

বাংলাদেশের পথ ঘাট এখন আর জনশূন্য থাকেনা। মানুষজন গিজ গিজ করে। ১৯৯৯ সালে আমি বাংলাদেশে গেছিলাম । তখন দেখেছিলাম জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর (এই এয়ারপোর্টের নাম এখন পরিবর্তন হলেও এয়ারপোর্ট সেখানেই আছে যেখানে ছিল)থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য । সংসদ ভবনের আশে পাশে মানুষে কাপড় ধুচ্ছে হাটু পানিতে। পিজি হাসপাতালের (এই হাসপাতালের নামও বদলে ফেলা হয়েছে তবে হাসপাতাল সেখানেই আছে যেখানে ছিল) সামনে্র ড্রেনে বাচ্চারা পায়খানা করছে। মা রুটি শেখছেন আর বাবা ম্লান মুখে বসে আছেন। শেরাটন হোটেলের (এই হোটেলের নাম আগে ছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল – তারপর মালিকানা পরিবর্তন করার পরে হয়েছিল শেরাটন হোটেল – এখন এই হোটেলের নাম পরিবর্তিত হয়েছে কিন্তু হোটেল সেখানেই আছে যেখানে ছিল) আশে পাশে পলিথিন বিছিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে মানুষজন ঘুমাচ্ছে। হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে গুলিস্তান পৌছাতে সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেছিল। চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। হলি ফ্যামিলি হোটেলের চারিপাশে ছোট ছোট গার্বেজের পাহাড়। হলি ফামিলি হাসপাতালের (এই হাসপাতালের নাম পরিবর্তন হয় নাই?) ভেতরে রোগীদের ওয়ার্ডে বেড এর নীচে প্লাস্টিকের বড় গামলাতে করে মানুষে থালাবাসন মাজছে। বাথরুমে যাবার প্রশ্নই উঠেনা। সবখানেই নোংরা। এত মানুষজন কি শুধু ঢাকাতেই নাকি বাংলাদেশের অন্যান্য শহরেও এমন মানুষের ভিড়? আমি জানিনা। আমি ঢাকাতে ছিলাম মাত্র এক সপ্তাহ। বাংলাদেশের আয়তন আগের মতই আছে। বাংলাদেশের মানুষের সংখ্যা আগের থেকে বৃদ্ধি পেলেও মানুষের মন মানসিকতা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম হয়ে যাচ্ছে। বর্ষবরণ অনুষ্টানে শত শত মানুষের ভীরে মেয়েদের কাপড় ছিড়ে ফেললে চারিদিকে দাঁড়িয়ে থাকে দ্বিপদ জন্তুরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে সার্কাস দ্যাখে।

এই ঘটনা ফেসবুকে এলে ফেসবুকাররা উৎফুল্ল হয়ে উঠে। একজন শ্রমিক যিনি তার জমিজমা বিক্রি করে দালালদের হাতে সব টাকা গুছিয়ে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর পরিশ্রম ও আরবদের লাথিঝাটা খেয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন তিনি যখন অবসরে ফেসবুকে এসে পাঠ করেন –“ বর্ষবরণ অনুষ্টানে মেয়েদের কাপড় খুলে নেওয়া হয়েছে” তখন বিনোদন লাভ করেন। ইন্টারমিডিয়েট বা ম্যাট্রিক পাশ করে বা স্কুলে থাকাকালীন সময়ে হতে পারে এই শ্রমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বেশী টাকা কামানোর জন্য মধ্যপ্রাচ্যে যাবার। খাজনার চেয়ে হতে পারে বাজনা বেশী বেজে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রতি ইর্ষান্বিত হবার কারণেও অনেক ফেসবুকার সেদিনের ঘটনাতে উৎফুল্ল হয়ে উঠে। যারা সেখানে ছিল তারাও উপভোগ করেছে ঘটনাটা।  কারণ আক্রমণকারীদের চাইতে দর্শকের সংখ্যা বেশী ছিল। দর্শকেরা সংখ্যায় বেশী হলেও নৈতিকভাবে শক্তিশালী ছিলনা । ধর্ষকেরা ও দর্শকেরা সবাই নৈতিকভাবে দুর্বল ছিল। ধর্ষক ও দর্শকের মনের মিলের কারনেই এই ঘটনা ঘটতে পেরেছে।

