প্রবাসের গল্প ৫

স্বপ্ন আর লক্ষ্য এই দুই শব্দের সাথে পার্থক্য আছে। কোন কিছু প্রত্যাশা করা থেকে স্বপ্নের জন্ম হয় । যেমন আমার স্বপ্ন হলো আমি হাওয়াই যাবো। কিন্তু হাওয়াই যাবার মতো টাকা আমার কাছে নেই। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে যেহেতু টাকা লাগেনা তাই আমার মাথা ভর্তি স্বপ্ন কিন্তু আমার ম্যানিব্যগ শূন্য। আমার স্বপ্ন আমি অস্ট্রেলিয়া যাবো। কাঙ্গারুদের সাথে খেলা করবো। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যাবার টাকা নেই আমার। আমার স্বপ্ন আমি বৃটিশ কলোম্বিয়া যাবো, সেখানে যেয়ে একটা ফার্ম কিনবো, সেখানে নদী থাকবে, নৌকা থাকবে, আর আমার অনেক গরু, ছাগল, ঘোড়া থাকবে। কিন্তু আমার কাছে ফার্ম কেনার মত টাকা নেই। বাংলাদেশে যখন ছিলাম তখন আমার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের রেললাইনের ধারে কোন বস্তি থাকবেনা। সেখানে বহুতল ভবন হবে আর এইসব বস্তীর মানুষকে সেইসব ভবনে পুনঃর্বাসিত করা হবে। বাংলাদেশে অনেক ধরনের ইন্ডাস্ট্রি হবে বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক আর সেই সব ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জন্য অনেক লোকের দরকার হবে তখন এইসব বস্তিবাসীদের সেইসব কাজে নিয়োগ করবো। আমি যখন স্কুলে যেতাম তখন আমার বন্ধুরা সবাই রাস্তায় খেলা করতো। আমার অনেক হিংসা হতো। আমি কেনো পথের ধারে খেলা করতে পারছিনা। তাই আমি স্বপ্ন দেখতাম আমার বদলে ওরা সবাই স্কুলে যাক এবং স্কুলের নির্মম শিক্ষক শিক্ষিকার মুখ দেখে দিনের সাত আট ঘন্টা কাটিয়ে দিক। আমার স্বপ্ন গুলো এমন ছিল। এই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আমি লক্ষ্যও স্থির করে ফেলেছিলাম। আমি রাজনীতি করবো। আমি আইজীবি হবো। স্বপ্নের সাথে বাস্তবের কোন সম্পর্ক নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যলয় শেষ করার আগেই আমাকে জীবিকা নির্বাহ্ করার জন্য পরিশ্রম করতে হয়েছে। পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে আর স্বপ্ন পূরণ হয়না। সারাদিন কাজ করে রাতে আইন আর হিসাবের পড়ালেখা আর রান্নাবান্না তারপর স্বপ্ন দেখা বা স্বপ্ন পূরণের কোন সময় থাকেনা।

সেজন্য আমি স্বপ্নকে বিদায় দিয়েছি। আমার চোখে স্বপ্ন নেই। এখন আমি লক্ষ্য স্থির করি। লক্ষ্য স্থির করতে গেলে আমাকে দেখতে হবে এই লক্ষ্যে পৌছুতে গেলে আমার কি কি থাকা লাগবে?

আমি বেকার। আমার লক্ষ্য হলো “জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ খুঁজে বের করা”। কাজ পেতে গেলে আমাকে কি কি করতে হবে?

১০০% ইচ্ছা থাকতে হবে
প্রতিদিন কাজ খুজতে হবে
নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সাথে মিলে এমন সব কাজ খুঁজে বের করতে হবে
সেইসব কাজের জন্য আবেদন করতে হবে
ইন্টারভিউ এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে
নিয়োগকারীদের কনভিন্স করতে হবে যে এই কাজের জন্য আমার থেকে ভাল প্রার্থী আর নাই
কাজ পেলে সংসারের ঘানি টানতে হবে
ধার শোধ করতে হবে
খাইতে হবে, ঘুমাতে হবে, ফেসবুকিং করতে হবে, প্রতারককে গালি দিতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে, নিপীড়িত মানুষের পাশে থাকতে হবে।

এই হলো লক্ষ্য আর স্বপ্নের ভেতরে পার্থক্য।
যা হয়নি তা নিয়ে দুঃখ করিনা। কারণ আমি জানিনা যে যা হয়নি সেটা যদি হইতো তাহলে আমার জন্য ভাল হইত না মন্দ হইত। যা হয়নি যেহেতু তা হয়নি তাই সে সম্পর্কে আমর কোন ধারনা নাই। এমন হতে পারে যা হইনি তা ভালর জন্যই হয়নি। আল্লাহ্‌ যা করেন ভালর জন্য করেন। রিজিকের মালিক আল্লাহ্‌। জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, রিজিক সবই আল্লাহ্‌ স্থির করেন তবে আল্লাহ্‌ বলেছেন সব দেওয়া আছে তুমি নিজের শ্রমের মাধ্যমে, নিজের প্রচেস্টার মাধ্যমে, নিজের সৎ সাহস, ও সৎ ইচ্ছার মাধ্যমে তোমার জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা রিজিক খুঁজে নাও। আল্লাহ্‌র লেখা কেউ খন্ডাতে পারেনা। আল্লাহ্‌র উপরে বিশ্বাস যদি অটুট থাকে তাহলে স্বপ্ন নয় বাস্তবতার ভিত্তিতে লক্ষ্য স্থির করতে হবে আর সেই লক্ষ্যে পৌছুবার জন্য এগিয়ে যেতে হবে।

যা হয়নি তা নিয়ে দুঃখ করা ভুল। তা যদি হইত তাহলে হয়তো ক্ষতি হইত আর সেজন্যই তা হয়নি। আল্লাহ্‌ তার প্রিয় বান্দাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন আর সেজন্যই যা হয়নি তা হয়না।

৮ thoughts on “প্রবাসের গল্প ৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *