প্রবাসের গল্প ১

10933279_10204936661235281_1179176813_nপ্রবাসে থাকি অথচ প্রবাস নিউজে প্রবাস সম্পর্কে কিছু লেখা হয়না। দেশে বা প্রবাসে সবখানেই গল্প আছে। সবখানেই আকাশ আছে । সবখানেই প্রকৃতি রুপ বদল করে। সাড়া বিশ্বের সব মানুষের মধ্য শ্রেনীভেদ আছে। আর সেই শ্রেনীভেদের কারণে মানুষ নিজেদেরকে বিভিন্ন শ্রেনীতে সীমাবদ্ধ করে রাখে। কানাডাতে আসার পরে আমি বাংলাদেশীদের সাথে তেমন মিশিনি ফলে বাংলাদেশীদের অভ্যাস বিশেষ করে মিথ্যা বলার অভ্যাস যা আছে সেটা ভুলে গেছিলাম। বাংলাদেশের সমাজে তিন চারটা শ্রেনী আছে । সেটা ভুলিনি। বাংলাদেশ থেকে যারা পয়েন্টের মাধ্যমে যোগ্যতা অনুযায়ী ইমিগ্রেশন নিয়ে কানাডা এসেছে তারা সবাই প্রফেসনাল। এখন আর সেভাবে কানাডা আসা যায়না। এইসব প্রফেসনাল বাংলাদেশীরা কেউ সরাসরি বাংলাদেশ থেকে এসেছে কেউ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে। বাংলাদেশের তিন চারটি শ্রেনী মধ্যে এরা উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষজন। কেউ কেউ উচ্চবিত্তদের ঘরজামাই হিসাবে বা উচ্চবিত্ত পরিবারে বিয়ে করে নিজেদের চেহারা ও ভাগ্য বদল করে এখানে এসেছে। এদের ভেতরে যারা ইঞ্জিনিয়ার তারা আবার অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া আর কারু সাথে তেমন মেশেনা। এদের কথা বলার স্টাইল আলাদা। এদের চালচলন চাপাবাজী সবই আলাদা। বাংলাদেশে এই তিন চারটি শ্রেনীর ভেতরে আছে ধনী (যারা মূলত মানুষের টাকা লুট করে ধনী হয়েছে বা দুর্নীতি করে ধনী হয়েছে বা যেমন করেই হোক তাদের এই ধনী হবার পেছনে সততা ছিল না কারণ সৎ মানুষ ধনী হতে পারেনা বলেই যুক্তিযুক্তভাবে আমি বিশ্বাস করি।

উচ্চবিত্ত একজন ইঞ্জিয়ার কানাডা আসার পরে মনে করে যে কানাডার সরকার তাদের বাসাতে এসে তাদের চাকুরী দিয়ে যাবে। বাংলাদেশে যেমন একজন আমলাকে তার বাসাতে চাল, ডাল, তেল, মাছ সরবরাহ করা হয় ঠিক তেমনি আমলার ইঞ্জিয়ার পোলা বা মাইয়া যখন কানাডা আসে তখন প্রত্যাশা করে যে বাংলাদেশের মতই কানাডাতে তাদের বাসায় কানাডিয়ান সরকার চাল, ডাইল, মাছ ইত্যাদি নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু হয়না। ফলে এরা এত বড় বড় বুয়েট পাশ ইঞ্জিনিয়ার ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে বাধ্য হয়। আমার বাসার কাছেই একটা ফ্যাক্টরী আছে। মাঝে মাঝে বাস স্টপে বাংলাদেশীদের দেখা যায়। ওরা সবাই সেলোয়ার কামিজ পরিধান করে কাজে আসে। এত বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার হলেও ওদের চেহারাতে কোন গ্লামার নাই। ফকিন্নির মতো দেখতে। কিন্তু এইসব ফকিন্নিরা সবার সাথে কথা বলেনা। অনেক নাক উঁচু ওদের। ওরা ফ্যাক্টরীতে কাজ করলেও বাংলাদেশে ওদের সবাই উচ্চবিত্ত বলে অনেক সন্মান করে। বাংলাদেশে ওরা কাজের বেটিদের মারধোর করতে পারে কিন্তু এখানে নিজেরাই কাজের বেটির মত থাকে। এই অবস্থার উত্তরণের পথে বেছে নিয়ে অনেকেই এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কানাডিয়ান ডিগ্রী নিয়ে যার যার পেশাতে ফিরে কানাডাতে বড় বড় বাড়ি, গাড়ী কিনেছে এবং কানাডিয়ান ধনী হিসাবে ওরা অন্যান্য দরিদ্র প্রবাসী বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখে।

আরো একটা কারণে ওরা দুরত্ব বজায় রাখে । সেটা হলো প্রতিটি প্রবাসী বাংলাদেশীর মন মানসিকতা অনেক ক্ষুদ্র। এত বড় দেশে এসেও এখনও ওরা কুয়ার ব্যঙ্গ । একটা নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতরে নিজেদেরকে আটকে রাখে।  অনেক বড় বড় ইঞ্জিনিয়াররা ম্যাকডোনাল্ডস এ বা কফি সপে কাজ করে। এইভাবে ওরা অনেক কস্ট করেছে কিন্তু ওদের ছেলেমেয়েরা এখন কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তার ইঞ্জিয়ার হিসাবে পাশ করে বেরুচ্ছে এবং বাংলাদেশের মতই ওরা উচ্চ শ্রেনীতেই নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে।

৫ thoughts on “প্রবাসের গল্প ১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *