সর্বোচ্চ আদালত এ মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পরদিন বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর তিন বিচারক এই মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন।
এরপর ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আফতাব উজ জামানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেন।
পরোয়ানা হাতে পাওয়ার পর কারা কর্মকর্তারা ফাঁসির আসামি কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনান।
পরোয়ানা শোনার পর কামরুজ্জামান তার আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন বলে কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রায়ে যে নির্দেশনা দেওয়া আছে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব।”
এই পরোয়ানার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও। এর মধ্য দিয়ে শুরু হল দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, “এখন কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সব প্রক্রিয়া সরকারকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে উচ্চ আদালত যদি এই প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বলে সেক্ষেত্রে তা স্থগিত থাকবে।”
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন ১৫ দিনের মধ্যে, যে দিন গণনা বুধবার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের সময় থেকেই শুরু হয়ে গেছে।
তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান রায় পর্যালোচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন।
মৃত্যু পরোয়ানা শোনার পর আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষারও আবেদন করতে পারবেন। তার সঙ্গে স্বজনদের দেখা করারও সুযোগ দেওয়া হবে।
কামারুজ্জামান রিভিউ আবেদন করলে তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের মীমাংসা হওয়ার পর যে সিদ্ধান্ত হয়, তা কার্যকর হবে বলে আইনমন্ত্রীসহ আইনজীবীদের কথায় স্পষ্ট।
আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার রায় বহাল রাখে। বিচারকদের স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা বুধবার এই রায় প্রকাশ করে এবং রাত ৮টার দিকে তা বিচারিক আদালত, অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে এ পর্যন্ত শুধু আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হয়েছে।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলার আগে রিভিউ আবেদন করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ওই নেতা।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে শেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন যে কোনো আসামি। কাদের মোল্লা সেই সুযোগ নেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, রায় পর্যালোচনার আবেদন জানাতে আসামিপক্ষ ১৫ দিন সময় পাবে। তবে এর মধ্যেও সরকার তার প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে রাখতে পারে।
“এই ১৫ দিন রাষ্ট্রকে অপেক্ষা করতে হবে বলে আপিল বিভাগ রিভিউর রায়ে বলেন নাই। ধরেন, কেউ যদি রিভিউ না করে, তাহলে কি রাষ্ট্র বসে থাকবে?”
প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি (কামারুজ্জামান) যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করেন, অবশ্যই সেই অধিকার সংবিধানেই দেওয়া আছে। রাষ্ট্রপতি কিভাবে তা নিষ্পত্তি করবেন, সেটা রাষ্ট্রপতির বিষয়।
“কিন্তু জেলখানায় পরোয়ানা গেলে তাকে প্রাণভিক্ষা করবেন কি না, রিভিউ করবেন কি না, এগুলো জানতে চাওয়া হয়। প্রাণভিক্ষার অধিকারটা সব সময় দেওয়া হয়। রিভিউর আগেও উনি চাইতে পারেন। তবে স্বাভাবিকভাবে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রাণভিক্ষার নিয়ম।”
অন্যদিকে খন্দকার মাহবুব হোসেন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তারা রিভিউ আবেদন করবেন। আর রিভিউ আবেদন না করলেও সরকারকে দণ্ড কার্যকরের জন্য ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
“রিভিউয়ের পর আদেশ অনুসারে সিদ্ধান্ত হবে যে কীভাবে তা কার্যকর হবে। সেখানে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে, নাকি যাবজ্জীবন হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই রিভিউ আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপিলের রায় কার্যকর হতে পারে না।”
তিনি বলেন, রিভিউ নিষ্পত্তির পর আসামিকে জিজ্ঞেস করতে হবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা। তিনি ক্ষমা চাইতে রাজি থাকলে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।
একাত্তরে আল বদর বাহিনীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়েও একই সাজা বহাল রাখে।
কাদের মোল্লার পর কামারুজ্জামানের আগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায় হয়েছে। তাতে তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনও প্রকাশ হয়নি।
Mahmudul Hasan liked this on Facebook.
Shajahan Monir liked this on Facebook.
Mizanur Rahaman liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
ক্ষুদে পন্ডিত liked this on Facebook.
Zia Sena Khulnazila liked this on Facebook.