ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ৬ জুন বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তিনি ৭ জুন পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবেন। তার এ সফরকালে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয় গুরুত্ব পাবে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন আদায়ে নয়াদিলি্লতে কেন্দ্রীয় সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে উদ্ধৃত করে দ্য হিন্দুস্তান টাইমস এ কথা জানিয়েছে। রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেন। কেননা ভারতের প্রধানমন্ত্রী পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থল শুল্কবন্দর পরিদর্শনে আগ্রহী। এ স্থলবন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ৫০ শতাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। নয়াদিলি্লর পররাষ্ট্র সচিবালয় সাউথ ব্লকের এক কর্মকর্তা বলেন, নরেন্দ্র মোদি যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান। ইসলামী জঙ্গি বা রোহিঙ্গা ইস্যু যেন এ সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ লক্ষ্যে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক, বাণিজ্য ও যোগাযোগ আরও জোরদার করতে আগ্রহী। চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহারের বিষয়েও ভারতের আগ্রহ রয়েছে।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের লক্ষ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তৎপর রয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রস্তাবনা বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি রয়েছে দুই দেশের মধ্যে ৪৬ শতাংশ হারে তিস্তার পানি বণ্টন ফর্মুলা।
এদিকে নয়াদিলি্লতে অবস্থানরত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, এখন দুই দেশের উচিত দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করা। এর মধ্যে রয়েছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এবং উভয় দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ চূড়ান্ত করা।
সার্বিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ঢাকা সফরে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সব ক্ষেত্রে উন্নীত করার লক্ষ্যে ব্যাপক সমঝোতা হতে চলেছে। ঘোষণা হতে পারে নতুন ঋণ সাহায্য। ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নেপাল ও ভুটানে পণ্য রফতানির সুযোগ দেওয়ার ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে। গতকাল এখানে ভারত-বাংলাদেশ ষষ্ঠ পর্যায়ের ট্র্যাক-টু আলোচনার দ্বিতীয় দিনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর এমনই এক রূপরেখা তুলে ধরেন। এ আলোচনাচক্রে উপস্থিত ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজুজু ঘোষণা করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির ঢাকা সফরের সময় ভিসা সরলীকরণ ও সীমান্ত বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
দিলি্লর হ্যাবিটেট সেন্টারের আলোচনায় যোগ দিতে গতকাল সকালেই মিয়ানমারের নেপিদো থেকে পররাষ্ট্র সচিব আসেন। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। এসবসহ তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়েও আলোচনা চলছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে নয়াদিলি্লর অপর এক সরকারি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি ৫ জুন সন্ধ্যায় ঢাকা পেঁৗছবেন। ৭ জুন ফিরে আসবেন।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয়। সমৃদ্ধিশালী ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ ভারতের কাম্য। দক্ষিণ এশিয়ায় যোগাযোগ বৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ। সম্পর্কের মূল ভিত্তি নিরাপত্তা ও সীমান্ত সহযোগিতাসহ আর্থিক ও বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং দুই দেশের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি। তিনি বলেন, যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রধান মাধ্যম হবে রেল-সড়ক-বন্দর-উপকূলীয় নৌপরিবহন। ১৯৭২ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে নৌ প্রটোকল রয়েছে। আটটি নদীপথে বর্তমানে পণ্য পরিবহন হয়। এবার আমরা উপকূলীয় নৌপরিবহন চুক্তি করতে চেয়েছি। যাতে পণ্য পরিবহন সহজ হয় এবং সড়কের ওপর চাপ কমে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে বাণিজ্যিক ঘাটতি রয়েছে তা কমানোর জন্য তিনি কয়েকটি প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত পণ্য রফতানির যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাতে ভারতের উত্তর-পূর্বের বাজারে সে দেশের পণ্য প্রবেশের সুযোগ রয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে সড়কপথে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য মোট ৫০টি স্থল শুল্কবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। তার মধ্যে ৩টি পর্যায়ে আধুনিক উন্নতমানের চেকপোস্ট তৈরি করা হচ্ছে। পেট্রাপোল, উত্তরবঙ্গে হিলি ও মেঘালয়ে উন্নতমানের চেকপোস্ট তৈরি হবে। মেঘলায় ও ত্রিপুরায় ৭টি বর্ডার হাট তৈরি হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অতিরিক্তি পাঁচশ’ মেগাওয়াট এবং পালাটানা থেকে একশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যে নির্মীয়মাণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উত্তরে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন নির্মিত হবে। এ গ্রিড থেকে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সংগ্রহ করতে পারবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহের জন্য শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত পাইপলাইন বসানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা হবে প্রধানমন্ত্রীর সফরে। বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল সড়ক যোগাযোগের লক্ষ্যে ফুলবাড়ী-বাংলাবান্ধায় উন্নত স্থলবন্দর চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত।
Hossain Masum liked this on Facebook.
Jashim Uddin liked this on Facebook.
Khairuz Zaman Choudhury liked this on Facebook.
MD Ziaul Hasan liked this on Facebook.
Jahangir Kabir liked this on Facebook.
Shihab Shovon liked this on Facebook.
Mohammad Kofil liked this on Facebook.
Singer Boy Tanvir liked this on Facebook.
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.