এই নববর্ষ শুভ নয়

শুভ নববর্ষ আর শুভ রইল কোথায়? যে দেশে বারো মাস নদীতে শাপলার বদলে মানুষের লাশ ভাসে সেদেশের মানুষ এত রং ঢং করে নববর্ষ উৎযাপন কিভাবে করে? বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে বাস করেও আমি বাংলাকে ভুলিনি। বাংলাদেশকে ভুলিনি। ইলিশ মাছ কেনার মত সামর্থ আমার আছে। বাংলাদেশে যে ইলিশ জন্মে তা বাংলাদেশীরা খেতে পায়না কিন্তু আমরা যারা বিদেশে আছি বা ওরা যারা ভারতে আছেন তারা খেতে পান। যারা বাংলাদেশে জন্মেছে আর বাংলাদেশে আজীবন থেকেছেন তারা বাংলাদেশে থাকার অধিকার হারান। তারা বাংলাদেশে শান্তিতে বসবাস করা্র অধিকার হারান। অনেকের বাসাতে পুলিশ এসে গুলি করে মানুষ হত্যা করে। বাসাতে পুলিশ এসে উঠিয়ে নিয়া যায়। মানুষের নামে ভুয়া মামলা দিয়ে পুলিশে মানুষকে টাকার জন্য ব্ল্যাকমেইল করে। কিন্তু ভারত থেকে মানুষ এসে বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্টানগুলো চালাচ্ছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের শ্রমিক বানিয়ে বেশ মুনাফা করছে, বাংলাদেশে ভারতের পন্য উপচে পড়ছে, বাংলাদেশী শ্রমিকেরা সব বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতের শিল্পপ্রতিষ্টানে কাজ করে যে টাকা উপার্জন করেন তা ভারতের ফালতু পণ্য কিনে ভারতের কাছে তাদের উপার্জনের সিংহভাগ পাঠিয়ে দেন। বুঝিনা কিসের এত ফুর্তি বাংলাদেশীদের। লজ্বা, শরমের বালায় নাই বলেই কৃতদাসের ফুর্তি বেশী থাকে। এখন বলেন কার গোলামী করে আপনেদের বেশী ফুর্তি ? পাকিস্তানের না ভারতের?

পাকিস্তানের প্রভুরা ছিল আদমজী, ইসপাহানী আর ভারতের প্রভুরা হইল টাটা, বিরলা – বাংলাদেশীদের হাতে তো বাংলাদেশ নেই তাই উৎযাপন রয়ে গেছে। বাংলা নববর্ষে বাংলাদেশীরা কি বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে? অনেকে যারা রং মেখে সং সেজে বসে আছে ওরা তো জানেই না বাংলা ঋতুর নাম, বাংলা ক্যালেন্ডারের তারিখ, বাংলা ভাষা, ইত্যাদি। বাংলাদেশীরা না ভালবাসে বাংলা না ভালবাসে বাঙ্গালী শুধু ভালবাসে রং মেখে সং সেজে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্টান উৎযাপন করতে।

যেকোন দিবস উৎযাপনে পুঁজিপতিদের মুনাফা থাকে। পুঁজিপতিরা চায় এই ধরনের অনেক দিবস উতযাপিত হোক। এইসব দিবসগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন করে সাজিয়ে তোলার জন্য নানা ধরনের পন্য উৎপাদিত হোক আর বাংলাদেশের কৃতদাসেরা এইসব পন্য কিনে নিজেদের কস্টার্জিত টাকাগুলো দিয়ে পুঁজিপতিদের ব্যাংক বালান্স বৃদ্ধি করুক ।

পহেলা বৈশাখে কৃষকেরা তাদের ঘরে নতুন ফসল তোলে। ফারাক্কা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে শেখ মুজিব ভারতের হাতে বাংলাদেশের পানির নিয়ন্ত্রন সপে দেবার পরে বাংলাদেশের নদীগুলো এখন ফুটবল খেলার মাঠ। বাংলাদেশে কৃষক বলতে কিছু নাই। তাই ঘরে নতুন ফসল তোলার বদলে বাংলাদেশের মৃত কৃষকের ছেলেরা রেল লাইনের ধারে ইয়াবা চালানের নিরীহ শিকার হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে আর কৃষকের মেয়েরা দেহব্যবসা করছে। এইতো কৃষকের পহেলা বৈশাখ।

পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নতুন খাতা খোলে। হালখাতা। বাংলাদেশে তেমন কোন পন্য উৎপাদিত হয়না। ফলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ভারত বা চীনের বা অন্যান্য বহুজাতিক পুঁজিপতিদের উৎপাদিত পন্যের এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। সবাই ইংরেজী ক্যালেন্ডার অনুসরন করে। সুতারাং হালখাতা এখন জাদুঘরেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।

বাংলাদেশের বাজারে বিষ মেশানো খাদ্য বিক্রি হয়। যা খেয়ে বাংলাদেশীরা অসুস্থ হলে বাংলাদেশী হাসপাতালের ভুয়া সার্টিফিকেটধারী ডাক্তারেরা রোগ হাতরাইয়া নির্নয় করতে না পারার ফলে এইসব রোগীরা বিভিন্ন রকমের জটিলতায় ভোগে। যাদের চুরি করা টাকা আছে তারা ভারতে যেয়ে চিকিৎসা করে।

প্রতিদিন নানা অজুহাতে বাংলাদেশে নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়। এই ব্যাপারে মানুষের জীবনের চাইতে এইসব অজুহাতগুলো খুব জরুরী। পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাবার মত জরুরী। ইসরায়েল যখন পালেস্টাইনীদের হত্যা করে তখন বাংলাদেশ থেকে মানুষ কেদে কেটে আকুল হয়ে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয় । অথচ বাংলাদেশে প্রতিদিন বাংলাদেশের পুলিশ, র‍্যাব, ছাত্রলীগের গুন্ডারা বাংলাদেশী হত্যা করছে। সে ব্যাপারে কারু কোন সমস্যা নাই। ১৯৭২-৭৫ সালেও শেখ মুজিব বামপন্থীদের একইভাবে হত্যা করেছিল।

অবাক বাংলাদেশ!! এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। বাংলাদেশের মাঠে, ঘাটে, নদীতে বাংলাদেশীদের লাশ ভাসে তবু নানা রকমের উৎসব পালনের কমতি নাই !!

আমি দুঃখিত – যে দেশের মানুষ নিরীহ মানুষের ফাঁসী উৎযাপন করে সে দেশের মানুষের জন্য কোন শুভেচ্ছা জানাতে পারলাম না। আমি দুঃখিত – যে দেশের মানুষে খুনীদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নিজের ভাইয়ের বুকে গুলি চালায় সে দেশের মানুষের জন্য আমি শুভেচ্ছা জানাতে পারলাম না। আমার শুভেচ্ছা জানালে বা না জানালে কারু কোন অশুভ প্রতিক্রিয়া হবেনা। বাংলাদেশী হত্যা অব্যাহত থাকবে যতদিন বাংলাদেশ ভারতের অংগ রাজ্য থাকবে।

আজ এই নববর্ষে আমার জন্মদিনে আমি কামনা করবো বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠুক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করুক। বাংলাদেশকে আর্থ-রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে স্বাধীন করার জন্য লড়াই শুরু করুক। বাংলাদেশকে ভালবাসুক। বাংলাদেশীদেরকে ভালবাসুক। বাংলাদেশে মানবাধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্টিত হোক। আল্লাহ্‌ বাংলাদেশীদের সহায় হউন।8me8

One thought on “এই নববর্ষ শুভ নয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.