আজম সাইফুল ২০০১ সালে ভারতীয় হিন্দি সিনেমা “নায়ক” মুক্তি পায়। ছবিটি অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কারন সিনেমায় একজন সাধারণ ব্যক্তিকে একদিনের জন্য একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করায় সে রাতারাতি অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়, যা কিনা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা বছরের পর বছর কাজ করেও করতে পারছিল না। ছবির একটা অংশে দেখানো হয় একদিনের মুখ্যমন্ত্রী তার দলবল নিয়ে যায় বস্তিতে, যেই বস্তির লোকজনের থাকার জন্য সরকার ফ্ল্যাট করে দিয়েছে। তারপরেও এরা কেন বস্তিতে থাকে? খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হলেও সেখানে থাকে রাজনৈতিক নেতাদের আত্মীয় স্বজনেরা! আবার অনেক বস্তিবাসী টাকার লোভে তার ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে রেখেছে। ছবিতে ওইদিনের মধ্যেই ওই সমস্যার সমাধান করেছিলেন ওই একদিনের মুখ্যমন্ত্রী। ছবিতে যা দেখানো হয়েছিলো তা আসলে বাস্তবে ওইভাবে সম্ভব না হলেও, একেবারেই অসম্ভব না। ওই কাজগুলা হয়ত একদিনে করা যাবে না কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে খুব সহজেই তা করা সম্ভব। ওই ছবির মাধ্যমে এটা বুঝানো হয়েছিলো, আমরা যদি সবাই মিলে চেষ্টা করি তাহলে সব সম্ভব। আর যারা দুর্নীতিবাজ তারাও দুর্নীতি করতে একটু চিন্তা করবে। এবার মূল ঘটনায় আসি……আমাদের পূর্তমন্ত্রী আজকে ঘোষণা দিয়েছেন, দৈনিক ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকার কিস্তি ব্যাংকে জমা দিয়ে বস্তিবাসী ও স্বল্প আয়ের মানুষ একটি ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারবেন। এর আয়তন হবে ৩৫০ থেকে ৪৬৫ বর্গফুট। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এ ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে। এজন্য দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৬ কোটি ১৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা। নিঃসন্দেহে এটা একটা অত্যন্ত ভালো সংবাদ। কিন্তু খবরটা পড়ার সাথে সাথেই আমার “নায়ক” ছবিটার কথা মনে পড়লো। আমাদের দেশে যে পরিমাণ দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক আছে, তা সারা পৃথিবীতে নাই। আর এই দুর্নীতিবাজদের ভিড়ে আমাদের বস্তিবাসিরা এই ধরনের আবাসিক সুবিধা পাবে এটা বিশ্বাস করা বেশ কঠিন। এই দুর্নীতিবাজেরা যদি বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট দখল করে নেয় (যা খুবই সম্ভব) তাহলে এদেরকে এই ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার মতো আমাদের দেশে কোন নায়ক কি আছে? নাই! তাই বলছিলাম কি, পরিকল্পনাটা অত্যন্ত ভালো হওয়া সত্ত্বেও এটা বাস্তবায়ন করে সরকারের ২১৬ কোটি টাকা নষ্ট না করলেই কি নয়? এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে….ওয়াটার বাস প্রকল্পে গাবতলী-সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জ-টঙ্গী নৌপথে কাঙ্ক্ষিত যাত্রীর অভাবে এই দুই রুটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনকে (বিআইডব্লিউটিসি) প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে এক লাখ টাকা। ফলে গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে এ সার্ভিসটি। যাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ে না ছাড়া, নিরাপত্তা, প্রচারণা, আর সেবার মান বৃদ্ধি না করায় যাত্রী সংকটে সার্ভিসটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে প্রতিদিন প্রতিটি বাসে ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে ১০টি বাসের জন্য মাসে লোকসান হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা। বর্তমানে নতুন ও পুরনো দুই রুটে ৩০ জনের ধারণ ক্ষমতার এ সার্ভিসে গড়ে প্রতিটি ট্রিপে ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী যাতায়াত করছেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বর্তমানে গাবতলী-সদরঘাট নৌপথে ৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় আগের নির্মিত যে ছয়টি ওয়াটার বাস চলছে তার পেছনে গড়ে প্রতিদিন অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। এ বিষয়ে গাবতলী-সদরঘাট রুটের চালক আবদুল মালেক জানান, দৈনিক বেশিরভাগ সময় পাঁচ-ছয়জন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের নির্দেশ কমপক্ষে ১০ জন যাত্রী না হলে ঘাট ছাড়া যাবে না। এমন নির্দেশ পালনে এ পরিমাণ যাত্রী পেতে অনেক সময় নির্ধারিত সময়ের চেয়েও ৩০ থেকে ৫০ মিনিট ঘাটে অবস্থান করতে হয়। এসব কারণেই প্রতিদিন চারটি নির্ধারিত রাউন্ড ট্রিপের জায়গায় মাত্র দুটি রাউন্ড ট্রিপ দেওয়া যায়। এ ছাড়া ২৫ জনের কম হলে প্রতিটি ট্রিপে লোকসান গুনতে হয়। এখানেও যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিলো তা অত্যন্ত ভালো একটা প্রকল্প ছিল। কিন্তু আমাদের ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আর দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের কারনেই এই সম্ভাবনাময় প্রকল্প আজকে নদীতে ডুবতে বসেছে এবং আমি নিশ্চিত অচিরেই তা ডুবে যাবে। প্রথম থেকেই এই প্রকল্প লাভজনক করার কোন চিন্তাই আমাদের কর্পোরেশনের ছিল বলে মনে হয় না। যদি থাকতো তাহলে তারা আরও বেশি প্রচারণা করতো। যেখানে যাত্রী স্বল্পতার কারণে ৬টি ওয়াটার বাস দিয়ে প্রথম থেকেই এই প্রকল্প লস দিচ্ছিল সেখানে আবার নতুন করে কার স্বার্থে আরও ৪ টি নতুন ওয়াটার বাস নামানো হোল? এখন এই ১০টি ওয়াটার বাস যে প্রতি মাসে ৩০ লক্ষ টাকা লস দিচ্ছে এটার দায়ভার কে নিবে? আবার দেখুন সংস্থার কর্মকর্তা বলে দিয়েছেন ১০ জন যাত্রী না হলে যেন বাস না ছাড়া হয়!! আমাকে যেখানে বলা হচ্ছে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হবে সেখানে যদি আমার যাত্রা করতেই ১ ঘণ্টা দেরি করতে হয় তাহলে আমি সেই বাহনে উঠবো কেন? যদি মানুষ দেখত ওয়াটার বাস নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যায় যাত্রী ভরপুর থাকুক আর না থাকুক এবং অন্যান্য বাহনের চেয়ে কম সময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছেও দেয়, তাহলে এতদিনে অবশ্যই এই বাহনটা সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হতো। আমি আসলে এত কথার মাধ্যমে বলতে চেষ্টা করেছি, আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় যেভাবে দুর্নীতি তার বাসা বেঁধেছে, সেখান থেকে এই দুর্নীতি আর তাদের ধারকদের নির্বাসিত করা অনেক কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ একটা ব্যাপার হলেও অসম্ভব নয়? তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, এই দুর্নীতি আর দুর্নীতিবাজদের সমাজ থেকে বিতাড়িত করার জন্য আমাদের সমাজেও “নায়ক” দরকার। একজন “নায়ক” নয়…প্রতিজন “নায়ক”। পৃথিবীর সবাই যেন আঙ্গুল তুলে আমাদের দেখিয়ে বলে…এই জাতির সবাই একেকজন……নায়ক
(লেখাটি সাইফুল আজমের ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে)
Singer Boy Tanvir liked this on Facebook.
Mukter Hossan liked this on Facebook.
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.