গৃহকর্মী হিসাবে সৌদী আরবে যাবার আগে যা জানা দরকার

২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা হলো ১৬০,৪১১,২৪৯।বিশ্বের ৮ম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.১৯% মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করে। মোট জনসংখ্যার ভেতরে ১২০,৩০৮,৪৬৭ মানুষ গ্রামে বা শহরের বিভিন্ন বস্তিতে বাস করেন। মোট জনসংখ্যার ২৬% অর্থাৎ ৪১,৭০৬,৯৩৫ জন মানুষ দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে।

যারা দরিদ্রসীমার নীচে বাস করে তারা খুব সহজেই বিভিন্ন ধান্দাবাজ, দালাল, অপরাধীদের খপ্পড়ে বা ফাঁদে পা দিয়ে জীবন হারান বা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। এইসব ক্ষতির ভেতর অন্যতম হলো গার্মেন্ট শ্রমিক হিসাবে স্বল্প মূল্যে শ্রম বিক্রি করা, গৃহকর্মী হিসাবে স্বল্প মূল্যে শ্রম বিক্রি করা, মাদকদ্রব্য চালানের কাজে জড়িত হওয়া, যৌনকর্মী হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করা, গৃহকর্মী হিসাবে বা যৌনকর্মী হিসাবে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া।

যারা দরিদ্রসীমার নীচে বাস করেন তারা কেউ ফেসবুকে আসেন না। তারা কেউ অনলাইন পত্রিকা পাঠ করেন না। তারা আমার লেখা পড়বেন না আমি জানি। তবু লিখছি। কেনো লিখছি আমি জানিনা। বাংলাদেশের ২৬% মানুষ দরিদ্রসীমার নীচে বাস করার মূল কারণ হলো জনগনের মৌলিক অধিকার সংরক্ষন করার জন্য বাংলাদেশের জনগন একতাবদ্ধভাবে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধই ছিল বাংলাদেশের প্রথম ও শেষ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম। এই মুক্তিযুদ্ধ ব্যর্থ হয় এবং যারা ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে তাদের হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন হয় কিন্তু দেশের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রন এক বিদেশ থেকে অন্য বিদেশে চলে যায়। এর পরে ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা ও ক্ষমতা দখলের জন্য সুবিধাবাদী মহল জনগনকে বিচ্ছিন্ন করতে থাকে, বিভ্রান্ত করতে থাকে, জনগন একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে, আর প্রতিদিন লাশ ফ্যালে। মাঠের মাঝে মফস্মলের কিশোরীর ধর্ষিতা লাশ পাওয়া যায়। অন্য এক কিশোরীকে ধর্ষন করে বেল গাছে ঝুলিয়ে দেয়।শিক্ষিকাকে ধর্ষনের পরে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। ভাত খাবার জন্য অনেকেই দেহ বিক্রি করে। ধর্ষন – বাংলাদেশের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ধর্ষন বা নারী নির্যাতন বা নারী লাঞ্ছনা করলে ধর্ষক বা নিপীড়কের শাস্তি হয়না । প্রশ্নই উঠেনা। বাংলাদেশের আইন সব সময় অপরাধীর পক্ষ নেয়। অপরাধীর শাস্তি তো হয়ইনা বরং নারীদের উপরে যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করতে গেলে সাড়া শহরের সকল টিভি ক্যামেরার সামনে নারীদের চুলের মুঠি ধরে পুলিশে লাথি মারে। হিজাব পরিহিতা মহিলাকে পুলিশে হয়রানী করে। ঘরের ভেতরে মহিলাদের ইসলামী সভাতে পুলিশে হামলা করে সব মহিলাদের বাচ্চাকাচ্চাসহ গ্রেফতার করে নিয়া যায়। গৃহকর্মীকে ধর্ষন, নির্যাতন ও হত্যা বাংলাদেশে অন্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। পুলিশের কাজ জনসেবা করা কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশ জনগনের উপরে নির্যাতন করে, নিপীড়ন করে, ভুয়া মামলাতে জনগনকে জেলে ভরে ব্ল্যাকমেইল করে পরিবারের থেকে টাকা আদায় করে। বাংলাদেশে কোন মহিলা নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল যারা নাকি স্বনির্বাচিত সরকার তাদের লোকেরা যেকোন মানুষের বাসাতে ঢুকে তাদের বাসা থেকে বের করে দিতে পারে। মহিলাকে থানায় নিয়ে যেয়ে ধর্ষন করতে পারে। যেকোন বাসাতে ঢুকে পুলিশ যেকোন মানুষকে গুলি করে হত্যা করতে পারে।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবস্থা আরো করুন। প্রতি বছর ওদের হয় আগুনে পুড়িয়ে বা বিল্ডিং চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। এহেন অবস্থায় দালালেরা খুব সহজেই বাংলাদেশে মহিলাদের বিদেশে চাকুরীর লোভ দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বা ভারতে বা পাকিস্তানে পাচার করতে পারে।

রাশিয়ার কমিউনিজম ভাংগার পরে রাশিয়ার জনগন খুব দ্রুত চারটি শ্রেনীতে বিভক্ত হয়। এর মধ্য যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত তারা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন জাগাতে চাকুরীর নামে পাচার হয়ে যায়। অনেক মেয়েকেই দালালেরা নজর বন্দী করে রাখে। দুবাইয়ের বিভিন্ন স্ট্রিপবারে এরা উলঙ্গ নৃত্য করে। দুবাইয়ে আরব পুঁজিপতিদের ভোগের জন্য রাশিয়া থেকে পাচারকৃত মেয়েরা ব্যবহৃত হয়। রাশিয়ার এই মেয়েদের অবস্থা ফিলিপিনস থেকে আসা বা ওমান থেকে আসা গৃহকর্মীদের থেকে পৃথক নয়।

ভিয়েতনামের একজন গৃহকর্মী ফ্রিজের ভেতরে ঢুকে আত্মহত্যা করে।
http://www.emirates247.com/news/maid-found-dead-inside-fridge-in-saudi-2014-07-31-1.558088

ইন্দোনেশিয়ার একজন নাগরিক যিনি সৌদী আরবে গৃহকর্মীকে হিসাবে কাজ করছিলেন তাকে হত্যা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়।
13

https://now.mmedia.me/lb/en/blogs/522824-maid-in-saudi-arabia
1 ইথিওপিয়ান নাগরিক গৃহকর্মী হিসাবে রিয়াদে নিয়োজিত ছিলেন তাঁকে পা উপরে বেঁধে পিঠে বেত্রাঘাত করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে যারা গৃহকর্মী হিসাবে নিয়োজিত থাকেন তারা কোন কারণে ছুটি পাননা । মালিকের হুকুম পালন না করলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হয়। এইসব শাস্তির ভেতরে আছে ধর্ষন, বেত্রাঘাত, চামড়া ছিলে বেত্রাঘাত বা পা সিলিং এ বেঁধে বেত্রাঘাত বা গলা কেটে ফেলা।

https://themuslimissue.wordpress.com/2012/08/09/filipino-migrant-die-from-brutal-attack-and-rape-in-the-middle-east-body-never-found/
2 আবুধাবী এমবেসীতে একজন গৃহকর্মী একটি খামের ভেতরে ফোনে ভিডিও টেপ করা এই নির্মম ঘটনা রেখে যায়।

http://www.ibtimes.co.uk/saudi-arabia-filipino-maid-disfigured-boiling-water-not-bringing-coffee-time-1449319
4 সময় মত কফি না আনার জন্য গরম পানি দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয় এই ফিলিপিনো নাগরিক গৃহকর্মীকে।

http://www.migrant-rights.org/2010/11/indonesian-maid-tortured-in-saudi-arabia-another-beaten-to-death/

 

8

ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক গৃহকর্মী হিসাবে মদিনাতে আসেন জুলাই মাসে। নভেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি হয় শরীরের নানা জাগাতে পোড়া জখম নিয়ে । এই গৃহকর্মীকে নির্যাতন করা হচ্ছিল কাজ শুরু করার দিন থেকে। এই নির্যাতনে জড়িত ছিল পরিবারের তিন জন।

নিপীড়িত ইন্দোনেশিয়ান গৃহকর্মী তার মালিককে হত্যা করার ফলে তাঁকে জবাই করে শাস্তি দেওয়া হয়। যারা গৃহকর্মীদের উপরে নির্যাতন করে তাদের কোন শাস্তি নাই।

Saudi Arabia: Abused Indonesian maid kills employer in self-defense – gets beheaded

ইথিওপিয়ান গৃহকর্মীকে পুলিশ উদ্ধার করে তার মালিকের কাছ থেকে
11
http://mereja.com/forum/viewtopic.php?f=2&t=78944

 

ইথিওপিয়ান নাগরিক গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন সৌদী আরবে। নির্যাতন্ সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যা করে।
12

যারা এই সব ছবি দেখছেন তারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন সৌদী আরবে বা মধ্যপ্রাচ্যের কোথাও গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করতে যাওয়া নিরাপদ নয়। বাংলাদেশও নিরাপদ নয়। তবে যদি হিংস্র পশুর হাতে মৃত্যুবরন করতে হয় তাহলে এত কস্ট করে এত আশা নিয়ে সৌদী আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেয়ে নির্যাতিত হয়ে মরার কোন দরকার আছে বলে মনে করিনা। না খেয়ে মরা অনেক কস্টের। নির্যাতিত হয়ে মরা আরো কস্টের। বিল্ডিং এর নীচে চাপা পড়ে মরা অনেক অনেক কস্টের। দেশী পশুদের খাদ্য হয়ে মরলেও কোন লাভ নেই। তবে আশা ভঙ্গের বেদনা থাকেনা। আমরা সবাই একদিন মরে যাবো কিন্তু আমরা কি চাইব যে কেউ আমাদের উপরে গরম পানি ঢেলে আমাদের চামড়া ছিলে বেত্রাঘাত করুক বা সিলিঙ্গে পা বেঁধে বেত্রাঘাত করুক? বাংলাদেশেও সৌদী আরবের মত অনেক হিংস্র পশু আছে যারা গৃহকর্মীদের উপরে নির্যাতন করে। সাড়া বাংলাদেশে অনেক হিংস্র পশু আছে। তবে পাশবিকতার শিকার হবার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে যাবার আগে এই ছবিগুলো যদি দেখানো যেতো তাহলে হয়তো সিদ্ধান্ত নেবার আগে শ্রমিকেরা ভেবে দেখতেন। যারা এই লেখা পড়ছেন যদি সম্ভব হয় এই খবর পৌছে দিন তাদের কাছে  যারা কোনদিন এই খবরগুলো পড়বেনা এই ঘটনাগুলো জানবেনা আর না জেনেই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হিসাবে একই দুর্ঘটনার শিকার হবে। ৪০ বছর আগে শেখ মুজিবের আইন বিষয়ক উপদেস্টা ডঃ কামাল হোসেনের পরিবারের একজন সদস্যা একজন গৃহকর্মীকে নির্যাতন করে হত্যা করে। সৌদী আরবে গৃহকর্মী হত্যার ঘটনাগুলোর মত এই ঘটনাও কেউ জানেনা।

সৌদী আরব মুসলমানদের জন্য পবিত্র জাগা। এই পবিত্র জাগাতে এইসব অপবিত্র কর্মকান্ড চলছে অবিরত। সেকারনেই আল্লাহ্‌ এই এলাকাতেই যুগে যুগে নবী প্রেরণ করেন। মানুষকে সুদ্ধ করার জন্য। আল্লাহ্‌ শয়তানকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। পবিত্র জাগাতে যে সবাই পবিত্র মানুষ সেটা ভাবা উচিৎ নয়। শয়তান সব খানেই আছে। তবে সৌদী আরবে শয়তানদের চাষ করা হয়। সৌদী নাগরিক যদি বিদেশী দরিদ্র কারু উপরে জুলুম করে তাহলে সে কোন রকমের শাস্তি ভোগ করেনা। বিত্তহীন মানুষেরা এই শয়তানের খপ্পড়ে পড়ে নির্যাতিত হয়ে জীবন হারাচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাস্ট্র থেকে বা যুক্তরাজ্য থেকে বা কানাডা থেকে কেউ সৌদী আরবের গৃহকর্মী হিসাবে কাজে যোগ দেননা। যদি দিতেন আর যদি এভাবে মৃত্যুবরণ করতেন তাহলে সৌদী বাদশাদের বাসার উপরে বোমা ফেলা হতো। কোন ইহুদী নারীকে এইভাবে নির্যাতন করার সাহস হবেনা সৌদী পশুদের।

বাংলাদেশ যেহেতু এতিম দেশ – অর্থাৎ বাংলাদেশের কোন মাবাপ নাই – অর্থাৎ বাংলাদেশে যারা স্বঘোষিত সরকার তারা ভারতের দালাল। তাই বাংলাদেশীদের বৈদেশিক মুদ্রাই এই সরকারের দরকার। বৈদেশিক মুদ্রা কিভাবে অর্জিত হচ্ছে সেটা এই সরকারের দেখার বিষয় নয়। এই সরকারের নিয়োগ হয়েছে ভারতের সেবার জন্য । সরকার মন প্রান লাগিয়ে ভারতের সেবাতে নিয়োজিত আছে। এই সরকারকে জনগন নির্বাচিত করেনি তাই জনগণের সেবা করার দায় দায়িত্ব এই সরকারের নয় ।

জনগনকে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে। যেমন বাংলাদেশের দরিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষদের নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার কথা নিজেদের চিন্তা করতে হবে। অন্যান্য মানুষ যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে নানাভাবে লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে এসেছেন তাদের সাথেও কথা বলে দেখতে পারেন এবং অভিজ্ঞতা আদান প্রদানের মাধ্যমে সাবধান হতে পারেন।

763

২২ thoughts on “গৃহকর্মী হিসাবে সৌদী আরবে যাবার আগে যা জানা দরকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *