বিন্দুর চারিপাশে বৃত্তাকার পরিক্রমা

এই শহরের অফিসগুলোতে সন্ধ্যার পরে বাইরে যাতে আলো না যায় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আলো দেখে পাখীরা আসে আর জানালার কাঁচে ধাক্কা খেয়ে পড়ে মারা যায়। পাখিদের জীবনের জন্য এই শহরের মানুষের অনেক মায়া। মানুষের জীবনের জন্যও অনেক মায়া। মানুষের জীবন রক্ষা, নিরাপদ ও সুস্থ রাখার জন্য এই শহরে অনেক আইন আছে, নীতি আছে, ব্যবস্থা আছে, এই শহরের হাসপাতালে বিনা টাকায় চিকিৎসা করা হয়। এই শহরের মানুষ সেজন্য খাজনা দিতে কুন্ঠাবোধ করেনা। সবাই খাজনা দেয় যাতে সবাই সুন্দর ও নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারে। এই শহরে গাছ কাটা মানা। এই শহরের মিউনিসিপ্যালিটিকে খবর দিতে হবে । ওরা এসে গাছ কেটে দিয়ে যাবে যদি নিতান্তই গাছ কাটার দরকার হয়। এই শহরের সবখানে গাছকে সুরক্ষা করা হয়। কারণ গাছ জীবন রক্ষা করে। এই শহরে পাখী শিকার করার জন্য লাইসেন্স নিতে হয়। সব ঋতুতে পাখী শিকারের অনুমতি নেই। এই শহরের দূরে গ্রামের দিকে মাছ ধরার জন্যও লাইসেন্স লাগে। বছরের সব সময় মাছ ধরা যায়না। ছোট মাছ ধরা নিষিদ্ধ। মাছ ধরারও নীতিমালা আছে। এই শহরে হরিন শিকার নিষিদ্ধ। ভালুক মারা নিষিদ্ধ। কোন প্রানীকেই অকারণে হত্যা করা যাবেনা। প্রানী নিয়ন্ত্রন বিভাগকে খবর দিতে হবে। এই শহরে শীতে বা না খেয়ে কেউ মরে গেলে সবাই জানতে পারে। আর এই ঘটনা আবার যেন না হয় সেজন্য ব্যবস্ত নেওয়া হয়। এই শহরে যার যার ধর্ম সে সে পালন করে । যার যার সাংস্কৃতি সে সে উপভোগ করে। যার যার দেশের খাবার সে সে খেতে পারে। সাড়া বিশ্বের সকল সভ্যতা থেকে আসা এই শহরে সব ধরনের খাবার ক্রয়বিক্রয় হয়।

আল্লাহ্‌র সকল প্রকারের সৃষ্টিকে এই শহরে শ্রদ্ধা করা হয়।
এমন একটা সুন্দর শহরে থাকার জন্য আমি আল্লাহ্‌র কাছে কৃতজ্ঞ।
তবে আমি এই শহরে জন্মগ্রহণ করিনি। আমি যেখানে জন্মেছি সেখানে কোন আইন শৃংখলা নেই। আমি যেখানে জন্মেছি সেখানে আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে ধ্বংস করা হয় প্রতিনিয়ত। আল্লাহ্‌র সৃষ্টি মানুষ হত্যা করা হয় প্রতিদিন। মানুষের উপরে নির্যাতন করা হয়। না খেয়ে মানুষ মারা যায়। আমি যে দেশে জন্মেছি সে দেশে মানুষ মানুষের রক্ত চোষে। মানুষ মানুষের মাংশ খায়। সেখানে সত্যিকার অর্থে কতজন মানুষ বাস করা বলা মুশকিল। সবাইকে দেখতে মানুষের মত কিন্তু কাজে কর্মে কথায় চলা বলাতে বেশীরভাগই শয়তানের মত। আমরা শয়তানের কথা শুনেছি। আমি যে দেশে জন্মেছি সে দেশের চারিপাশে শয়তানের হাট।

আমি যেদেশে জন্মেছি সেদেশে আল্লাহ্‌কে সবাই ব্যবহার করে নিজেদের ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য। নামাযীরা বেহেস্তে যাবার জন্য নামায পড়ে। গোনাহগারেরা প্রতিদিন গোনাহ করে আর প্রতিদিন নামায পড়ে সেই গোনাহ মাফ পাবার জন্য। নামাযে যেতে যেতে পথে অনেক এতিম অনেক দরিদ্রদের সাথে দেখা হয়। ওরা কোথা থেকে এলো এই প্রশ্ন মনে আসেনা। কারা এই দারিদ্রতা সৃষ্টি করেছে আর কে এই দারিদ্রতা ঘুচাবে আর এই দারিদ্রতা ঘুচাতে ইসলামের ভূমিকা কি সে সম্পর্কে কেউ চিন্তা ভাবনা করেনা। ইসলাম ব্যক্তিগত সোয়াবের ব্যবসা। ইসলামের অবস্থা সব চাইতে খারাপ সেইসব দেশে যেসব দেশে নামে মাত্র মুসলমানেরা বসবাস করে। সে দেশে অনেক মানুষ অনাহারে মারা যায়। খাদ্য যোগারের জন্য অনেক মানুষ দেহ বিক্রি করে। পাচার হয়ে যায় প্রতিবেশী দেশে। ছোট্র একটি নৌকাতে অনেক মানুষ উঠে বসে পাড়ি জমায় বিদেশে দিকে। কোন কিছু না ভেবেই সরলভাবে দালালদের বিশ্বাস করে তাদের হাতে নিজেদের শেষ কড়ি তুলে দিয়ে নিজেরা উঠে বসে ডিঙ্গি নৌকাতে তারপর ভেসে যায় অনিশ্চিত সাগরে। সাগরের ঢেউ যেদিকে নিয়া যায় ওরা সেদিকে ভেসে যায়। অন্যান্য দেশের কোস্ট গার্ডরা এইসব নৌকার দিকে গুলি ছোড়ে। গুলিতে হয়ত ওরা মরেনা তবে সাগরের লবনাক্ত পানি পান করে অসুস্থ হয়ে যায়। মল মূত্র বমি লাশ আর অসুস্থ মানুষের আহাজারীর ভেতরে কেটে যায় জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো। অনেকেই এখনও ভাসছে সাগরের অনিশ্চিত স্রোতে।

আদম ব্যবসা বাংলাদেশের অন্যতম প্রতারণা ব্যবসা। বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর প্রতারিত হচ্ছে। “প্রতারণা” বাংলাদেশীদের একটি অন্যতম অর্থকরী পন্য ।

“প্রতারণা” – রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা প্রতারক । এক রাজনৈতক দল ক্ষমতায় যাবার জন্য কর্মসূচী দেয় অন্য রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকার জন্য এই কর্মসূচী বাতিল করে দিতে মানুষ হত্যা করে। জেল, জুলুম, ভুয়া মামলা, চলতে থাকে। যে দলই ক্ষমতায় যাক – জনগনের সাথে “প্রতারণা” বন্ধ হয়না।

“প্রতারণা” – দেশের ব্যবসায়ীরা প্রতারক । বিষ মিষিয়ে খাদ্য বিক্রি করে।
“প্রতারণা” – দেশের চিকিৎসকরা প্রতারক। লাইসেন্স কিনে ডাক্তার হয়েছে ফলে রোগী মেরে ফ্যালে।
“প্রতারণা” – দেশের শিক্ষা প্রতিষ্টানের কর্মকর্তা ও শিক্ষকেরা প্রতারক। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে। শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোর সাথে বেশ্যালয়ের তুলনা করা যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে গন ধর্ষন চলতে থাকলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোর বসে বসে দাবা খেলে। পুলিশেরা বিশ্রাম নেয়।
“প্রতারণা” – দেশের সংবাদপত্রগুলো মিথ্যা কথা লিখে প্রকাশ করে। পাঠকদের ধোঁকা দেয়। সাংবাদিকেরা মিথ্যা কথা লিখে টাকা কামায় করে। পুলিশে মানুষ হত্যা করে বা নির্যাতন করে আর সেই ছবি উঠিয়ে পত্রিকাতে প্রকাশ করে খুনীদের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রগুলো জনগনকে হুঁশিয়ার করে দেয়। কেউ যদি সরকারের বিরোধীতা করো তাহলে এই শাস্তি হবে। বাংলাদেশের সব খানে সব কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন যেকোন ব্যবসার মত। মানুষের জন্য কিছু নেই। মুনাফার জন্য সবাই সবার রক্ত চুষছে।

উপরোক্ত প্রতারণা থেকে মুক্তি পাবার জন্য মানুষে দেশ ছেড়ে পালাতে চায় কিন্তু আবারও প্রতারিত হয় আদমব্যবসায়ী পশুদের কাছে। এই আদম ব্যবসায়ী পশুরা সাধাসিধা সরল মানুষদেরকে প্রতারিত করে বিদেশে পাঠানোর মিথ্যা আশা দিয়ে। এই জন্তুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় জীবনের শেষ সম্বল। তারপর বিদেশে না যেয়ে বিদেশের সমুদ্রে ভেসে থাকে হাজার হাজার প্রতারিত মানুষ।

“প্রতারণা” – বাংলাদেশে একটি স্বাভাবিক শব্দ । বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ একে অন্যকে প্রতারণা করেই জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতারনাই বাংলাদেশে সততা । সততার সংজ্ঞা বদলে গেছে বাংলাদেশে। প্রতারণা করে বাংলাদেশের মানুষ এক পৈশাচিক আনন্দ বোধ করে। রাজনৈতিক দলের নেত্রীরা যাত্রাপার্টির নায়িকাদের মত অন্যের লিখে দেওয়া ভাষন পাঠ করে, অন্যের নির্দেশিত কর্মসূচী দেয়, নেত্রীরা সব বহুজাতিক বিদেশী পুঁজিপতিদের সামনে একটি বিজ্ঞাপন বা সাইনবোর্ডের মত।  তাদের কথা, পোষাক, ভাব ইত্যাদি দিয়ে প্রতারণা করে কোটি কোটি মানুষকে। মুখাভংগি আর ভাষন দিয়ে বশ করে রাখে । সাইনবোর্ডের পেছনের প্রতারকদের কেউ দেখতে পায়না। প্রতারকদের আসল উদ্দেশ্য কেউ জানতে পারেনা।

স্বামী স্ত্রীকে প্রতারণা করে। স্ত্রী স্বামীকে প্রতারণা করে। অনেকে নিজে নিজেকে প্রতারণা করে। প্রতারণা এক স্বাভাবিক খেলা। অনেকেই আত্মপ্রবঞ্চনা করে নিজের দুর্বলতাগুলোকে নিজের ভেতরে লুকিয়ে রেখে নিজেকে শক্তিশালী ভেবে আরো দুর্বল হয়ে যায়। ডুবে যায় বিভ্রান্তির গভীরে। এই প্রতারণার খেলা খেলতে খেলতে ধীরে ধীরে মানুষ বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে । দ্বিপদ পশুরা পুরা দেশ দখল করে ফেলেছে। প্রতারকের পৈশাচিক উল্লাসে মুখোরিত বাংলাদেশ। সরল সাধারন মানুষেরা মরে যাচ্ছে । মরে যাচ্ছে মানবিকতা । মরে যাচ্ছে ভালবাসা। মরে যাচ্ছে বিশ্বাস।

৬ thoughts on “বিন্দুর চারিপাশে বৃত্তাকার পরিক্রমা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *