রাজশাহী: ৪২ দিন ধরে ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ চলছে। মাঝে মাঝে হরতাল। হরতালে রাজশাহী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি লোকসানের মুখ দেখেছে সবজি চাষিরা। দিনের পর দিন মাঠে সবজি রেখে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো সুরাহা না হওয়ার কারণে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে কৃষকরা। আলু, টমাটো থেকে শুরু করে শাক-সবজির বাজারেও হতাশার ছাপ। রাজশাহী অঞ্চলে মাঠে ফুল কপি ও বাঁধা কপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ২ টাকা।
৫ জানুয়ারি থেকে চলছে টানা অবরোধ। এ অবরোধের কারণে মাঠে সবজি রেখে কৃষকরা সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। মাঠেই সবজি বাড়ছে। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো ফল হয়নি। কৃষকদের পানির দরে সবজি ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
বাগমারা উপজেলার মরা বিল এলাকার ফুল কপি চাষি হারুন বলেন, ‘হ্যারে ভাই, কি বিপদ আমরা তো আর এনপি-মন্ত্রী হমু না। কিসোক লাগি হরতাল-মরতাল হোছে কিছ্ইু বুঝবার পারছি নে। কিন্তু আমরা যে খ্যাত খামার লিয়ে মরে যাছি। কেউ গরিবদের কতা বোলছে না। খ্যাতের ফসল পচে যাছে। কি করমু তাই বাধ্য হএ্যাই ২ ট্যাকা করে পারপিচ কপি ব্যাচে দিছি।’
তৃণমূলের কাছে অযৌক্তিক এই হরতাল-অবরোধে সরকার অনড় থাকলেও গ্রামীণ অর্থনীতিতে দুর্যোগ ভালোভাবেই চেপে বসেছে। উৎপাদিত কৃষি পণ্যে ধরেছে পচন। সময়মত বাজারজাত না হওয়ায় কৃষককুল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকের সবজি মাঠেই বুড়ো হচ্ছে। কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লাখ লাখ মানুষ এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া চাষিরা আতঙ্কের মধ্যে আছে। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় একই অবস্থা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ট্রাকে-বাসে আলু, বেগুন, পিঁয়াজ, সিম, কপিসহ নানা প্রকার সবজি রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ হয়। সারা বছর কৃষকরা আশায় থাকেন শীত মওসুমে শাক-সবজি চাষ করে নগদ টাকা উপার্জনের। আবার এ সব ফসল চাষে অনেকে ধার-দেনা করেছেন। এরপরেও আছে কারো কারো ব্যাংক এবং এনজির ঋণ। এসব কৃষকের একমাত্র প্রত্যাশা থাকে শীতের সবজি বিক্রি করে ধার-দেনা শোধ করবেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধে তাদের সব প্রত্যাশা চুরমার করে দিয়েছে।
কয়েকজন সবজি চাষি জানান, চলতি বছরের ৪ ও ৫ জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি ও ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চলছে। হরতাল-অবরোধের এত দিন পার হলেও সমাধান কোনো পক্ষেরই উদ্যোগ নেই। নেই ২০ দলীয় জোটের, নেই সরকার পক্ষের। এতে গ্রামের কৃষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
এক শিক্ষক বলেন, কথায় আছে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। কিন্তু এবারের হরতাল-অবরোধে কারো পৌষ মাস দেখছি না। সবক্ষেত্রে সবারই সর্বনাশ হচ্ছে। কৃষকরা যেমন সবজিতে পয়সা পাচ্ছে না, তেমনি ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এ সব জনপদ থেকে সারা দেশের যোগাযোগ কার্যত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। আতঙ্কের মধ্যে চলছে সবকিছু। ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহন করায় সময় বিভিন্নস্থানে কৃষি পণ্যবাহী গাড়ি হামলার শিকার হয়েছে।
দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে দাম যাই হোক বেশিরভাগ পাইকাররা ক্ষেতেই সবজি কিনতো। ক্ষেতে সবজি বিক্রি করলে কৃষকের ভাল লাভ হয়। গাড়ি ভাড়া লাগেনা এবং খাটুনি কমে যায়। তিনি বলেন হরতাল-অবরোধ যে দলই করুক না কেন কাঁচামাল এসবের আওতামুক্ত না রাখলে প্রান্তিক কৃষকেরা মহাবিপদে পড়ে।
সাবেক কৃষি কর্মকর্তা শেরশাহ বলেন, বিশেষ করে সবজি ফসল ক্ষেতে বেশিদিন রাখা যায় না। এবারে সঠিক সময়ে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছে না। নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে এ সব পণ্যের বাজার নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে হওয়ার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই অবরোধের কারণে নগদ রোজগারকারীরাও সমস্যায় পড়ছেন। তাদের আয় কমে গেছে। এতে করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের জোনাল অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, হরতাল-অবরোধ কারও কাম্য নয়। তবে কৃষকরা যে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, চাষিরা তো বটেই হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীরাও অসহায়। পণ্য পরিবহন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বিপদে আছে। পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদেরই এর জের বহন করতে হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে উন্নতি হচ্ছে। প্রশাসন সাহায্য করায় পরিবহনে অনেকটা আস্থা বেড়েছে। প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে হরতাল-অবরোধে কাঁচামাল বিক্রি অনেকটা কমে গেছে।
Md Fahad Abdullah liked this on Facebook.
Mohammed Anam liked this on Facebook.
M.a. Azad liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
অাসাদ উদ্দিন তিতুমীর liked this on Facebook.
Mohammed Younus liked this on Facebook.
মো মহসীন আলী liked this on Facebook.
Ali Imran Shamim liked this on Facebook.