ঢাকা: বাংলাদেশের চলমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপ অথবা গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান দান প্রেদা। নিজের লেখা এক নিবন্ধে তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসে। ক্রিস্টিয়ান প্রেদা এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন। আশঙ্কা প্রকাশের আগে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেছেন।
প্রেদা লিখেছেন, বাংলাদেশে তিন দিনের সফরে গিয়ে আমরা ২০টির বেশি বৈঠক করি। রাজনৈতিক দলের নেতা, ট্রেড ইউনিয়ন, উদ্যোক্তা, এনজিও ও মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়। ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আমরা বৈঠক করি।
পোশাক খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশটিতে ৪ হাজারের বেশি কারখানা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ডগুলো তাদের পোশাক কিনছে বাংলাদেশ থেকে। এসব পোশাক কারখানায় ১২-১৩ বছর বয়সী নারী শ্রমিক রয়েছে যারা দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা কাজ করছে।
প্রেদা তার নিবন্ধে লিখেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। বৃহৎ ভারত ও পাকিস্তান দেশটির প্রতিবেশী। এই দুই দেশ ছাড়াও চীন, জাপান যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে থাকে।
তবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধের কারণে দেশটির স্থিতিশীলতা আজ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। দ্বিমেরুকরণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান দেশটিতে। দুই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ, অপরটি বিএনপি। দল দু’টির মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। এক দল আরেক দলকে সহ্য করতে পারে না। এই বিরোধ দেশটিতে অপরাধ, সহিংসতা ও উগ্রপন্থাকে উসকে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সোশালিস্ট ও ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। বিএনপি একটি প্রো বিজনেস পার্টি। দুই দলই ভারতমুখি। বিএনপির জন্ম সেনাবাহিনী থেকে। জেনারেল জিয়াউর রহমান দলটির প্রতিষ্ঠাতা। রাজনীতির এই মেরুকরণের ফলে দুই বড় রাজনৈতিক দলের রয়েছে নিজস্ব কর্মীবাহিনী। প্রত্যেক দলের ৫০ লাখের বেশি কর্মী-সমর্থক রয়েছে। বিপুলসংখ্যক এই কর্মী সমর্থক দেশব্যাপী বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা সাত বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। সংসদের দুই চারটি অধিবেশনে যোগ দেয়া ছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বিএনপি সংসদ বয়কট করে। তবে আইনগত অধিকার থেকেই ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি।
এর আগে নির্বাচন হতো তত্ত্বাবধায়কের অধীনে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থার ইতি ঘটায়। সরকারের এই পদক্ষেপ বিরোধী মহলে উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। গত দুই মাস ধরে বলতে গেলে তিনি তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বন্দী রয়েছেন। আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তার বিরোধীর (শেখ হাসিনা) সমালোচনা করেন। এর অবশ্য সত্যতাও রয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ঢাকার রাজনৈতিক অভিধায় এটি একটি পরিচিত শব্দ।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে। বিএনপি নতুন নির্বাচন চায়। আওয়ামী লীগ বলছে তারা ক্ষমতার ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে। বিএনপির অভিযোগ আওয়ামী লীগ বৈধ উপায়ে ক্ষমতায় আসেনি। ২০১৪ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ২৩২ আসনে জয়ী হয়েছে। তবে এর ১৫৪টি আসনে এমপিরা জয়ী হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এসব আসনে আওয়ামী লীগ একজন করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। এমন ঘটনা রোমানিয়ায় ঘটেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। সেখানে আইন করে একজন করে প্রার্থী মনোনয়ের কথা বলা হয়েছিল। বাংলাদেশে সেই ব্যবস্থা ফিরে আসায় রাজনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী। সাম্প্রতিক বছরগুলো বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে দলটির। দলটির উদ্দেশ্য খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা, (মিশরের) মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো। শেখ হাসিনা ২০১০ সালে একাত্তরে মানবতাবিরোধীদের অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের এই ট্রাইব্যুনালে সাজা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এখনো মৃত্যুদণ্ডের বিধান বলবৎ যা দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সমর্থন করে, একটি জল্লাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার।
প্রকৃতপক্ষে শুধু মেরুকরণ এবং চরম রাজনৈতিক উত্তেজনাই নয়, রাজনৈতিক বিরোধের এই রেশ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সাংবাদিক ও চিকিৎসক সংগঠনের মতো পেশাজীবীরাও আজ দুই ভাগে বিভক্ত। এমন পরিস্থিতিতে কী ঘটতে পারে? সেনা হস্তক্ষেপ অথবা বিপরীতপক্ষে গৃহযুদ্ধ- এই আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর বেশ সুনাম রয়েছে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। খুব কম লোকেই জানে যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি সেনা পাঠানো হয়ে থাকে।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ থেকে আরো ৪ হাজার সেনা পাঠানোর অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা সরকারকে (যদিও প্রেদা লিখেছেন খালেদা জিয়ার নাম)। কিন্তু ওই সময় কিছু কিছু এনজিও রাজনৈতিক সঙ্কটকে সামনে নিয়ে আসে এবং বান কি মুনকে অনুরোধ জানায় তিনি যেন ওই সেনা সরবরাহের বিনিময়ে বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানান। তারপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে নতুন করে নির্বাচন দাবি করে আসছে।
প্রেদা লিখেছেন, ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশে রানাপ্লাজা ভবন ধসে ১১০০ পোশাক শ্রমিক নিহত হয়। আহত হয় আরো আড়াই হাজার। রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডি বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ৩ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। ৩০টি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এই অর্থ সরবরাহ করার কথা। এখন পর্যন্ত সব অর্থ সংগ্রহ হয়নি। ওই ঘটনার পর পোশাক কারখানার নিরাপত্তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে। বৃহত্তর কারখানা ও পোশাক শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে এ ব্যাপারে দুটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। দেশটির প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক পোশাক খাতে কাজ করে থাকে।
বাল্যবিয়ে এবং শিশুশ্রম নিয়েও কথা বলেছেন প্রেদা। এই দুই সমস্যা বাংলাদেশে এখনো রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে এদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো বলে উল্লেখ করেছেন।
Mohammad Jabed liked this on Facebook.
Mahbub Samol liked this on Facebook.
Amir Khan Amir liked this on Facebook.
Mizan Feni liked this on Facebook.
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.
Ronok Uddin Khan liked this on Facebook.
Md Fahad Abdullah liked this on Facebook.
সিদ্দীকুর রহমান liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Kajol Khan Anees liked this on Facebook.
Anwar Bhuiyan liked this on Facebook.
Delware Hussain Ahad liked this on Facebook.
Shah Jalal liked this on Facebook.
Jahid Abedin liked this on Facebook.
Sumon Didar liked this on Facebook.