অতীতে কেউ একাকী পথে হাটতে ভয় পেতো। বলতো – বেলা পড়ে আসছে। পথ ঘাট ফাঁকা। বাইরে কেউ নেই। এখন বাইরে বেড়ুনো ঠিক হবেনা। বিপদ হতে পারে।

এখন হয়েছে উলটো। পথে ঘাটে মানুষ গিজ গিজ করছে। সেখানে সবার সামনে একদল লোক যদি মেয়েদের কাপড় খুলে ফ্যালে তাহলে কেউ কিছু বলবেনা।  মানুষের ভীরে হত্যা ও ধর্ষন দুইটাই সম্ভব। হত্যা ও ধর্ষন করার জন্য এখন আর ফাঁকা রাস্তার দরকার নেই। বাংলাদেশের যেকোন জাগাতেই খুনী ও ধর্ষকেরা স্বাগতম। কেউ বাঁধা দেয়না বরং এই ঘটনার চারিপাশে দাঁড়িয়ে ঘটনা উপভোগ ও বিনোদন লাভ করার চেস্টা করে । সার্কাস দ্যাখে। নিজেরা করতে পারেনা তাই নিজেদের প্রতিনিধিদের বাহবা দেয়।  মানুষের ভিড় হবার অর্থ এই নয় যে এইসব মানুষরূপী আজব জন্তুরা আসলেই মানুষের মত আচার আচরণ করবে। মানুষরুপী আজীব জানোয়ারের ভিড় হবার অনেক কারণ থাকতে পারে। এরা সবাই খাদ্যের অন্বেষণে ঘুরছে। কেউ পেটের ক্ষুধাতে আর কেউবা পেটের নীচের ক্ষুধাতে। এই মানূষরুপী আজীব জন্তুর সমাজে কেউ কারু জীবন নিরাপদ করার কথা চিন্তা করেনা। তেমন কোন কাজ করার কথা তাদের এজেন্ডাতে আপাতত লেখা নাই।

ভিড়ের মধ্য থেকে বাসস্টপ থেকে যেকোন মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেই এলাকাতেই ধর্ষন করতে পারে। এলাকার লোকেরা সবাই জানবে । দেখবে। বুঝবে। উৎফুল্ল হবে। নিজেরা করতে পারেনি তাতে কি? অন্যরা তো করেছে। বেশ ! বেশ! এই সব ধর্ষকেরা সবাই এইসব মানুষের ভীরে মিশে থাকে। সবাই সবাইকে চিনে আবার কেউ কারুকে চিনেনা। সবাই পেট আর পেটের নীচের ক্ষুধা নিবৃত করার জন্য ঘুরে মরে। মানুষে মানুষে গিজ গিজ করছে সাড়া বাংলাদেশ। আজীব মানুষরুপী জন্তু। সবাই পেট আর পেটের নীচের ক্ষুধা নিবৃত করার জন্য ঘুরছে।

কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক এলিট রাজনৈতিক দলের “অবরোধ” কর্মসুচীর আওতায় অতীতের পকেটমারদের দ্বারা গঠিত রাজনৈতিক দলের খুনী বাহিনীদের দ্বারা বেশ কিছু মানুষ হত্যা করা হলো। যখনই এই এলিট রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন মনে জাগে তখনই এই দলের নেত্রী তার দলের দরিদ্র কর্মিদেরকে হত্যা করানোর জন্য কুরবানীর মাঠে নিয়া ছেড়ে দেন। সেক্ষেত্রেও দেখা গেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের গুন্ডা বা পুলিশে বাসায় এসে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে এবং প্রতিবেশীরা ভীর করে তা দেখছে। নারী ধর্ষন ও মানুষ হত্যা বাংলাদেশে একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। যদি অস্বাভাবিক হতো তাহলে সমাজের ভেতরে এইসব ধর্ষক আর খুনীরা এত আরামে বসবাস করতে পারতোনা। যারা ধর্ষন বা হত্যার শিকার হয় তারা দরিদ্র তাই তাদের নিয়া সমাজে কারু মাথাব্যাথা নাই। সবাই ঘুরছে পেট ও পেটের ণীচের ক্ষুধা মেটানোর জন্য। বাংলাদেশে সবাই এলিট পুজা করে। সবাই গ্লামার ভালবাসে। কোটি কোটি মানুষের বাংলাদেশে সবাই চায় মোবাইল, ইন্টারনেট, বলিউড স্টাইলের জীবন, বলিউড স্টাইলে জবাই, বলিউড স্টাইলে ধর্ষণ, আর জামাত শিবির স্টাইলের জানাজা।

প্রতিদিন ধর্ষন হচ্ছে বাংলাদেশে। প্রতিদিন মানুষ হত্যা হচ্ছে বাংলাদেশে। চোর, পকেটমার, খুনী, ধর্ষক, ডাকাত ও দুর্ণীতিবাজ দলের নেত্রী বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য “রথ দেখা ও কলা বেচা” নীতিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর ভেতরে – গনহত্যা, আদম পাচার, ধর্ষন ও হত্যা, ক্রসফায়ার অন্যতম। গনহত্যার মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের মনে “ভীতি স্থাপন” করা সম্ভব হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই “হয় গুম, নাহয় খুন, নাহয় ভুয়া মামলা দিয়া চোদ্দ শিকের পিছে চালান করে দেওয়া হয়” এই পদক্ষেপ খুবই ইভেক্টিভ বা আবেদন সৃষ্টি করেছে জনমনে। এমনিতেই কোটি কোটি গিজে গিজে মানুষ মূলত “আপনে বাচলে বাপের নাম” নীতিতে বিশ্বাসী তারপরে নেত্রীর “ভীতি স্থাপন” কর্মসূচী যেন সোনায় সোহাগা!!। বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো গর্বের সাথে প্রকাশ করছে এইসব ধর্ষনের সংবাদ ও ধর্ষিতার নিথর দেহের ছবি, এইভাবেই এরা এইসব গিজে গিজে মানুষের মনের ক্ষুধা নিবৃত করতে পেরেছে। বাংলাদেশের পুলিশ, গুন্ডা বা র‍্যাবে যখন মানূষ হত্যা করে তখন সাংবাদিকেরা এইসব হত্যার ছবি সগর্বে পত্রিকাতে প্রকাশ করে “জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন” কর্মসূচীর সফলতা ও অগ্রগতি সম্পর্কে গিজ গিজে মানুষদের জানিয়ে দেয়। কেউ হত্যা করে, কেউ হত্যার ছবি প্রকাশ করে – ব্যাপারটা অনেকটা কুরবানীর পশু হত্যার মত – ফেসবুকে দেখা যায় গরুর গলাতে চাকু ধরে অনেকেই স্বগর্বে ছবি পোস্ট করে ঠিক তেমনি “মানুষের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছে পুলিশ” এই মানুষের মৃত্যুর আগে এই দৃশ্যটি ক্যামেরাতে বন্দী করে বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিকই তাদের ব্যক্তিগত জীবনে উন্নয়নের জোয়ার এনেছেন।

মানুষ হত্যা  দেখা যেমন বাংলাদেশের অনেক দ্বিপদ জন্তুর মনে উল্লাস এনে দেয় তেমনি নারী ধর্ষনও অনেকের মনে বিনোদনের খোঁড়াক যোগায়। অনেকেই দেখা যায় “ইসলাম ধর্মের ফাতোয়া “ নিয়া হাজির হয়। কোটি কোটি মানুষ গিজ গিজ করছে সাড়া বাংলাদেশে – এইখানে চোর আছে, প্রতারক আছে, ধর্ষক আছে, খুনী আছে, সব ধরনের দ্বিপদ জানোয়ার আছে – এইসব জন্তুরা নানা ধরনের মুখোশ লাগিয়ে ঘুরছে। অনেকেই ইসলাম ধর্মকে বর্ম বানিয়ে তাদের নিজেদের নোংরা ও কলুষিত মনকে ঢেকে রাখার নোংরা প্রচেস্টা অব্যহত রেখেছে। ইসলাম ধর্মকে এরা কলুষিত করছে। ইসলাম ধর্মের অপপ্রচার করছে। যখন নোংরা মন মানসিকতার জন্তুরা তাদের নিজেদের কলুষিত মনের ঢাকনা হিসাবে “ইসলাম” কে ব্যবহার করে তখন তারা বলে — “পর্দা ধর্ষনকে রোধ করতে পারবে” —- “পর্দা” মানে “চুল বা মুখ ঢাকা নয়” – পর্দা মানে এটেসেটে  মাথার চুল ঢেকে ঠোটে লিপস্টিক লাগায়ে, চোখের পাপড়ির উপরে আই স্যাডো লাগিয়ে, বিশাল বক্ষের উপরে ওড়না লাগায়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করা নয়— ;

পর্দার উদ্দেশ্য হলো – নিজেকে সংযত করা। নিরাপদ করা। নিরাপদ দুরত্ব সৃষ্টি করা। শয়তানের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা।

নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই পর্দা সমানভাবে প্রযোজ্য। “নারীকে রক্ষা করার” দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরুষের উপরে। ধর্ষন করতে বলা হয় নাই। ধর্ষনে উৎফুল্ল হতেও বলা হয় নাই। পশুরা ধর্ষন করেনা। দ্বিপদ জন্তুরা ধর্ষন করে।

১৪০০ বছর আগেও ধর্ষন হইত। বাংলাদেশ এখন ১৪০০ বছর পিছে চলে গেছে।  বাংলাদেশের সকল নারী যদি নিজেদের বোরখার নীচে লুকিয়ে রাখে তাতেও কোন লাভ হবেনা। কারণ ধর্ষকেরা মুক্ত। ধর্ষকেরা দেশের প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত। এরা শুধু নারী ধর্ষনই করছেনা এরা ধর্ষন করছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে, সমাজকে, রাজনীতিকে, সাংস্কৃতিকে।  অপরাধীরা বাইরে নিরীহরা জেলে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘরের ভেতরে ঢুকে ধর্ষন করার ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। সৌদী আরব যেখানে সবাই আপাদ মস্তক বোরখার নীচে ঢেকে রাখে সেখান থেকে ধর্ষিতা না হয়ে ফিরেছে বলে এমন কোন গৃহকর্মীর নাম শোনা যায়নি। সৌদী আরবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার রাস্ট্রদুতের অফিসে “সৌদীদের দ্বারা ধর্ষনের” অভিযোগ আসছে ১৯৮৫ সাল থেকে। এইসব দেশের রাস্ট্রদুতের অফিসগুলো এইসব অভিযোগ গার্বেজে ফেলে দেয়। এর কারণ একটাই – এইসব গৃহকর্মীরা কেউ এলিট না। সৌদীতে কর্মরতা বিশ্বের সকল দেশের গৃহকর্মীরা “পর্দা” মেইনটেইন করেও যেমন নিপীড়ন থেকে রক্ষা পায়নি তেমনি বাংলাদেশের অনেক নারীই তাদের নিজেদের বাসভবনেও নিরপদে থাকতে পারেননি।

নারী ধর্ষন ও গনহত্যা – রোধ করার জন্য দরকার শক্ত আইন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা।
বাংলাদেশে কোন আইন নাই। বাংলাদেশের কোটি কোটি গিজ গিজে মানুষ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট লাগিয়ে হয় ভারত না হয় মার্কিন যুক্তরাস্ট্র এসে তাদের উদ্ধার করবে এই আশায় বসে থাকে। ভারত বা মার্কিন যুক্তরাস্ট্র তাদের যার যার দেশের দ্বিপদ পশু নিয়ন্ত্রন ও নিষ্কাশনে ব্যস্ত আছে। একটু সময় লাগবে। ততক্ষনে বাংলাদেশের কোটি কোটি গিজ গিজে দ্বিপদ জন্তুরা তাদের পেটের ও পেটের নীচে ক্ষুধা নিবৃত করার জন্য দুইটা পথ বেছে নিয়েছে — এক – ধর্ষন ও হত্যাতে অংশ নেওয়া । দুই – ধর্ষন ও হত্যাতে উৎফুল্ল হয়ে নিজেদের পাশবিক মনে শান্তি লাভ করা।

১১ thoughts on “বাংলাদেশ – ধর্ষক ও খুনীদের স্বর্গ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *