হজ একটি ফরজ ইবাদত। আর ওমরাকে ‘হজে আসগর’ বা ছোট হজ বলা হয়। নবী করিম (সা.) জীবনে তিন বার হজ ও চার বার ওমরা পালন করেছেন। ওমরার জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট করা নেই। বছরের যে কোনো সময়ই তা পালন করা যায়। তবে রমজান মাসে ওমরা পালন করা উত্তম। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানে সম্পাদিত ওমরা হজের সমান।’
ওমরার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক ওমরা হতে অন্য ওমরা, এ দুয়ের মাঝে (সঙ্ঘটিত পাপের) জন্য কাফফারা। আর মাবরূর হজের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।’
পবিত্র কোরআনে কারিমের আটটি সূরার পয়ত্রিশটি আয়াতে হজ ও ওমরা সম্পর্কীয় বর্ণনা এসেছে। হাদিসেও রয়েছে হজ ও ওমরা প্রসঙ্গে অনেক বর্ণনা। তিরমিজি শরিফের এক হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সামর্থ্যবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হজ ও ওমরা আদায় করে নাও। কেননা স্বর্ণকার ও কর্মকার যেমন স্বর্ণ ও রৌপ্য ও লৌহকে পুড়িয়ে-পিটিয়ে ময়লা ও ভেজাল থেকে মুক্ত করেন, ঠিক তেমনি হজ ও ওমরা মানুষের দারিদ্রতা ও গুনাহসমুহকে বিদূরিত করে দেয়।
ইবনে মাজার আরেক বর্ণনায় আছে, হজ ওমরা আদায়কারীর গুনাহ ও দারিদ্রতা এমনভাবে দুরিভুত হয়, লোহা ও স্বর্ণের ময়লা যেমনভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান, তাদের সব দোয়া ও প্রার্থনা আল্লাহতায়ালা কবুল করেন। -ইবনে মাজা
ইসলামের এই পবিত্র ইবাদত করার সুযোগ বাংলাদেশের জন্য এখন বাধাপ্রাপ্ত। পবিত্র হজ ও ওমরা সম্পর্কে ইসলামের এমন দৃষ্টিভঙ্গির পরও মানব পাচারের অভিযোগে সৌদি আরব বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করে ওমরার ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সৌদি সরকার গত একমাস ধরে বাংলাদেশি ওমরা পালনে ইচ্ছুক যাত্রীদের ভিসা দিচ্ছে না। কারণ, ইতোপূর্বে ওমরা ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়া প্রচুর বাংলাদেশি অবৈধভাবে সেখানে রয়ে গেছে। সৌদি সরকার তাদের চিহ্নিত করতে পারছে না। এর আগে সৌদি সরকার পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে একবার হজ করেছেন এমন হাজীদের হজের ভিসা দিবে না বলে আইন জারি করে। সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে হতাশা নেমে এসেছে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত যারা ওমরা পালন করতে গিয়েছিল তাদের একটি অংশ দেশে ফিরে আসেনি। বিষয়টি সৌদি সরকারের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সৌদি আরবের বেঁধে দেয়া নতুন নিয়মে বাংলাদেশ থেকে ওমরা হজযাত্রীদের সেখানে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ম মোতাবেক যারা ওমরা ভিসায় সৌদি আরব যাবেন, তাদের নির্ধারিত এজেন্ট বা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। প্রতিমাসে এর হিসাব সৌদি সরকারের কাছে প্রদান করতে হবে। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪০-৫০ হাজার ওমরা ভিসায় সৌদি আরব যায়। তাদের ভিসার মেয়াদ ছিল ১৪ থেকে ২৮ দিন। ওমরা পালনকারীদের বেশিরভাগ যথাসময়ে দেশে ফিরে এলেও ৪-৫ শতাংশ ফেরেননি, যাদের সংখ্যা দেড় হাজারের মতো। তাদের না ফেরার কথা জানার পর সৌদি সরকার ২২ মার্চ ওমরা ভিসা প্রদান পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করে ওমরা ভিসা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন উদ্বেগজনক, অন্যদিকে মর্যাদাহানিকর। উদ্বেগজনক এ কারণে যে, প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশ থেকে ওমরা হজে যান। ওমরা ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা যেতে পারবেন না। সামনে রমজান মাস। এ সময় অন্তত ২০ হাজার মানুষ ওমরা হজে গিয়ে থাকেন। রমজান মাসে মক্কা-মদিনায় ইবাদত-বন্দেগিতে তারা সময় অতিবাহিত করেন। রমজানের আগে এভাবে ওমরা ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যারা ওমরা হজে যেতে চান বা যাওয়ার নিয়ত করেছেন, তাদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। সৌদি আরবের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকলে তাদের পক্ষে ওমরা হজে যাওয়া সম্ভবপর হবে না।
আমরা জানি, ধর্মপ্রাণ মানুষ হজ ও ওমরা পালন করেন আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনার্থে ও হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তুষ্টি পাওয়ার নিমিত্তে। এখানে কোনো সরকার বা ব্যক্তি এ ক্ষমতা দেয়া হয়নি যে, তিনি বা তারা মানুষের হজ-ওমরা পালনে বাঁধা প্রদান করতে পারবেন। ইসলামী দৃষ্টিকোণে এটা অন্যায়। যে সব কারণে ওমরা ভিসা বন্ধ করার কথা বলা হচ্ছে, সেসব সমস্যার সমাধানে সৌদি সরকার ভিন্ন ব্যবস্থা নিক, তাতে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। তা না করে ভিসা বন্ধ করে দেয়া কেন? মক্কা শরিফের জিয়ারতে কারো মানা করার অধিকার নেই। এটা ইসলামসিদ্ধ নয়। হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রক্কালে মক্কার কোরায়েশরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)কে মক্কা প্রবেশে, হজ-ওমরা করতে বাধা দিয়েছিল। তাদের এ কাজ আল্লাহর কাছে পছন্দ হয়নি। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো কুফরি করেছে এবং বাধা দিয়েছে তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে এবং অবস্থানরত কোরবানির জন্তুগুলোকে যথাস্থানে পৌঁছতে।’ -সূরা ফাতাহ : ২৫
অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশের ওমরার ভিসার ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত হওয়া কিংবা ওমরা হজে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া চরম অপমানজনক বিষয় ও মর্যাদার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এর ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব-মর্যাদা যে ক্ষুন্ন ও ব্যাহত হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। যাদের দরুণ এমন সিদ্ধান্ত শুনতে হলো- তারা নিশ্চয়ই অন্যায়কারী। এমন অসৎ ও ধান্ধাবাজ ট্রাভেল এজেন্সির কারণে বাংলাদেশের ভাব-মর্যাদা বিনষ্ট হওয়া কোনোভাবেই বরদাশতযোগ্য হতে পারে না। এসব অসৎ ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া এবং যারা ওমরা ভিসায় গিয়ে ফেরৎ আসেননি তাদের খুঁজে বের করে ফেরৎ আনার ব্যবস্থা করা জরুরি। এটা বাংলাদেশের সম্মানের জন্যই জরুরি।
আমরা প্রত্যাশা করি, হজ ও ওমরার মতো ইবাদত সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রতারণা ও ধোঁকা এড়িয়ে এজেন্সিগুলো ব্যবসা করবেন। কারণ, সব ব্যবসার ক্ষেত্রে সততা ও আমানতদারিতা রক্ষা করার কথা বলেছে ইসলাম। এর অন্যথা হারাম ও ভীষণ গোনাহের কাজ।
বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে জাতীয় স্বার্থে সরকারের উচিত সৌদি আরবের সঙ্গে রাজনৈতিক সখ্য ও সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। সেই সঙ্গে সৌদি কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্থ করা যে, অভিযুক্ত ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে আইনের আওতায় অবশ্যই আনা হবে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে; তাদের বিষয়ে সরকারের কোনো ছাড় নেই।
দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রত্যাশাও এটা। দেশের মানুষ মনে করে, গুটিকতক অসৎ লোকের দায়ভার পুরো রাষ্ট্র নিতে পারে না। তাদের অপকর্মের কারণে আসন্ন রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাঙ্ক্ষিত ওমরা বন্ধ থাকতে পারে না। এই দুষ্টুদের কারণে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেয়া যায় না। আর হজ-ওমরার নামে আদম পাচারের তিলক বাংলাদেশের গায়ে লাগুক এটাও মানা যায় না।
আমাদের বিশ্বাস অভিযুক্ত ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে, ভবিষ্যতে কোনো এজেন্সি আর এমন অসৎ কাজ করার সাহস পাবে না, তেমনি সৌদি সরকারও আশ্বস্ত হবে; তারা পুনরায় ওমরা ভিসা প্রদান শুরু করবে— এটা সঙ্গতকারণেই আমরা প্রত্যাশা করি। সেই সঙ্গে আমরাও পুনরায় ওমরা ভিসা প্রদানের জন্য সৌদি সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানাই।
Faruk Mb liked this on Facebook.
Sakat Khan liked this on Facebook.
Arshad Hossain liked this on Facebook.
Aminul Islam Badhol liked this on Facebook.
Singer Boy Tanvir liked this on Facebook.
জীবনের শেষ সীমানায় liked this on Facebook.
Kabir Jbd liked this on Facebook.
Mohammed Anam liked this on Facebook.
Lal Bhai liked this on Facebook.
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.
Mukter Hossan liked this on Facebook.
MD Anwar Hossan Anwar liked this on Facebook.
Hafizur Rahman liked this on Facebook.
Ahamed Alam liked this on Facebook.
Kashem Dhaka liked this on Facebook.
MD Razak liked this on Facebook.
Bablu Halim Akm liked this on Facebook.
Sumon M Rahman liked this on Facebook.
Anowar Hussain liked this on Facebook.
Yeanur Mohammed liked this on Facebook.