প্রথমবারে মতো বিদেশে গেল সাতক্ষীরার আম

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার মানুষ বহুকাল ধরেই আম চাষে জড়িত। দেশের জন্য আম একটি মৌসুমি ফল হলেও সাতক্ষীরা জেলা এটি প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ খাতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়। গাছের পরিচর্যা থেকে আম কেনাবেচা পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে এ অঞ্চলে।

 

এদিকে গাছে গাছে আমের সমারোহে আমবাগান হাতবদল হতে শুরু করেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আমের ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলায় বাগান কিনেছেন।

 

সাতক্ষীরায় এবার আমের ফলন সন্তোষজনক। ইতোমধ্যেই জেলার আম গাছগুলোতে নানা জাতের বাহারি আমে এখন সয়লাব। অনুকূল আবহাওয়া পরিবেশ ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী পোকাদমনে সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করে সাতক্ষীরার চাষিরা ফলিয়েছে বিষ মুক্ত আম। আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বাঁধছিলেন আমবাগান মালিকরা। এরই মধ্যে গাছে গাছে আমের সমারোহে মৌ মৌ গন্ধে সোনালি-হলুদের মিশ্রণে অপরূপে সেজে আম পাকতে শুরু করেছে সাতক্ষীরা জেলার আমের বাগান।

 

জেলাজুড়ে গাছে গাছে এখন ভরপুর হয়েগেছে সু-স্বাধু বাহারি জাতের সব আম। বিষ ও কীটনাশক মুক্ত এমনকি ফরমালিনমুক্ত আম জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যান্তরে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার পর এবছর সাতক্ষীরার মিষ্টি বিষমুক্ত আম যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বাজারে।

 

যে সাতটি নাম নিয়ে সাতক্ষীরার নামকরণ আম এর অন্যতম। চিংড়ি পাশাপাশি হিমসাগর ও ন্যাড়া আমের রাজধানী বলা হয় সাতক্ষীরা জেলাকে। পারিবারিকভাবে ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে জেলাব্যাপী আমের চাষ হয়েছে এবারও প্রচুর। সাতক্ষীরা সদর, তালা, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও কলারোয়ায় আমের চাষ বেশি। সার্বিক বিষয়ে তদারকি করে জেলা কৃষি অফিস জেলায় এবার  ৩৬২০ হেক্টর জমিতে প্রতি হেক্টরে সাড়ে ১৩ মেট্রিক টন হিসেবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

 

সাতক্ষীরার মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত বাহারি আম হিমসাগর, গোপালভোগ, নেংড়া, গোবিন্দভোগ, কিষানভোগ, গোলাপখাস,শরিফখাস,রানী পছন্দ, লতা, বোম্বাই, রূপালি, মল্লিকা, কালাপাহাড়, আম্রপালি ও কাঁচামিঠা আমের কোনোটিরই কদর কম নয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে।

 

সাতক্ষীরার বাজারে এখন আমের প্রাচুর্য। দেশের বিভিন্ন অনঞ্চলে সাতক্ষীরার আমের  চাহিদা থাকায় শুধু সাতক্ষীরার সুলতানপুর বাজার থেকেই প্রতিদিন ১৫ ট্রাক ভর্তি আম যাচ্ছে দেশের সে সব অনঞ্চলে। সব বাগানেই এখন আমপাড়ার ধুম পড়েছে।

 

সাতক্ষীরার যে সব আমচাষি কোনো ধরনের স্প্রে ছাড়া বিষমুক্ত আমের বাগান করেছেন এবং সে আমের গুণগতমান ভালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় ইতিমধ্যে জেলার ২০ আমচাষির বাগান থেকে যুক্তরাজ্যে রপ্তানির জন্য দেশের আম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট তিন হাজার ৩৪ কেজি আম নিয়ে গেছে। ল্যাবে পরীক্ষার পর বিষমুক্ত নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথম দফায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি ২১৬০ কেজি আম যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছে।

 

এর আগে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির ব্যাপারে বিশ্বের শীর্ষ পণ্য ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্রকিউরমেন্ট লজিস্টিকসের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, হার্টেজ ফাউন্ডেশন ও এফএওর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ হার্টেজ ফাউন্ডেশনের কারিগরি সহয়তায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট সাতক্ষীরার চাষিদের কাছ থেকে বাজারমূল্য ছাড়া অধিক মূল্য দিয়ে আম কিনছে। অধিক দামের নিশ্চয়তা পাওয়ায় জেলার চাষিরা এখন রাসনিক পদার্থ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে পোকা দমনে সেক্সফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করে আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

 

এ বছর জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে জেলার ২০ জন চাষিকে আমচাষে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্য তাদের উৎপাদিত আমই কিনে নিচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে হিমসাগর, নেংড়া ও আম্রপালি। বিদেশের বাজারে  প্রথম পর্যায়ে হিমসাগর আম গেলেও কিছুদিন পর থেকে যেতে শুরু করবে নেংড়া ও আম্রপালি।

 

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলার ধানের জমিতে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার আমবাগান। ফলে এ অঞ্চলে আম চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে।

 

সাতক্ষীরায় বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে তাকে তার মধ্যে হিমসাগর, ন্যাংরা গেবিন্দভোগ, আম্রপলি, বোম্বায়, লতাআম বেশি চাষ করা হয়। সাতক্ষীরার এ আম রাজধানী ঢাকাসহ দেশেÑবিদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার সাতক্ষীরার আম দিয়ে বিদেশের বাজারে সর্বপ্রথম রপ্তানি শুরু করেছে। এর আগে যেমন সাতক্ষীরা সাবিনা, সৌম্য সরকার ও মোস্তাফিজের মতো খেলোয়াড় বাংলাদেশের পরিচিত লাভ করেছে। তেমনই আম বাংলাদেশসহ সাতক্ষীরার পরিচিতি বহন করবে বিদেশের বাজারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.