অর্ক ইদানিং খুব রাত জাগে। রাতের অন্ধকারে বসে বসে সিগারেট টানা তার নতুন অভ্যাস, তবে বেশ ভালোই লাগে। তার রাত জাগার কোনো দরকার ছিল না। ইনসোমনিয়া নেই। বরং মাঝে মধ্যে তন্দ্রায় ঢলে পড়ে। তবু সে রাত জাগে। মধ্যরাতের প্রতি তার একটা মায়া জমে গেছে। এই মায়াজাল অতিক্রম করা খুব একটা কঠিন না, কিন্তু সে হয়তো মন থেকেই তা চায় না। সে চায় রাত জাগতে, পুরানো কথা গুলো রাতেই বেশ মনে পড়ে।
তখন রাত গুলো এমন ছিল না। ছিল না সিগারেটের ধোঁয়া, রাশি রাশি বিষন্নতা। তখন ছিল শুধু ভালোবাসার রঙিন স্বপ্নের বুনন। দুজন মানব মানবীর আদিমতম আকাঙ্খার প্রতিফলন। হাতে হাত রেখে নির্ভয়ে দূর দূরান্ত পাড়ি দেয়ার গল্পগুলো তখন শোনা হত খুব। সিমি নামের মেয়েটার গলা বেশ রিনরিনে। চিকন গলায় হড়হড় করে কত কথাই না বলতো সে!!!
অর্ক কি এখন সেগুলো মিস করে??? হয়তো করে। আননোন নাম্বার থেকে তাকে ফোন দিয়ে চুপ করে থাকা টা কি তার উৎকৃষ্ট প্রমান নয়??? সিমিও ইদানিং চুপ করে থাকে। সে হয়তো বুঝতে পারে। অর্কের শ্বাস প্রশ্বাসও তো তার খুব চেনা। আচ্ছা, সিমি চুপ থাকে কেন??? সেও কি তার কন্ঠ শুনতে চায়??? অর্ক জানে না।
মাঝে মাঝে সিমির নাম্বার বিজি থাকে। “বিজি থাকতেই পরে!!! আমার কি???” অর্ক নিজেকে বোঝায়। চোখ ছলছল করে উঠে ঠিকই। করুক। কেউ তো দেখছে না। মাঝে মাঝে ছেলেদেরও একটু আধটু চোখের জল ফেলতে হয়।
আজকে কেনো যেনো সিমির সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। এই তেষ্টা মাঝে মধ্যে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। আচ্ছা, পরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দিলে কেমন হয়??? সিমি কি রিসিভ করবে??? ওপাশ থেকে সেই চির-পরিচিত রিনরিনে চিকন কন্ঠ ভেসে এল।
-হ্যালো।
অর্ক এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। মাথা ভেতর টা কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত!!! এই মেয়েটার সাথে আগে দিন রাত কত কথা বলত!!! এখন একটা শব্দও বের হচ্ছে না কেনো???
অর্ক বহু কষ্টে কাপা কাপা গলায় বলে।
=কেমন আছো???
-ফোন করেছো কেন???
=ফোন রিসিভ করেছো কেন???
-মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে। রাখছি তাহলে।
=সিমি, প্লিজ একটু শোনো।
-কী???
=ভালোবাসি।
-আমি বাসি না।
=কেনো???
-তুমি কথায় কথায় আমাকে সন্দেহ করো। এভাবে রিলেশন করা কিছুতেই সম্ভব না।
সিমি কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে।
=এই মেয়ে। কাঁদো কেনো হু???
-কই কাঁদি???
=এভাবে না কেঁদে পানি গুলা জমা রাখো। তরকারি তে দেয়া যাবে।
-উফ্। আমি রাখি।
=রাখো।
-আর কিছু বলবা না।
=বলবো। ভালোবাসি। অনেক বেশি।
-এহ, ঢং।
=সিমি, আমি না অনেক সরি। আমি আর কক্ষনো সন্দেহ করবো না। বিশ্বাস কর আমাকে।
-এই আমি রাখি। আম্মু আসতেসে। পরে কথা বলবো।
=ভালোবাসি বলো???
-না বলবো না।
=আচ্ছা রাখি।
-এই।
=বল।
-ভালোবাসি। হিহিহি।
সিমি খট করে ফোনটা রেখে দেয়। অর্কের অবাক হওয়া উচিৎ। এত জলদি সবকিছু ঠিক হবে কেনো??? এটা তো ঠিক না। খুশিতে অর্কের নাচতে ইচ্ছে করছে। লাফ দিতে ইচ্ছে করছে। আনন্দের মাত্রা বেড়ে গেলে বুঝি এমনই হয়???
অর্ক সিগারেট ধরালো। এটা সেলিব্রেশনের সিগারেট। খুব আস্তে আস্তে টানতে হয়।
One thought on “মিড নাইট চাইল্ড অর্ক”