সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত: সাদেক হোসেন খোকা

মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে কথোপকথনকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক আলাপ দাবি করে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, এই আলাপকে ঘিরে পলায়নপর অবৈধ সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের নির্লজ্জ অপচেষ্টায় লিপ্ত। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই মিথ্যা অভিযোগের ধুয়া তুলে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সন্ত্রাসী কায়দায় তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে খোকা বলেন, কিংবদন্তির ছাত্রনেতা, ডাকসুর সাবেক ভিপি, চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামের অন্যতম অগ্রসৈনিক এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে আমার একটি টেলিফোন আলাপকে ঘিরে বর্তমান পলায়নপর অবৈধ সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের এক নির্লজ্জ অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে । সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে সরকার সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগের ধুয়া তুলে জনাব মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সন্ত্রাসী কায়দায় তুলে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞাত স্থানে বন্দী করে রেখেছে । আমি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই এবং একই সঙ্গে এ ধরনের ঘৃণ্য পথ পরিহার করে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাই ।
প্রকৃতপক্ষে তীব্র গণরোষের ভয়ে আতংকিত এই সরকার স্বউদ্যোগে নানা রকম বায়বীয় অভিযোগ সৃষ্টি করে চলমান আন্দোলন-লড়াইকে দমন তথা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথ বেছে নিয়েছে । তাই আমরা দেখতে পাই যে দেশবাসীর স্বতস্ফুর্ত ও শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনকে তথাকথিত জঙ্গিরূপে চিত্রিত করতে একদিকে সরকারের নিয়জিত ক্যাডার-সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী যানবাহনে পেট্রল বোমা হামলা চালিয়ে নারী ও শিসুসহ নিরপরাধ জনসাধারনকে হত্যা করছে । অন্যদিকে কথিত নাশকতা দমনের নামে বিরোধী পক্ষের নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে নজিরবিহীন পৈশাচিক কায়দায় হত্যার জন্য শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহের দলবাজ সদস্যদের অবাধ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী এবং বাহিনী-প্রধানদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে মৌখিক দায়মুক্তির প্রতিশ্রুতি পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় দলান্ধ সদস্য দেশজুড়ে বর্বরোচিত নরহত্যায় মেতে উঠেছে ।
আমি স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, মাহমুদুর রহমান মান্না একজন অত্যন্ত খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব এবং সুপরিচিত রাজনীতিক । তাঁর সাথে আমার সাম্প্রতিক টেলিফোন কথোপকথনের বিষয়টি নিতান্তই দু’জন রাজনীতিকের মধ্যে চলমান আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও কর্মকৌশল নিয়ে অতি স্বাভাবিক আলোচনা । এখানে সরকারের প্রচার-সন্ত্রাসীদের ভাষায় ` লাশ ফেলে দেওয়া’র কোনো কথাই হয়নি ।
বরং আমাদের আলোচনায় খুব পরিষ্কারভাবেই যে বিষয়টি এসেছে, তা হলো বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং এই জাতির সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার পীঠস্থান । কিন্তু ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বিগত কয়েক বছরে ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণরূপে একটি দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিনত করা হয়েছে । এখানে ভিন্নমতের চর্চাকে আজকাল রীতিমত অপরাধ হিসাবে গন্য করা হয়। টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, বটতলা কিংবা কোনো হলেও ভিন্নমত চর্চার কোনো সুযোগ নেই । বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় সরকার সমর্থিতরা বিরোধীদল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কোনো সদস্যকেই সেখানে দাঁড়াতে দিচ্ছে না । শুধুমাত্র ভিন্নমতের সমর্থক হওয়ার কারণে অনেকের ছাত্রত্ব বাতিলের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে । এহেন পরিস্থিতিতে চলমান গণআন্দোলনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনায় সম্প্রসারিত করার যৌক্তিক প্রসঙ্গটিই আমার সঙ্গে আলোচনায় উত্থাপন করেন মাহমুদুর রহমান মান্না । এ কথা কে না জানে যে, বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে দেশে প্রতিদিন কত নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে ? সেখানে সাম্প্রতিককালে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষিত দুর্গে পরিনত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করতে গেলে কি ধরনের মুল্য দিতে হতে পারে, আমার সাথে আলোচনায় মান্না কেবলমাত্র সেই কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন । কারণ বর্তমান সরকারের খুনের নেশা তাঁর অজানা নয় । রাজনৈতিক প্রয়োজনে শুধু মাহমুদুর রহমান মান্না নয়, নিজ দলের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন দলের অনেক নেতা, নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের অনেকের সঙ্গেই রাজনৈতিক বিষয়ে আমার নিয়মিত আলোচনা হয়। তাদের সাথে রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে কিছু শেখা বা জানার আকাঙ্খা থেকেও আমি কথা বলি । কিন্তু মান্না সাহেবের সাথে এই অতি সাধারণ আলোচনায় সরকারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে ।
দেশবাসীর খুব ভালো করেই জানা আছে যে, আজকের বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলের নেত্রী থাকা অবস্থায় প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ” একটা লাশের বদলে দশটা লাশ চাই ” । আজকে তাঁর দলের লোকেরাই একটি বানোয়াট অভিযোগ তুলে মাহমুদুর রহমান মান্নার মত একজন পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন রাজনীতিককে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকারে পরিনত করতে উদ্যত হয়েছে । এসবের মাধ্যমে পতনোন্মুখ এই সন্ত্রাসী সরকার কার্যত জনগনের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা এবং বিরোধী নেতা-কর্মীদের মনে ভীতি ছড়ানোর অপকৌশল নিয়েছে । কিন্তু তাদের সকল অপকৌশল জনতার দুর্বার আন্দোলনের জোয়ারে খড়কুটোর মতো ভেসে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
আমি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সকল রাজবন্দিকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখলকারীর ভুমিকা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠির প্রতি আহ্বান জানাই ।

 

নাসিম/প্রবাসনিউজ২৪.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *