জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশ

জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের নিয়মিত অধিবেশন আগামী মাসে জেনেভাতে শুরু হচ্ছে। অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৩ থেকে ৭ মার্চ সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করবেন। এবারের অধিবেশনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার ইস্যুতে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে বাংলাদেশ সরকার।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং সে বিষয়ে সংলাপের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের লাগাতার অবরোধ ও দফায় দফায় হরতালের কারণে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও বেড়ে যায়। গত মঙ্গলবার এক দিনেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ছয়জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের আসন্ন অধিবেশনে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে থেকে সরকার এসব বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতি দেয়া হয়। জেনেভা থেকে দেয়া এ বিবৃতিতে মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সংযম প্রদর্শন এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিরোধ মিটমাটে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই সঙ্ঘাত বাড়ছে। বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক সঙ্ঘাতে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তা নিরপে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড সরকার বা সরকারের বাইরে যাদের দ্বারাই সংঘটিত হোক না কেন বাংলাদেশ কর্তৃপ অবিলম্বে সেগুলোর নিরপে ও কার্যকর তদন্তের উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা জানান, মানবাধিকার কাউন্সিলের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ারদের কাছ থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। এ ছাড়া মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশন চলাকালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও প্রশ্ন উত্থাপন করে। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সাধারণত এড়িয়ে যাওয়া হয়। কেননা উত্তর দিলে আবারো সম্পূরক প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের আসন্ন অধিবেশনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার কোনো পূর্বনির্ধারিত এজেন্ডা নেই। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশে ইরান, উত্তর কোরিয়া ও মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এতে নিয়মিত আলোচনা হয়। স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ারদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে যেসব প্রশ্ন এসেছে, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলোর বক্তব্য নিয়ে তার উত্তর দেয়া হয়েছে। আর কাউন্সিল অধিবেশন চলাকালে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন হলে সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে জেনেভায় অবস্থিত জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সহিংসতা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে বিধিবহির্ভূতভাবে বিরোধী নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার বা আটক না করে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নেয়া সব পদক্ষেপ যাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, অবাধ চলাফেরা এবং মতপ্রকাশের অধিকারসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বিধিবিধানের আওতায় থাকে সরকার তা নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করে চিঠিতে বলা হয়েছে, সহিংস চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা অবরোধ ও হরতাল সাধারণ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইনের আওতাতেই সরকার জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, বিশেষ করে বেসামরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইনের (আইসিসিপিআর) ১৯ দশমিক ৩, ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদের আওতায় সরকার তার ক্ষমতা ব্যবহারের বিষয়ে সচেতন রয়েছে।

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *