বিএনপির পুনর্গঠন কাজ জোরদার, নিষ্ক্রিয়রা আতঙ্কে!

ঢাকা: আন্দোলন থামিয়ে সংগঠন গোছানোর কাজে মনযোগ দেয়ায় বিএনপিতে নিষ্ক্রিয়রা নেতারা পদ হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন।সবাই এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তিন তিন বার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা এই দলটিও বুঝতে পেরেছে, দলকে শক্তিশালী না করে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার কোনো সুযোগ নেই। যা গত তিন মাসের টানা আন্দোলনেও তা প্রমাণ হয়েছে।

 
বিষয়টি বুঝতে পেরেই সিটি নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দল পূনর্গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

 

বলেছেন, ইতোমধ্যেই আমি দল গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছি। ত্যাগী নেতাদেরকে কাজে লাগানো হবে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও আন্দোলনে ছিলেন না-এমন নেতাদের ব্যাপারে আসতে যাচ্ছে কঠিন সিদ্ধান্ত। দলের বিভিন্ন সূত্রের এমন খবরে নিষ্ক্রিয় নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের দমন পীড়নের পরও যেসব নেতা মাঠে ছিলেন তারা পূনর্গঠনে মূল্যায়িত হবেন। আর যারা পদ পদবী নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তারা বঞ্চিত হবেন।

 

যারা আন্দোলনে ছিলেন তাদেরকে মূল্যায়ণ করা হবে-দলের চেয়ারপারসনের এমন ঘোষণার পর আত্মগোপনে থাকা নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কারণ এবার সাংগঠনিক পুনর্গঠন কাজের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া কারো সুপারিশ আমলে নিবেন না বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।

 

২০০৮ সালে নির্বাচনের পর পরই দল নিয়ে কাজে হাত দেয় বিএনপি। এরপরের বছর অনুষ্ঠিত হয় দলের জাতীয় কাউন্সিল। এর আগে সকল সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। বেশিরভাগ কমিটি এখনো ওই অবস্থায়ই আছে। পরবর্তিতে কয়েকদফা চেষ্টা করেও দলটি জাতীয় কাউন্সিল করতে পারেনি। তবে এতোদিন না পারলেও এবার দল গুছিয়ে নতুন করে আন্দোলনে নামতে চান বিএনপি প্রধান। আর এক্ষেত্রে দলের সেকেন্ডম্যান অর্থাৎ তারেক রহমানেরও সম্মতি আছে বলে জানা গেছে।

 

দলীয় সূ্ত্রে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও বিএনপির সাংগঠনিক পূর্নগঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আন্দোলনে যে কোনোভাবে সক্রিয় ছিলেন এমন নেতাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

 

পাশাপাশি দলের বাইরেও বিভিন্ন পেশাজীবীদেরকেও দলে অন্তর্ভূক্তির চিন্তা করা হচ্ছে।

 

বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, দল পুর্নগঠনে এবার তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন নেতারা স্থান পাবেন। এছাড়া নানা প্রতিবন্ধকতার পরও যারা আন্দোলনে মাঠে ছিলেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। পাশাপাশি তরুন, মেধাবী ও যোগ্যদের দেয়া হবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

 

বিশেষ করে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেরই জায়গা হতে পারে এমন ধারণা করা হচ্ছে। আর স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষ পদগুলোতে বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে শোনা যাচ্ছে।

 

সেক্ষেত্রে জেল জুলম সহ্য করে যেসব মধ্যম সারির নেতা দলের জন্য কাজ করেছেন তাদের ভাগ্য খুলে যেতে পারে। শোনা যাচ্ছে, স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষ পদের যেসব  নেতা বার্ধক্যে পৌঁছেছেন তাদের কাউকে কাউকে সাইড লাইনে রাখা হতে পারে।

 

এদিকে সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক ও সহ-দপ্তরে দুজন যুবদল নেতাকে স্থান দেয়ায় তরুন নেতাদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার ‍সৃষ্টি হয়েছে। অনেককে ঘনঘন চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে হাজিরা দিতেও দেখা যাচ্ছে।

 

ছাত্রদলের একজন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অবস্থান অনুযায়ি দলের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সামনের দিনে দল কোনো দায়িত্ব দিলে তা পালনের সাধ্যমত চেষ্টা করবো। কিন্তু আবারো দালালদের হাতে দায়িত্ব গেলে কোনো পরিবর্তন আসবে না।”

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে: জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, “দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। শিগগিরই বড় পরিসরে দেখতে পাবেন।”

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যারা হামলা, মামলা উপেক্ষা করে দলের পাশে ছিলেন তাদের অবশ্যই মূল্যায়ণ করা হবে। চ্যালেঞ্জ নিতে পারে এমন নেতাদের হাতে দায়িত্ব দেয়া হবে। আর পুরো বিষয়টি পর‌্যবেক্ষণ করবেন চেয়ারপারসন।”

১৪ thoughts on “বিএনপির পুনর্গঠন কাজ জোরদার, নিষ্ক্রিয়রা আতঙ্কে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *