‘বুঝতে পেরেছি, শুধুই বেঁচে আছি’

ঢাকা: ‘কল্পনাও করিনি যে বেঁচে ফিরবো। খুব কাছ থেকে দুই সহকর্মীর মৃত্যু দেখেছি। মনে হচ্ছিল সেই অন্ধকারে আমিও মরে যাচ্ছি।’

ওমানে কাজ করার সময় পাহাড় ধসে আহত বাংলাদেশি শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম এভাবেই বলছিলেন তার বেঁচে ফেরার গল্প।

স্থানীয় সময় সোমবার (২৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পানির পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করার সময় ওমানের কোরাম এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ে।

এতে বাংলাদেশি শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও দুই ভারতীয় শ্রমিক আটকা পড়েন। দুই সহকর্মী মারা গেলেও ভাগ্যগুণে প্রাণে বেঁচেছেন ভাগ্যন্বেষী জাহাঙ্গীর।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন,‘ধ্বংসাবশেষে আটকা পড়ার পর আমার কাছে থাকা মুঠোফোন দিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের কল করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেখানে কোনো সিগন্যাল না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।’

ঘটনার দুঃসহ বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ক্রমান্বয়েই শিলা ও ধ্বংস স্তুপের ওজন বাড়ছিল। অসহনীয় ব্যাথাও অনুভূত হচ্ছিল। ধীরে ধীরে আমি অচেতন হয়ে পড়ছিলাম।

‘এরপর কী হয়েছে কিছুই জানি না। সকালে অনুভব করলাম কেউ আমাকে ধরাধরি করছে, হাসপাতালে পৌঁছানোর পর শুধু বেঁচে আছি সেটাই বুঝতে পেরেছি,’ যোগ করেন জাহাঙ্গীর।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানায়, সোমবার ওই এলাকায় পাহাড় ধসের পর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালায় উদ্ধারকারীরা।

দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালিয়ে জাহাঙ্গীরকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নয় মাস আগে ওমানে যাওয়া জাহাঙ্গীর বলেন,‘ মা-বাবাকে দেখতে পারবো কিনা তা নিয়েই চিন্তিত ছিলাম আমি।’

মাস্কটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ওমান জানায়, সাধারণ ক্ষমাপ্রার্থী অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের যে তালিকা দূতাবাস করেছে তাতে জাহাঙ্গীরও রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নয় মাস আগে ওমানে গেলেও কোনো স্পন্সর পাননি জাহাঙ্গীর। চুক্তিভিত্তিতে ওই পাইপ লাইন স্থাপনকারী কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা। মানবিক দিক বিবেচনা করে যাতে তাকে এখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় সেজন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো।

‘কেননা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসাবে জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশের প্রত্যেন্ত গ্রাম থেকে ওমানে এসেছেন তিনি,’ বলেন দূতাবাসের এই কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *