দরকার সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্ব আদর্শ ও লক্ষ্যে উদ্ভুদ্ধ নেতাকর্মী সাংগঠনিক শক্তি

নাসিমুল গনি খান:১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংক্ষেপে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন । শহীদ জিয়ার এই দলে বাম, ডান, মধ্যপন্থি সকল প্রকার লোক ছিলেন। বিএনপির সব থেকে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর নিয়োগ পদ্ধতি। প্রায় ৪৫% সদস্য শুধুমাত্র রাজনীতিতে নতুন ছিলেন তাই নয় তারা ছিলেন তরুণ। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পরপরই জিয়া দলের কর্মীদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ নেন, যার মাধ্যমে দলের কর্মীদের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, দলের আদর্শ, সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হত।

অথচ আজকের বিএনপির দিকে একটু লক্ষ্য করে দেখি কি অবস্থা এই দলের ——

দীর্ঘদিন যাবত্ যে সকল ত্যাগী নেতৃবৃন্দ রাজপথে থেকে দলের বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছেন বিএনপি’র বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে তাদের কোন স্থান হয়নি। বরং যারা নেতাদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তোষামোদের রাজনীতি করছেন জাতীয় নির্বাহী, জেলা এবং মহানগর কমিটিতে তাদের স্থান হয়েছে। যার প্রভাবও পড়েছে বর্তমান আন্দোলন সংগ্রামে।

লবিং ও অর্থ দিয়ে মনোনয়ন ক্রয় করে যে ব্যক্তি, সেই ব্যক্তি দলের আন্দোলন-সংগ্রমে ঝুঁকি নেবে কেন? এই ব্যাপারে চেয়ারপার্সন এর কঠিন মনোভাব প্রকাশ করতে হবে যে, যারা রাজপথে আন্দোলনে থাকবে শুধুমাত্র তাদেরকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

বিগত দিনে ও বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে বিএনপির যেসব নেতাকর্মীর নামে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা হয়েছে, চেয়ারপারসনের নির্দেশ অমান্য করে দলীয় আইনজীবীরা চেয়ারপারসনকে দেখানোর জন্য শুধু ভিআইপি নেতাদের মামলাগুলো পরিচালনা করছেন। অধিক অর্থ ছাড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনা করছেন না।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে উপযুক্ত দলীয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও বহিরাগত প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদান করাও বিএনপির মূল নেতৃত্বের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এসব প্রার্থীকে স্থানীয় ভোটাররা মেনে নেয়নি। বর্তমানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার স্থানীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় তারা রাজপথে তেমন ভূমিকা রাখছে না।

ঢাকা পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুরের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহাম্মেদ ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সভাপতি নবীউল্লাহ নবীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। যতদিন তারা সম্মিলিতভাবে ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় মাঠে না থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল হবে না। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দলের স্বার্থে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে।

ঢাকা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও বিভিন্ন থানা কমিটি না থাকাও ঢাকা শহরে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। তাই অনতিলম্বে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিনে ভাগ করে ঢাকার স্থায়ী ত্যাগী নেতাকর্মী দিয়ে পুনাংগ কমিটি করে, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট গুলির পুর্নাঙ্গ কমিটি প্রয়োজনে কাউন্সিলের মাধ্যমে ত্যাগী যোগ্য তৃনমুলদের দিয়ে খুব দ্রুত করতে হবে ।

বিগত দিনে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সারা দেশে মহানগর ও থানা পর্যায়ে আন্দোলনে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলে মনোবল বাড়িয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করতেন, বর্তমানে সে ধারাবাহিকতা বজায় নেই । তৃনমুলের কাছে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেন সোনার হরিণ । আর এই অস্পষ্ট বলয় সৃষ্টি করেছে তার এএসফ গার্ড ও আশেপাশে থাকা কিছু দালাল চক্র ।

আসলে এইসব নিয়ে চিন্তা ভাবনারও কেউ নাই বিএনপিতে। বিশাল এই রাজনৈতিক দলে ৫ জন সুযোগ্য ও সৎ নেতা নাই ( অবাক করা কথা) যারা দলকে ঘুছিয়ে নিয়ে যাবে রাজনীতির ময়দানে। কারন রাজনীতি খেলতে হয় রাজনীতি মাধ্যমে,,,,খুনি হাসিনা ফজরের নামাজ পড়েই রাজনীতি শুরু করেন,,, আর বিএনপির রাজনিতি শুরু হয় রাত ১০টায়,,, যখন সারা বাংলাদেশের বেশীভাগ মানুষ ঘুমিয়ে থাকে,,,,

স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সুবিধাবাদী নেতাদের বাদ দিয়ে সক্রিয় নেতা কর্মীদের দিয়ে রাজনীতির মাঠ তৈরী করতে হবে । টাকার বিনিময়ে কমিটি বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে, ব্যার্থ নেতাদের শাস্তি আওতায় আনতে হবে । মনে রাখতে হবে পোড় খাওয়া নেতাদের তৃনমুল কর্মিদের মূল্যায়ন না করলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না।

গুলশান অফিস থেকে চেয়ারপার্সনকে বেরিয়ে আসতে হবে । পল্টন অফিসে চেয়ারপার্সনকে বসতে হবে এবং অনেক দূর থেকে আসা তৃণমুল নেতাকমীদের অভিযোগ গুলো শুনতে হবে ।

মুলদলের সাথে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর ব্যাপক রদবদল করতে হবে । সেক্ষেত্রে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, জাসাস, ওলামা দল, তাঁতি দল ও মৎস্যজীবী দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে তরুন ও যোগ্যদের ।

প্রতিটি কমিটি মেয়াদ শেষে নির্বাচন দিয়ে করতে হবে। সিলেকশন কিছুতেই গ্রহনযোগ্য নয়। যেসব কর্মী দলের দুর্দিনে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছেন, দলীয় হাইকমান্ড তাদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

তৃনমূল কর্মীদের ডাটা তৈরি করতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামের কারনে যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের পরিবারকে অর্থনৈতিক সাহায্য করতে হবে। দল ক্ষমতায় গেলে তাদের পরিবারের কর্মক্ষমকে চাকুরির ব্যাবস্থা করার ওয়াদা দিতে হবে।

মামলা হামলা মোকাবেলা করার জন্য দলের ভেতর গড়ে তুলতে হবে আইনজীবীদের ফোরাম। মামলা খরচ দেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে ।

দলের কার্যক্রম মনিটরের জন্য কেবল মাত্র পরিশ্রমী আর সৎ কর্মীদের দিয়ে সিক্রেট অডিট টিম নিয়োগ করতে হবে। অনলাইনে শক্তিশালী মিডিয়া করতে হবে। প্রয়োজনে যারা খুব ভালো লিখে তাদের কে স্বীকৃতি দিতে হবে।

সময় এসেছে এসব নিয়ে ভাবার। যারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ কে ভালোবাসেন এবং জিয়ার আদর্শকে বুকে ধারন করেন তাদের এগিয়ে আসা উচিৎ.। পরামর্শ সাহায্য অথবা কর্মী হিসেবে দলটির সংগে নিজেকে আরো সম্পৃক্ত করুন।

পরিশেষে এইটাই বলতে চাই বিএনপি জনসমর্থনে ধন্য হয়ে এদেশের দায়িত্ব আসবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে “.। অনেকের অমত থাকতে পারে কিন্তু এটাই এদেশের বাস্তবতা……।।

লেখক – রাজনীতিবিধ ও ব্লগার

জিখান/প্রবাসনিউজ২৪.কম

One thought on “দরকার সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্ব আদর্শ ও লক্ষ্যে উদ্ভুদ্ধ নেতাকর্মী সাংগঠনিক শক্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *