অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে

যখন আমার ছেলেকে পুলিশে গুলি করে হত্যা করে তখন অনেকেই বলে
“ এই মৃত্যু উচিৎ ছিল, এদের এইভাবেই গুলি করে মারা দরকার”।
যখন আমার ছেলেকে ছাত্রলীগের গুন্ডারা পিটিয়ে হত্যা করে বা গুলি করে হত্যা করে বা কুপিয়ে হত্যা করে তখন অনেকেই বলে আমার ছেলের এই মৃত্যু এভাবেই হওয়া উচিৎ। অনেকেই খুনীদের সমর্থন করেছে। অনেকেই খুনীদের উৎসাহিত করেছে। খুনী এখন ফ্রাঙ্কেন্সটাইনের দানব হয়ে গেছে। যারা এই খুনীর পৃষ্টপোষকতা করেছিল তাদের ছেলেকেও খুনী রেহায় দিচ্ছেনা। যারা বলেছিলঃ
“ আমার ছেলেকে এভাবেই কুপিয়ে হত্যা করা উচিৎ। এইভাবেই পিটিয়ে হত্যা করা উচিৎ। এভাবেই ১৭টা বুলেট ঢুকিয়ে দেওয়া উচিৎ আমার ছেলের দেহে।“ এখন তাদের একজনের ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে সবার চোখের সামনে। নিরপত্তা বাহিনী ও স্বার্থপর বইমেলার লম্পট কবি, সাহিত্যিকের ভীরের মাঝে হত্যা করা হয়েছে একজনকে।

কিন্তু কেউ তাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসেনি। ২১শের বইমেলাতে হুজুররা যায়না স্বার্থপর মধ্যবিত্তেরা যায় যারা কারু সাথে পাছে থাকেনা। যারা শুধু নিজেদের নিয়ে থাকে। যে যখন ক্ষমতায় আসে তাদের পদলেহন করে যারা দেশ বিক্রি করার সময়ে উৎসব করে। যারা ভারতের দালালী করে। যারা পাকিস্তানের দালালী করেছিল। যারা ইংরেজের দালালী করেছিল। যারা পুঁজিপতি ও তাদের ভৃত্যদের দালালি করে।

চট্রগ্রামের কিশোর আবিদকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পরে তার চোখ উপড়ানো লাশ পাওয়া যায়। তখন অনেকেই বলেছিল –ঠিক হয়েছে। শিবির করে ছেলে বাপ করে জামাতে ইসলামী। এদের এভাবেই হত্যা করা উচিৎ। আবিদের বাবা বলেছে আমার আরো ছেলে থাকলে তাদেরকেও কুরবানী করে দিতাম। আবিদের বাবা একজন আইনজীবি। তিনি ছেলের মৃত্যুতে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেনি।

এখন বিএনপীর নেতাকর্মীদের হত্যা করার মৌসুম। বিএনপীর একজন নেতা সালাউদ্দীন আহমেদ খুনীদের উৎসাহিত করে বলে – আরো খুন করো –মৃতদের আমরা পদক দেবো। আরো খুন করো। আরো খুন করো । প্রতিদিন হত্যা করো। প্রতিদিন যদি লাশ না দ্যাখে তাহলে অনেকেরই ভাত হজম হয়না। হত্যার বিরুদ্ধে কেউ সোচ্চার নয়। সবাই চায় – হত্যা হোক। সবাই গনতন্ত্র চায়। সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়। সবাই ভোট দিতে চায়। সবাই মন্ত্রী হতে চায়। কেউ হত্যা বন্ধ করতে চায়না। এইসব হত্যার বদলে যদি একজনের হাত থেকে ক্ষমতা ফসকে অন্যজনের হাতে লাগে – সেটাই চায় সবাই । কেউ বলে পদক দেবো কেউ বলে আরো ছেলে থাকলে মরার জন্য খুনির কাছে পাঠিয়ে দিতাম। কেউ বলেনা আজ থেকে আমরা সবাই মিলে একতাবদ্ধ হয়ে এই দেশে থেকে সব ধরনের মানুষ হত্যা বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো । কেউ বলে না যারা মানুষ হত্যা করবে তাদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলো।

যখন মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা হয় তখন সবাই মোবাইলে ছবি উঠাতে ব্যস্ত থাকে। সাংবাদিকরা ছবি উঠিয়ে প্রকাশ করে বাহবা নেবার জন্য ব্যস্ত থাকে।  খুনীকে খুন করার জন্য কেউ এগিয়ে যায়না। খুনের ছবি উঠিয়ে খুনীকে উৎসাহিত করে। পত্রিকাতে প্রকাশ করে। খুনী হাসে। দূরে বসে তামাশা করে। বাংলাদেশের সবাই মানুষ হত্যা পছন্দ করে। আওয়ামীলীগ ঘড়ানার ছেলে ত্বকীকে যখন আওয়ামীলীগের লোকেরাই হত্যা করে তখন মার্কসবাদীরা এই হত্যার প্রতিবাদ করে। মার্কসবাদীরা আবিদ হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি।

কেউ কেউ বা অনেকেই মৃত্যুকে অনেক পছন্দ করে। যেমন আমার ছেলের মৃত্যু অনেকের পছন্দ । ওরা বলেছিল আমার ছেলে রং মেখে শুয়ে আছে। আমার ছেলেকে আমার কাছে পৌছে দেওয়া হয়েছে। অথচ আমার ঘর শূন্য পড়ে আছে। আমার ছেলেরা ফিরে আসেনি।

আজ তোমার ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে তোমাদের সবার চোখের সামনে। খুনীরা দেখিয়ে দিয়েছে তোমরা যারা খুন হতে দেখে পালিয়ে যাও, তোমরা যারা খুন হতে দেখে খুনীকে বাধা দেবার চেস্টা করোনা তারা হয়তো জানো – খুনী কে। খুনী জানে তোমরা খুনীকে জানো ও ভয় পাও।

এই খুনী সেই একই খুনী ।
যে আবিদকে হত্যা করেছিল।
যে ত্বকীকে হত্যা করেছিল।
যে বাংলাদেশের অনেক অনেক অনেক তরুণ ও কিশোরকে প্রতিদিন হত্যা করছে।
যে কায়েসকে হত্যা করেছে।
যে জনিকে হত্যা করেছে।
যে শিমুলকে হত্যা করেছে।
এই খুনী সেই একই খুনী।

তোমরা এই খুনীকে চেনো। তোমরা এই খুনীকে দেখছো। এই খুনী বাংলাদেশে থাকে। এই খুনী ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মাঝেই থাকে। এই খুনী তোমাদের বাসার পাশে থাকে। এই খুনী কখনও পুলিশের উর্দী পরিধান করে। এই খুনী কখনও র‍্যাবের উর্দী পরিধান করে। এই খুনী কখনও ভারতের বিএসএফ এর উর্দী পরিধান করে। এইখুনী কখনও লুঙ্গি পরিধান করে আসে। এই খুনী প্রায়ই দামী দামী শাড়ি পরিধান করে। খুনীর শরীরে এত রক্ত লেগে থাকে যে শাড়ির দাম দেখা যায়না। রক্তের নীচে লুকিয়ে থাকে। সমস্ত শরীর থেকে জনগনের রক্ত ঝরে টুপটাপ করে। রিমঝিম করে রক্ত ঝরে। শো শো করে রক্ত ঝরে। তোমরা সবাই দেখো। কেউ কিছু বলো না। কারণ এই খুনী আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।

এখন তোমরা কাদছো কারণ এই খুনী এখন তোমাদের উঠোন পেড়িয়ে তোমাদের ঘরের চৌকাঠে এসে তোমাদের ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এখন কি বুঝতে পারছো কিছু? আমার ছেলেকে হত্যা করা হলে আমার কত কস্ট হয়েছিল – এখন কি বুঝতে পেরেছো?

আমার মনে হয়না।
কারণ খুন খুব স্বাভাবিক ঘটনা তোমাদের কাছে। যারা ভীরের মধ্য দাঁড়িয়ে খুন হতে দেখতে পারে তাদের সাথে খুনীর কি কোন পার্থক্য আছে?
খুন করা আর খুন হতে দেওয়া আর খুন হলে চুপচাপ যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া – সব কিছুই খুনীদের সাহায্য করার জন্য করা।

এখন কুমীরের চোখে জল। এখন ধর্মের উপরে চলছে নিপীড়ন। ধর্ম বেচারা সব সময়ই সব দায় দায়িত্বের বোঝা বহন করে। যে খুন হয়েছে সেও ধর্মকে নিয়ে অশ্লীল কথা লিখত ও বলত আর যে খুন করেছে সে ধর্মকে হত্যা করেই খুনী হতে পেরেছে।

ফেসবুকে আমি অনেক কাপুরুষকে চিনি যারা ধর্মের কথা বলে । হজরত আলী (রাঃ) সম্পর্কে কথা বলে। এইসব কাপুরুষেরা আর যারা ধর্মের বিরুদ্ধে ব্লগ লেখে তারা – সবাই এক। আজ যারা এই মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে ধর্মকে দোষারোপ করছে তারাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই হত্যা হতে দেখেছে । তারা বাঁধা দেয়নি। কারণ যদি এই হত্যা হতে বাঁধা দিতো তাহলে তো সে সাহসী হয়ে যেতো । যে সাহসী সে ধর্মকে ভালবাসে বলেই সাহসী। যে সাহসী সে ধর্মকে মেনে চলে বলেই সাহসী। যে ভীতু সে খুনীকে ভয় পায় সে আল্লাহ্‌কে ভয় পায়না। প্রথমে সে খুন হতে দেয় পরে ধর্মকে গালি দেয় । অথচ ধর্ম বইমেলাতে এসে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেনি। একজন কাপুরুষ হত্যা করেছে। চারিপাশে দাঁড়িয়ে অনেক কাপুরুষ তা দেখেছে। এখন সেই সব দর্শক কাপুরুষেরাই ধর্মকে গালি দিচ্ছে কাপুরুষের মত কারণ খুনীকে ওরা ভয় পায়। খুনীকে গালি দিতে ওরা ভয় পায়।

৫ thoughts on “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *