এটি মানুষের তৈরি হাত বটে, তবে নিছক জড় কোনো বস্তু নয়। মানুষের মন যেমন তার রক্তমাংসের হাত নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি এই বায়োনিক হাতের ওপরও থাকবে মনের নিয়ন্ত্রণ। মননিয়ন্ত্রিত এমন বায়োনিক হাত উদ্ভাবনের দাবি করেছেন একদল ইউরোপীয় শল্যচিকিৎসক ও প্রকৌশলী।
আজ বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রক্তমাংসের প্রতিস্থাপিত অঙ্গের মতোই ওই হাত কাজ করতে সক্ষম। এ নিয়ে বিখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট-এ আজ একটি গবেষণাবিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
গাড়ি ও আরোহণজনিত দুর্ঘটনায় হাত হারানো তিন অস্ট্রেলীয় বিশেষ কৌশলের ওই বায়োনিক হাতের সুবিধাভোগী। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের মে মাসের মধ্যে ওই তিন রোগীর শরীরে বায়োনিক হাত যুক্ত করা হয়।
ল্যানসেট-এর নিবন্ধে দাবি করা হয়, দুর্ঘটনার পর যুক্ত করা বায়োনিক হাত দিয়ে ওই তিনজন তাঁদের বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজ করতে সক্ষম হন। এর মধ্যে রয়েছে—হাতে বল নেওয়া, জগ দিয়ে পানি ঢালা, চাবি ব্যবহার, ছুরি দিয়ে খাবার কাটা, দুই হাত ব্যবহার করে বোতাম লাগানো ইত্যাদি।
প্রযুক্তির উদ্ভাবক মেডিকেল ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনার অস্কার আজমান দাবি করেন, দাতাদের কাছ থেকে নিয়ে প্রতিস্থাপনের চেয়ে এই বায়োনিক হাত কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বায়োনিক হাতে অনুভূতি নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শল্যচিকিৎসক অস্কারের ভাষ্য, ‘এটা রক্তমাংস নয়। এটা শুধুই প্লাস্টিক ও প্রযুক্তি। তবে কাজের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে একটি কৃত্রিম হাত প্রতিস্থাপিত হাতের মতো কাজ করতে সক্ষম।’
নতুন এই বায়োনিক হাত এক হাত হারানো রোগীদের জন্য বিশেষভাবে সুফল দেবে।
নিবন্ধে জানানো হয়, উদ্ভাবক দলের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো—সেন্সরযুক্ত রোবটিক হাতে স্নায়বিক সংকেত উদ্দীপিত করা।
অস্কারের দাবি, এ ধরনের অঙ্গহানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শল্যপদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ ও অকার্যকর এবং হাতের কার্যক্রমও হয় দুর্বল।
নতুন এই কৃত্রিম হাতের দাম ১৭ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া অস্ত্রোপচার ও পুনর্বাসনে প্রায় একই খরচ পড়ে।
রোগীর পর্যাপ্ত স্নায়ু ও মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা এবং পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে এই হাত সংযোজন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা।