আমরা বিস্মিত নই

বাল্যকাল হইতেই কাদের সিদ্দিকী নামের একটি প্রানী আমার কাছে বিস্ময় । বিদেশী সাংবাদিকদের রেকর্ডকৃত ভিডিও ফুটেজে আমরা দেখেছি কাদের সিদ্দিকি নিরস্ত্র বন্দী কিছু হাড্ডিসার মানুষকে লাথি মারছে পরে গুলি করে তাদের মেরে ফ্যালে। এটা ছিল মাত্র একটা দৃশ্য। যেসময়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে ভারত বাংলাদেশ থেকে নিরাপদ দুরত্বে নিয়ে যাচ্ছিল যাতে বাংলাদেশীরা পাক হানাদার বাহিনীর কোন ক্ষতি না করতে পারে ঠিক সেই সময়েই ভিডিওটি ধারন করা হয়েছিল। একজন বীর নিরস্ত্র বন্দীকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারে, এটা ভাবা যায়না। একজন বীর যে সে তার প্রতিপক্ষের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বলে – “আমি নিরস্ত্রের সাথে যুদ্ধ করার মত কাপুরুষ নই”

আপনেরে যে বীর খেতাব দিয়েছে সে একজন কাপুরুষ ছিল। একজন কাপুরুষ অন্য একজন কাপুরুষকেই বীর মনে করে। যেহেতু বিহারীদের কেউ নিরাপদ দুরত্বে নিয়ে যায়নি তাই ওদের হত্যা করা ছিল আপনার বীরত্ব। কোন হানাদার বাহিনীকে যদি লাখি মেরে বা বেয়োনেড দিয়ে নির্যাতন করে, গুলি করে মেরে ফেলতেন তাহলে বুঝতাম কাদের সিদ্দিকী একজন বীর। এখানে ভিডিওটির লিঙ্ক দেওয়া হলো পাঠকদের দেখার জন্য।
https://www.youtube.com/watch?v=Ep8fNT4-A9g
পাক হানাদার বাহিনীর কেশাগ্র স্পর্শ করার সাহস ছিলনা কাদের সিদ্দিকীর । সাড়া বাংলাদেশে যখন ভারতের সৈন্য আর গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন গিজ গিজ করছিল। কাদের সিদ্দিকীর বীরত্ব শুধু অসহায় মানুষের জমিজমা, ফ্যাক্টরী ছিনিয়ে নিয়ে তাদের গুলি করে মেরে ফেলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল সেসময়ে।

কাদের সিদ্দিকী এখন মান করেছে । আলোচনা না হলে ঘরে ফিরবেননা। শান্তি না এলে ঘরে ফিরবেননা। ১৯৭২-৭৫ সালে কাদের সিদ্দিকীর মান অভিমান কোথায় ছিল? তখন উনাকে বঙ্গবীর খেতাব দেওয়া হয়েছিল, লুটপাটের ব্যাপক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তাই তিনি মনে করেন ১৯৭২-৭৫ সালে দেশে সম্পুর্নভাবে শান্তি বহাল ছিল। ধরে নিলাম ১৯৭২-৭৫ সালে দশ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। ১৯৭২-৭৫ সালে হাজার হাজার বিরোধীদলের কমরেডদের রক্ষিবাহিনী দিয়ে হত্যা করানো হয়নি। ধরে নিলাম কমরেড সিরাজ সিকদারকে বাংলাদেশের প্রথম ক্রশফায়ারে হত্যা করা হয়নি। ধরে নিলাম এইসবই গুজব। ১৯৭২-৭৫ সালের বাংলাদেশের বিভিন্ন দৃশ্যও ভিডিওতে ধারণ করেছেন একজন বিদেশী সাংবাদিক। তার নাম জন পিলজার। এখানে সিরিজ ভিডিওর লিঙ্ক দেওয়া হলো পাঠকদের দেখার জন্য।
An Unfashionable Tragedy
http://johnpilger.com/videos/an-unfashionable-tragedy

কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজ আমরা হারাতে বসেছি!!! বুঝলাম না। এই স্বাধীনতা আজ হারাতে বসেছি?  নাকি এই স্বাধীনতা ১৯৭৫-৮১ সালে হারিয়ে ফেলেছিলাম? দ্যাখেন ভাই, আপনে আগে মনস্থির করে নেন, কখন আপনে স্বাধীনতা হারাতে বসেন তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার হারিয়ে যাবে কোথায় ?? স্বাধীনতা হারাবার আর কোন চান্সই নাই। স্বাধীনতা হারিয়ে যদি ভারতে যায় তাহলে সেটাই তো আপনে চাইছিলেন ১৯৭৫-৮১ সালে। আপনে ভারতের সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতা এনেছে সেই স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে। আপনি ভারতের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যাতে জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং শাস্তি দেওয়া হয়। আপনি একজন মুক্তি্যোদ্ধা হয়ে অন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে দেশদ্রোহী বলেছিলেন। আমার যতদুর ধারনা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানও স্বাধীনতার জন্যই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। সেই স্বাধীনতা আপনার পছন্দ ছিলনা । ভারতের এনে দেওয়া স্বাধীনতা আপনার বেশী পছন্দ।

বাংলাদেশে স্বাধীনতা এনে দিতে ভারত যদি সাহায্য করে থাকে তাহলে আপনি কি বলতে চান ? আপনে মুক্তিযুদ্ধ করেননি ? আপনি কি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ?? ভারতের কাছে গেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে। ভারতের কাছেই যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার চাবিকাঠী থাকে তাহলে আর মুক্তিযুদ্ধ করার কি দরকার ছিল ? এখন তো আমার সন্দেহ হচ্ছে আপনি আদৌ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন কিনা। কারণ আপনি বিশ্বাস করেন একমাত্র ভারতই বাংলাদেশের “স্বাধীনতা রক্ষা” করতে পারে ও “ফিরিয়ে এনে দিতে পারে”।
তাহলে ত্রিশ লাখ মাবোনের আত্মত্যাগের কোটেশন কোথায় প্রয়োগ করা হবে?

দ্যাখেন ভাই, মনস্থির করেন। হতে পারে আপনার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে। শেখ হাসিনার চাইতে বড় সেবক ভারত এখনও খুঁজে পায় নাই। ১৯৭৫ এর সাতজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যারা ফাঁসী দিয়েছে আর দিতে সাহায্য করেছে তাদেরও ভারত “বিশ্বস্থ সেবক” হিসাবে বিশ্বাস করেনা। ভারত যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্ষক হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখন কুমীরের পাঠশালাতে যেমন শেয়াল ছানারা সুরক্ষিত ছিল তেমনি সুরক্ষিত আছে। কোন চিন্তা নাই।

অবশ, বিবশ, নিরুপায়, অসহায়, দুর্বল, ইয়াবা্তে বিভোর, পর্ণে ডোবা, ইন্টারনেট আর আইফোন ভিত্তিক প্রজন্মের সন্তানেরা আপনার এই সংলাপ খুব পছন্দ করে—

“ত্রিশ লাখ মাবোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা”

এইটা এক একটা বিশেষ “স্বাধীনতা দোয়া”।
এই দোয়া লিখে তাবিজের ভেতরে রেখে, তাবিজ একটা দড়ির সাথে বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে দিলেই “স্বাধীনতা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবেনা”। যদি কখনও ভয় হয় এই তাবিজ কেউ ছিনিয়ে নিবে তাইলে স্বাধীনতা আমাদের ছেড়ে দুরে চলে যাবে, তেমন ভয় হলেই, জামাত শিবিরের কিছু সদস্যকে নির্যাতন করে বা ফাঁসী দিয়ে মেরে ফেললেই সব বালা মুসিবত কেটে যাবে।

১৯৭৫-৮১ সালে জিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আপনি ভারতে চলে গেলেন। জিয়াউর রহমান তো একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে “স্বাধীনতা” সুরক্ষিত থাকবে এটা আপনি বিশ্বাস করতে পারেন নাই। জিয়া ক্ষমতায় যাবার সাথে সাথে আপনি ভেবেছেন আপনি স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছেন। ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা জিয়ার হাতে বেহাত হয়ে গেছিল তাই “স্বাধীনতাকে” খুঁজে পেতে, ফিরিয়ে আনতে, বা পুনঃরুদ্ধার করতে আপনি ভারতের কাছ হাত পেতেছিলেন। ভারত আপনাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে কমিশন দিয়ে পাঠিয়েছে। সেখানেই আপনার যত অশান্তি। সেও অনেক কাল আগের কথা। এতদিন বেশ চলছিল। আপনে বিদ্রোহ করেন নাই। কিছুদিন পর পর কারণে অকারনে বিদ্রোহ করে আপনে মজা পান।  এখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে আপনি “শান্তি” হারিয়ে ফেলেছেন। সেটা কিভাবে সম্ভব ? আপনার প্রিয়, স্বাধীনতার স্থপতির কন্যার হাতেও স্বাধীনতা রক্ষা হবেনা বলে আপনি মনে করেন?

জিয়ার হাতে স্বাধীনতা অরক্ষিত
হাসিনার হাতে স্বাধীনতা অরক্ষিত অর্থাৎ ভারতের হাতেও স্বাধীনতা অরক্ষিত??
তাইলে আপনে কি চান?

দিল্লী তো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশে রয়েছে ভারতের রাজ্য সরকার। অসুবিধা কোথায়? আপনি যদি মনে করেন দিল্লী আপনাকে রাজ্য সরকার বানাবে তাহলেও আপনাকে খালি হাতে রাস্তায় শুয়ে থাকতে হবে। ভাবছি, বেইমানের রক্ত চুষে ঢাকার মশারা আবার নিজেদের “বীর” ঘোষনা না করে ফ্যালে। বিহারীদের পাখা ছিলনা তাই উড়ে যেতে পারেনি। মশারা উড়ে যেতে পারে। বাড়ি যান।

৬ thoughts on “আমরা বিস্মিত নই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *