কর্মসূচিতে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল। চলমান আন্দোলনকে আরও কার্যকর ও জোরদার করার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অবরোধ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি হরতালের বিকল্প হিসেবে নতুন একটি কর্মসূচি প্রণয়নে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ নিয়ে কাজ করছেন জোটের থিংক ট্যাংক। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বিকল্প সে কর্মসূচির ঘোষণা। বিএনপিসহ জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। তবে কবে নাগাদ কর্মসূচিতে এ বৈচিত্র্য আসতে পারে তা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউই।
এদিকে ৬ই জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ও দফায় দফায় হরতালের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে ২ মাস পার করেছে চলমান আন্দোলন। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী জোটের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জনজীবণ একপ্রকার অচলই। প্রতিদিনই বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম-খুন ও গণগ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন বিরোধী জোটের নেতাকর্মীরা। দুর্নীতি মামলায় ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, কার্যালয় তল্লাশির অনুমতিসহ আইনগত নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার মুখেও অনঢ় অবস্থান ধরে রেখেছে বিরোধী জোট।
গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তার ঝুঁকি এবং ব্যক্তিগত অসুবিধা সহ্য করে দীর্ঘদিন ধরেই কার্যালয়ে অবস্থান করছেন ২০ দলের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। এমনকি নিজের সন্তানের মৃত্যুতেও কর্মসূচিতে ব্যত্যয় ঘটাননি তিনি।
অন্যদিকে সরকারও ধরে রেখেছে অনঢ় অবস্থান। সরকার ও বিরোধী জোটের এমন মুখোমুখি অবস্থানের কারণে প্রতিদিন বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে কূটনীতিকদের আহ্বান এবং কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সুশীলসমাজ। কূটনীতিক ও সুশীলসমাজের উদ্যোগের ক্ষেত্রে ২০ দল ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও পাত্তা পায়নি সরকারের তরফে। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনের কার্যকারিতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
তবে বিএনপির কয়েক নেতা জানান, দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন ধরে রাখাই প্রধান সাফল্য। সরকার যতই বলুক আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই, বাস্তবতা কিন্তু উল্টো। জনগণের সম্পৃক্ততা আছে বলেই নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও এত দিন পালিত হচ্ছে অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি। অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুললেও বিএনপি নেতাকর্মীরা বিষয়টি সেভাবে দেখছেন না। তারা বলছেন, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি দেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে। কিন্তু তার পরও কথা থাকে। জীবন-জীবিকা, চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে মানুষকে রাস্তায় বের হতে হয়। বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে ঘরবন্দি করতে চায় না। এজন্য প্রতি সপ্তাহে দুদিন হরতালমুক্ত রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বারবার। তাই হরতাল ঘোষণা করা হচ্ছে দুই দফায়। যে মুহূর্তে সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে, পর মুহূর্তেই যাতে আন্দোলনের একটি যৌক্তিক শিথিলতা আনতে পারে ২০ দল।
বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর একাধিক নেতা জানান, অবরোধ কর্মসূচি চলছে দুই মাসের বেশি সময় ধরে। দফায় দফায় পালিত হচ্ছে হরতাল। এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। অঙ্গ দলের নেতারা বলেন, এসব ঘটনায় সরকারের তরফে অব্যাহতভাবে দায় চাপানো হচ্ছে বিরোধী জোটের ওপর। দেশ-বিদেশে বিএনপির বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে নেতিবাচক প্রচারণা। অথচ এসব ঘটনায় দেশের একাধিক জায়গায় সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থকরা আটক হলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয়, আন্দোলনে মানুষের সম্পৃক্ততা দেখেই সরকার নেতিবাচক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।
তারা বলেন, অবরোধ ও হরতালকেন্দ্রিক চলমান আন্দোলনের বয়স দুই মাস পেরিয়ে গেলেও হতাশ নন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এর নেপথ্য কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের গ্রেপ্তার ঝুঁকি, নেতাকর্মীদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গ্রেপ্তার আতঙ্কের পরও কর্মসূচি পালনে নেতিবাচক কর্মকান্ডের প্রতি কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
নেতাকর্মীরা মনে করেন, আন্দোলন গতিপ্রকৃতি সঠিকপথে আছে বলেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
তবে জোটের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, দুই পক্ষ দৃশ্যমানভাবে অনঢ় অবস্থানে থাকলেও নিজেদের মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা করছে। বিষয়টি স্পষ্ট হয়, যখন আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্ব খালেদা জিয়া আপসহীন মনোভাব অটুট রেখেছেন এবং প্রতিবন্ধকতার মুখেও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির বাইরে হঠকারী পথে পা দিচ্ছেন না। অন্যদিকে বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তারে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও শেষ মুহূর্তে সরকার ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে। তারা বলেন, নেপথ্যে ক্ষীণ একটি আলোর রেখা দৃশ্যমান। সেটা স্পষ্ট হলেই হঠাৎ করে পাল্টে যাবে অনেক কিছু।
এদিকে সংলাপে রাজি না হলে সরকারের পতন ঘটাতে সম্ভাব্য অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে বিরোধী জোট নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। জোটে থাকা স্ব স্ব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা মহানগর, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন।
জানা গেছে- বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শিগগিরই একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি শেষ অনুরোধ জানাবেন। এতে কাজ না হলে সরকার পতনের এক দফা হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনে যেতে পারে ২০ দল। সে লক্ষ্যে ইতিপূর্বে তিনি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
Imran Ali liked this on Facebook.
Hafizur Rahman liked this on Facebook.
Mohammed Younus liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Jahid Abedin liked this on Facebook.
Färhåd Åhämêd Shöhåñ liked this on Facebook.
বিরক্তিকর ফেইসবুকার liked this on Facebook.