একুশে ফেব্রুয়ারী একটি ব্যক্তিগত উৎযাপন

উৎযাপন নির্ভর জাতি আজ বাংলাদেশে ২১শে ফেব্রুয়ারী, বাংলা ভাষা দিবস পালন করবে। এই দিনে কি হয়েছিল? আমি জানিনা। কে কে জানে তাও জানিনা। সালাম, বরকত, রফিক, এরা সবাই রং মেখে শুয়ে ছিল। তাহলে কি ২১শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের হোলী খেলার দিন? বাংলাদেশের হোলি খেলার দিন প্রতিদিন। প্রতিদিন বাংলাদেশীদের হত্যা করা হচ্ছে। নানা নামে । নানা কারণে। তাহলে একদিন ২১শে ফ্রেব্রুয়ারী পালন করে কি লাভ? লাভ আছে।

এই দিনটির সাথে অনেক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত রয়েছে। টিভি ব্যক্তিত্বরা এই দিনে বিভিন্ন টেলিভিশন শো করে টাকা পাবে। ব্যবসায়ীরা এই দিনে বিভিন্ন রকমের সাদা কালো পোষাক বিক্রি করে মুনাফা করবে। আর ফুলওয়ালাদের কথা তো বলতেই ভুলে গেলাম। বাংলাদেশে এখন আর পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ধনে পাতা উৎপাদিত হয়না। এইসব সবজী উৎপাদনের ক্ষেতে এখন ফুলের চাষ করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের উৎযাপন চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে কৃষকেরা ঠিক করেছে ওরা ফুল উৎপাদন করবে। যা উৎপাদন করলে মুনাফা বেশী সেটাই উৎপাদন করা উচিৎ। প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশে পেয়াজ, রসুন, আদা, ধনে পাতা সরবরাহ করছে।ভারতের পন্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশীরা শুধু উৎযাপন নির্ভর জাতীই নয় – ভারতের পন্য নির্ভর জাতীও বটে।

যাই হোক অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে বই প্রকাশনা উৎসব। এই দিনে বইমেলাতে নানা ধরনের লম্পট কবি, লেখক, সাহিত্যিকরা তাদের প্রকাশিত বই হাতে করে কনুই প্রতিবেশী লেখিকার স্তনে ছুইয়ে বিভিন্ন স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবে। কোন অর্থ থাকুক আর না থাকুক অনেক কবিতার বই, উপন্যাস, ইত্যাদি প্রকাশিত হবে।  সেখানে নানা ধরনের কান্নাকাটি থাকবে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের জন্য। শহীদ শব্দটা সাহদাৎ শব্দ থেকে এসেছে। একটি আরবী শব্দ। ২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল ইংরেজী কালেন্ডারের দিন । বাংলা ভাষা দিবস পালন করতে যেয়ে কিছু আরবী কিছু ইংরেজী দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া আর কি!! বাংলা একাডেমী (ইংরেজী শব্দ) এই ইংরেজী ক্যালেন্ডারের দিনে বিভিন্ন লম্পটদের পদক দেওয়া হবে। যারা বিভিন্ন মানুষকে রং মাখিয়েছে বা রং মাখাতে সাহায্য করেছে তাদের এই পদক দেওয়া হবে।

আজ বাংলাদেশে ২১শে ফেব্রুয়ারী। ১৯৫২ সালে আমার জন্ম হয়নি । তাই আমি জানিনা সেদিন কি হয়েছিল। সেজন্য আমি আজকের অনলাইন পত্রিকা থেকে বুঝে নেবো আসলে কেনো সেদিন সালাম, রফিক, বরকত রং মেখে শুয়েছিল। আজকের অনলাইন পত্রিকা থেকে আমি পড়বো ২০১৫ সালের জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসে কতজন বাংলাদেশীকে তথাকথিত স্বাধীন বাংলাদেশে রং মাখা অবস্থায় পাওয়া গেছে।

দু’দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গতকাল শুক্রবার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাই সিকিউরিটি কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন দেয়ার ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় দু’দিনের রিমান্ড শেষে অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গাজীপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। গাজীপুর পুলিশ লাইনের সামনে গত ৪ ফেব্রুয়ারি দুর্বৃত্তরা একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে আহত হওয়ার ঘটনায় সিটি মেয়রসহ ৩৯ জনকে আসামি করে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। খুব শিঘ্রই ওদেরকে রং মাখা অবস্থায় রাস্তায় শুয়ে থাকতে বা সাঁতার কাটতে যেয়ে ডুবে যাবার পরে ফুলে ফেঁপে পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যাবে।

শিবগঞ্জের শাহাবাজপুর ইউনিয়নাধীন ধোবড়া বাজারের পাশে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গতকাল শুক্রবার কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, উপজেলার পারদিলালপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ ওরফে আ. রহমান এডুকে (৪৫) ধোবড়া বাজার থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাদিমুল ইসলাম দাবি করেন, নিহত আবুল কালাম আজাদ নাশকতা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের তথ্য পুলিশকে জানানোর কারণে জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা এডুকে রং মাখিয়ে রাস্তায় শুইয়ে রাখে।

ঠিক এক মাস আগে ২১শে জানুয়ারীতে খিলগাঁও এর নুরুজ্জামান জনি(৩৫)কে রং মাখিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়। পুলিশে জনির শরীরে রং মাখায় অথচ পুলিশের শরিরে কোন রং এর ফোটা পাওয়া যায়নি। এর ঠিক এক সপ্তাহ আগে নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইমরুল কায়েসকে পুলিশ রং মাখিয়ে শুইয়ে দেয় । পুলিশের উর্দিতে রঙ্গের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়না। ২৬শে জানুয়ারি, ২০১৫ রামপুরা এলাকাতে দুইজন যুবককে রং মেখে শুইয়ে দেওয়া হয়। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। ২৮শে জানুয়ারী, ২০১৫ সাতক্ষীরার বেলকাটি গ্রামের সর্দার মাহাবুর (৩০)কে পুলিশ রং মাখিয়ে শুইয়ে দেয়। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিভাগের পাঁচ জন ছাত্রদেরকে (যারা শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে থাকত ) শিবিরের কর্মী সন্দেহ করে বেধরক পিটিয়ে রং মাখানো হয়। তাদের নাম ইকরামুল হক, আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। আবু তালেব, ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বদরুল আলম এবং ইয়াসিন আরাফাত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থবর্ষের ছাত্র । জানা যায়, বিকালে শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদেরকে হলের হলের গেস্ট রুমে নিয়ে এসে মারধর করে। পরে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। পুলিশের হেফাজতে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এএম আমজাদ জানান, ছাত্রলীগের নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তারা শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত আছে বলে স্বীকার করেছে। বর্তমানে এইসব ছেলেরা থানাতে আটক অবস্থায় আছে। পুলিশ এদের বাসাতে যাবে তারপর এদের মুক্তির বিনিময়ে মুক্তিপণ দাবী করবে। দাবী অনুযায়ী যারা টাকা দিতে পারবেনা তাদেরকে রং মাখিয়ে শুইয়ে দেওয়া হবে।

সালাম,বরকত,রফিক,জব্বার ওদেরকে রং মাখিয়ে শুইয়ে দেবার আগে পাকিস্তানী পুলিশ ওদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবী করেছিল কিনা জানিনা। তবে যদি করে থাকে তাহলে নিশ্চয় ওদের পরিবার পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারেনি দেখেই ওদেরকে গুলি করে রং মাখিয়ে রাস্তায় শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানি পুলিশকে ধন্যবাদ।  সেদিন যদি ওদের রং মাখিয়ে শুইয়ে না দিতো তাহলে ১৯৫৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভাষা দিবসে শহীদদের নামে মানুষেরা ব্যবসা কিভাবে করতো ?

ভাষা আন্দোলনের উৎসব উৎযাপনে চাকমারাও বসে নেই । দশ ঘন্টা আগেই ওরা রং খেলা করেছে।  আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম কমল চাকমা (২৭)। স্থানীয় একটি সূত্র দাবি করেছে নিহত কমল চাকমা উপিডিএফ কর্মী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ভোরে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বুলুবুনিয়া সরাইয় নামক স্থানে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর মধ্যে বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা চলা এই বন্ধুক যুদ্ধে একজন নিহত হয়েছে ।

১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ – সাতক্ষীরা থেকে শহিদুল ইসলাম (৩২) কে ধরে নিয়ে যেয়ে পুলিশে রং মাখিয়ে শুইয়ে দেয়। এইদিনেও পুলিশের উর্দিতে কোন রঙ্গের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ২০১৩-২০১৫ চট্রগ্রাম ও যশোরেই বেশীর ভাগ ছেলেদের রং মাখিয়ে ছেলেদের শুইয়ে দেওয়া হচ্ছে।

২০১৩ সালের মে মাসের ৫-৬ তারিখে রং খেলার সব চাইতে বড় উৎসবটি উৎযাপিত হয় ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা শাপলা চত্বরের চারিপাশে। এইখানে ৪৫ মিনিটের রং খেলা হয় । রং খেলা শেষে আনুমানিক দশ হাজার আলেমকে যার যার বাসাতে পৌছে দেওয়া হয় দ্রুতগামী যানবাহনে করে (এই যানবাহনের নাম জানা যায়নি)। পরে ঢাকা মিউনিসিপালিটির ট্রাকে করে পানি এনে সব রং ধুয়ে ফেলা হয়। ঢাকা মিউনিসিপালিটি সেদিন খুব সুন্দর করে শাপলা চত্বর থেকে সব রং ধুয়ে মুছে ফ্যালে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে যদি ঢাকা মিউনিসিপালিটি এই রকম দক্ষতার সাথে রং ধুয়ে ফেলে সেবা প্রদান করতো তাহলে ২১শে ফেব্রুয়ারীর দিনটিও সাফ হয়ে যেতো।ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো।

রং খেলার এই বর্ণনা দিয়ে পাঠকদের বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত। মহান ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তানী পুলিশের সাথে রং খেলা এক কথা আর বিএনপি, জামাত, শিবির, হেফাজতে ইসলামের আলেমদের সাথে বাংলাদেশী পুলিশের রং খেলা আর এক কথা। কিসের সাথে কি পান্তা ভাতে ঘি।

মহান গনজাগরণ মঞ্চের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের কর্নেল বদরুদ্দিন উমরের একটি লেখা “পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তত্কালীন রাজনীতি” পড়ে দেখা যেতে পারে। উনি একজন সাম্প্রদায়িক বিভক্তি প্রিয় প্রতিক্রিয়াশীল লেখক। সম্ভবত রং মাখা অবস্থায় নিজেকে রাস্তায় শুয়ে থাকতে দেখতে চাননি সেজন্য গা বাঁচিয়ে চলেন।

” যখন তখন গুলি করে মানুষ হত্যা” — এই ঘটনা উৎযাপন করার কি আছে ????  মানুষ হত্যা বাংলাদেশীদের জন্য ডাল দিয়ে ভাত খাবার মত সহজ ব্যাপার। প্রতিদিন পুলিশে ছেলেদের উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গুলি করে মেরে ফেলে দিচ্ছে রাস্তায় বা পানিতে। ১৯৫২ সালে ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ গুলি চালিয়েছিল । এখন বাংলাদেশী পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। নামে কি এসে যায়? সব বুলেটই দেখতে এক। কাজ এক। সব বুলেটই রং মাখিয়ে মানুষকে শুইয়ে দেয়। সিধা পাঠিয়ে দেয় না ফেরার দেশে। ১৯৫২ সালে কি কি হয়েছিল যা ২০১৫ সালে হচ্ছে না??

বাংলা ভাষা কে বলে? যারা বাংলা ভাষা বলে, কে ভালবাসে তাদের? কি মূল্য আছে একজন বাংলাদেশীর? গলা কাটা মানুষ বাংলাদেশের রাস্তায় মরে পরে থাকে। শ্রমিকেরা বাংলাদেশের বিল্ডিং এর নীচে মরে পরে থা্কে। রাজনীতির খেলা খেলতে যেয়ে বাংলাদেশে মাটির নীচের ড্রেনে ফেলে মেরে ফেলা হয় বাংলাদেশী শিশুকে। বাংলাদেশের পুলিশ প্রতিদিন গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা করে। ভারতের বিএসএফ এর গুলিতে প্রতি তিন দিনে তিনজন বাংলাদেশী মরে। বাংলাদেশের নদীতে এখন মাছের বদলে লাশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশীদের মধ্য কোন একতা নেই। বাংলাদেশীরা দেশপ্রেমিক কম আর বেইমান ও মিরজাফর বেশী । বাংলাদেশীরা নিজেরা নিজেদের মাংস খায়। নিজেদের হিংস্র চরিত্র ঢাকার জন্য এরা উৎযাপনের মোড়কে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে চায়। সেজন্য এরা উৎযাপন করতে ভালবাসে। অমুক দিবস তমূক দিবস উৎযাপন করে দিবসে আটকে রেখেছে কাগুজে ভালবাসা।

দিবস উৎযাপনের মধ্য আটকে রেখেছে হিংস্র, পাশবিক, মিথ্যুক, মিরজাফর, বেইমান, প্রতারকের চেহারা।

৩ thoughts on “একুশে ফেব্রুয়ারী একটি ব্যক্তিগত উৎযাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *