সব অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পাকিস্তান পৌঁছেছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল। ২০০৯ সালে শ্রীলংকার খেলোয়াড়দের বহনকারী বাসে জঙ্গি হামলার ছয় বছর পর এই প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশ পাকিস্তান সফরে গেল।
মঙ্গলবার ভোররাতে লাহোরের আল্লামা ইকবাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল। সেখানে তাদেরকে স্বাগত জানান পাঞ্জাবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুজা খানজাদা ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কর্মকর্তা জাকির খান। এরপর সেখান থেকে কড়া নিরাপত্তায় লাহোরের এক হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় জিম্বাবুয়ে দলকে।
আগামী শুক্রবার শুরু হচ্ছে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তান-সিরিজ। এ সিরিজের জন্য কোনো আম্পায়ার পাঠাবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে আইসিসি। ফলে পাকিস্তানের স্থানীয় আম্পায়ার দিয়েই সিরিজ পরিচালনা করতে হবে পিসিবিকে।
সফরে পাকিস্তানের সঙ্গে দুটি টি-টোয়েন্টি ও ৩টি ওয়ানডে খেলবে জিম্বাবুয়ে। পুরো সিরিজেই নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা থাকবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম এলাকা। হোটেল থেকে মাঠে আসা-যাওয়ার পথে নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা পাহারা দিবেন। পাশাপাশি হেলিকপ্টার নিয়ে থাকবে সেনাবাহিনীও। পুরো সফরে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের জন্য পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ৬ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
কড়া নিরাপত্তায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে হোটেলে নিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী- এএফপি
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবারের সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের মাটিতে ‘অভিষেক’ হবে পাকিস্তানের উমর আকমল, আজহার আলী ও আসাদ শফিকের মতো কয়েকজন ক্রিকেটারের। পঞ্চাশের অধিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলা এসব ক্রিকেটারের জন্য প্রথমবারের মতো নিজ দেশে খেলার বিষয়টি কম আবেগের নয়।
মাত্র তিন দিন পর সিরিজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত টিকিট বিক্রিই শুরু করেনি পিসিবি। সফর নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এমনটি হলেও দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছ থেকে ভাল সাড়া পাবে বলেই পিসিবির ধারণা।
২০০৯ সালের মার্চে পাকিস্তানে শ্রীলংকা ক্রিকেট দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ছয় পুলিশসহ আটজন নিহত এবং শ্রীলংকার সাত খেলোয়াড় আহত হন। এরপর থেকেই স্বাগতিক হিসেবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে খেলা বন্ধ ছিল পাকিস্তানের। নিরুপায় হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘স্বাগতিক’ হিসেবে খেলতে হচ্ছে পাকিস্তানকে।
পিসিবির হিসাবমতে ছয় বছরে আমিরাতে হওয়া বিভিন্ন সিরিজের টিভিসত্ত্বসহ অন্যান্য বিষয়ে ১২ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তাদের। আর জিম্বাবুয়েকে দেশে আনতে পিসিবির খরচ হয়েছে ১০ লাখ ডলারের বেশি। এ খরচের বেশিরভাগই স্পন্সর ও অন্যান্য খাত থেকে তুলে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছে না পিসিবি।
তবে এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সময় আপাতত নেই পিসিবি কর্তাদের। নির্বিঘ্নে জিম্বাবুয়ে সিরিজ সমাপ্তির উপরই সর্বোচ্চ নজর তাদের। আর তা করতে পারলে পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নির্বাসনকাল ঘুচানোর আবেদন করতে পারবে বলেও আশা করছে পিসিবি।
সিরিজ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা মহড়া- দ্যা ডন অনলাইন
সিরিজ আয়োজনে তাদের ‘পূর্ণমাত্রার’ নিরাপত্তা রয়েছে বলে দাবি করেছে পিসিবি। তবে সফরকালে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের নিরাপত্তাগত কড়াকড়ি মেনে চলতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সদস্য ছাড়া খেলোয়াড়েরা হোটেলের বাইরে যেতে পারবেন না। এমনকি তাদের চলাফেরা গাদ্দাফি স্টেডিয়াম এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পিসিবি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পূনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এটি আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। সফরটিকে নিরাপদ ও সফল করতে আমরা কোনো কিছুরই কমতি করব না।’ সূত্র: এএপপি, দ্য ডন অনলাইন ও বিবিসি
Monir Khan liked this on Facebook.
Mohammad Kofil liked this on Facebook.
Mohammad Jahangir Alam Khan liked this on Facebook.