আনন্দে দোলে নাগরদোলা

ঢাকা: বৈশাখ মানে রমনার বটমূল, মঙ্গল শোভাযাত্রা, চিরায়ত বৈশাখী মেলা। বৈশাখ মানে নাচ-গান, হাসি–আনন্দ, চিৎকার, হৈ-হুল্লোড়, ঘোড়ার গাড়ীতে ওঠাসহ হাল আমলে যুক্ত হয়েছে ভুবুজেলার কানফাঁটানো শব্দ, মুখ ভেংচানো সেলফি আরো কত কী! তবে যে জিনিসটি ছাড়া শিশু-কিশোরদের কাছে বৈশাখ একেবারে অসম্পূর্ণ থেকে যায় তা হলো নাগরদোলায় দোল খাওয়া।

বরাবরের মতো এবারের বৈশাখেও সকাল থেকেই বিভিন্ন নাগরদোলার সামনে ভিড় করেছে শিশু-কিশোররা। শুধু শিশু কিশোররাই নয়, অনেক তরুণ–তরুণীদেরও দেখা গেছে নাগর দোলার চক্কর খেতে। এমনকি সন্তান সঙ্গে বাবা-মাকেও দুলতে দেখা গেছে নাগরদোলায়।

একজন একজন করে ১৬ জন পূর্ণ হলে তবেই দোল খাওয়ার পালা। গায়ের জোরেই চালাতে হয় একে। মাঠ পেরিয়ে আকাশ ছুঁতে ছুঁতেই আবার যেন মাঠে ফিরে আসা, সঙ্গে সঙ্গেই আবার আকাশের দিকে উড়ে যাওয়া। এভাবেই চলতে থাকে নাগরদোলার চক্কর। সেই চক্করে মাথা কিছুটা চক্কর দিতেই পারে। কিংবা ভয়ও লাগতে পারে কারো। মনে হতেই পারে দুলতে দুলতে এই বুঝি ছিটকে পড়ল দোলনাখানা! তবে কোনো ভয়ই নাগরদোলায় চড়ার উৎসাহটাকে দমাতে পারে না।

মা-বাবার সঙ্গেই মেলায় বেড়াতে এসেছে জুমা নামে একটি শিশু। চোখে মুখে যেন আনন্দের হাসি। মায়ের সঙ্গেই ছোট মেয়েটি উঠবে নাগরদোলায়। জিজ্ঞেস করতেই ৫-৬ বছরের এই শিশুটি বাংলামেইলকে বলল, ‘নাগরদোলায় দোল খেতে আমার অনেক আনন্দ লাগে! এর আগেও নাগরদোলায় উঠেছি। আগে ভয় পেতাম, এখন মজা পাই।’

তার মা সুইটি বেগম, বাসা খিলগাঁও। চাকরি করেন একটি বেসরকারী কোম্পানিতে। ‍তিনি জানালেন, প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে তারা স্বপরিবারে এলাকাটিতে ঘুড়তে আসেন। এখানে না আসলে পহেলা বৈশাখের আনন্দ অসম্পূর্ণই থেকে যায়।

কথা হলো নাগরদোলার চালক জসিমের সঙ্গে। জানতে চাইলে জসিম জানালেন, মূল কাঠামোটির এক একটি হাতে বাক্সের মতো এই চেয়ারগুলো ঠিকঠাক মতো জুড়ে দিলেই তৈরি হয়ে যায় এই চক্রাকার যানটি। এ কাজটি করতে গিয়ে বেশ কসরত করতে হয় সবাইকে। গায়ের সব জোর খাটিয়ে জোড়া লাগাতে হয় কলকব্জা। এমনকি বারবার টেনে টেনে ঘোড়াতেও অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই এ কাজে নিয়োজিত আছেন ৮ জন মানুষ।

এ নাগরদোলাটির যিনি টাকা কালেকশান করেন হাছান। হাছান জানান, সকাল ১০টা থেকে দুপুর পযর্ন্ত তাদের আয় হয়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকার মতো। বিকেলে লোকজন বেশি হয়। সবমিলিয়ে সারদিনে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

ডিজিটাল এই যুগে উন্নতমানের পার্কগুলোতে যতই আধুনিক যান্ত্রিক রাইড থাকুক না কেন বাঙালিয়ানায় ভরপুর এই ঐতিহ্যবাহী চক্রযান নাগরদোলার চড়ার আনন্দ একেবারেই আলাদা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *