ফুটপাথে কাদের সিদ্দিকীর দেড় মাস

ঢাকা: দেশের বর্তমান চলমান সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনায় বসতে এবং খালেদা জিয়াকে অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মতিঝিল ফুটপাথে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ শুক্রবার এ কর্মসূচির দেড় মাস পাড় হচ্ছে।

অবস্থান কর্মসূচির ৪৫ দিনে কাদের সিদ্দিকী জুমার নামাজ আদায় করে শ্রমজীবী ও পথ শিশুদের নিয়ে ফুটপাথে বসেই দুপুরের খাবার খেয়েছেন।

ফুটপাথে কাদের সিদ্দিকীর পাশে বসে খাবার খাওয়ার পর রিকশা চালক বিক্রমপুরের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী ছাড়া বাংলাদেশে এমন কোনো নেতা আর কেউ নাই, যে গরীব মানুষের দুঃখ বোঝে।’

অপর রিকশা চালক জসিম বলেন, ‘শান্তির জন্য যেই ব্যাডা একাত্তুরে অস্ত্র নিছিলো, হেই ব্যাডা আবার দ্যাশের মাইনষের শান্তির জন্য দেড় মাস ধইরা রাস্তায় পইরা রইছে। এইরহম নেতাই দরকার আমাগো দ্যাশে।’

এদিকে মতিঝিলের দলীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাথে অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করতে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে, পত্র-পত্রিকা ও বই পড়ে সময় কাটছে কাদের সিদ্দিকী।

এছাড়া পত্রিকায় কলাম লেখা, খাওয়া-দাওয়া, নামাজ, ঘুমানো সবকিছুই তিনি কর্মসূচিস্থলেই করছেন। মাঝে মধ্যে তিনি একটি মিনিবাস নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ছেন। নিজেই মিনিবাসের চালকের আসনে বসে অফিস ফেরত মানুষকে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।

এদিকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর অবস্থানস্থলে মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে খাবার নিয়ে আসছেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা-কর্মীরা দলের জন্য প্রতিনিয়ত অনুদান ও শান্তির দাবির প্রতি সংহতি স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। অবস্থান কর্মসূচির পাশেই প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত আবৃত্তি, বাউল গান, গণসংগীতের আসর চলে। এ সময় মাঝে মধ্যে কর্মীরা ‘আমাদের দাবি একটাই, সোনার বাংলায় শান্তি চাই’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

পুলিশি বাধা, নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, প্যান্ডেল, মঞ্চ ভেঙে দেয়ার পরও বঙ্গবীর ঘোষণা করেছেন দেশে শান্তি ফিরে না আসা পর্যন্ত অর্থাৎ অবরোধ প্রত্যাহার ও আলোচনায় না বসা পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে তিনি যাবেন না।

গত ২৮ জানুয়ারি থেকে বঙ্গবীরের অবস্থান কর্মসূচির শুরু করেন। এর পর থেকে অবস্থান কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন নানা পেশার মানুষ। এরমধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গবেষক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব, সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, কবি ও সাংবাদিক আল মুজাহিদী, সাযযাদ কাদির, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজে মহাসচিব এমএ আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাই সিকদার, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আমিনুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম-সম্পাদক মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী ফখরুল ইসলাম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ড্যাবের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেছেন। বিএনপির নেতা ও সাবেক সাংসদ আশরাফ উদ্দিন নিজান ও নাজিম উদ্দিন সংহতি প্রকাশ করতে এসে পুলিশের হাতে আটকও হয়েছেন।

শুরু থেকেই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা কর্মীরা পালাক্রমে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে টানা ৪৫ দিন ধরে বঙ্গবীরের পাশে সার্বক্ষণিক অবস্থান করছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদ আহমেদ, যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক হাবিবুন নবী সোহেল, ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রিফাতুল ইসলাম দীপসহ নেতা কমীরা। এছাড়াও কর্মসূচিতে অংশ নেয়াদের প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর ও নির্দেশনা দিচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার প্রমুখ।

১৬ thoughts on “ফুটপাথে কাদের সিদ্দিকীর দেড় মাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *