আফগানিস্থানের সাথে ম্যাচ নিয়ে আশরাফুলের কলাম

শুরুটা কোথা থেকে করবো ভেবে পাচ্ছি না। তবে একটা কথা জানি, এই ম্যাচটি দিয়ে আমাদের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হচ্ছে। যাত্রা শুরু হচ্ছে তাদেরও। পার্থক্য শুধু আমাদের পঞ্চম বিশ্বকাপ আর তাদের অভিষেক। তাই তুলনা বলুন আর বিশ্লেষণই, এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশ। ‘ম্যাচ শেষেও থাকবে এগিয়ে’ এই প্রত্যাশায় শুরু কথামালা। অন্ততঃ পাঠকরা যাতে এটি পড়ে একটু আত্মবিশ্বাস নিয়েই টিভি সেটের সামনে খেলা দেখতে বসে।

অপেক্ষার পালা শেষ। শেষ ধৈর্য্য পরীক্ষাও। বিশ্বকাপের দু’সপ্তাহ আগে অস্ট্রেলিয়ায় ডেরা গেড়ে যে দলটি স্বপ্ন দেখছে একটি ভালো বিশ্বকাপ মিশনের, তার শুরুতেই ‘আফগান বাধা’। বাংলাদেশের চাইতে পক্ষকাল পেছনে থাকা ক্রিকেটের নতুন এই অতিথিকে বাধাই বলতে হচ্ছে। আর সেই বাধা কতটা শক্ত, তা আমাদের দেশে হওয়া এশিয়া কাপেই টের পেয়েছিলাম। তবে আজকের বাংলাদেশ অনেক বেশি পরিণত, অনেক বেশি পরিপক্ব। দলটি জানে স্বপ্ন দেখতে। জিম্বাবুয়েকে সিরিজ হেয়াটওয়াশের তুষ্টি নিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা, কিছুটা হলেও সুবিধাজনক স্থানে রাখবে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস। তাই বলে ছেড়ে কথা বলবে আফগানরা, তেমনটা বলছি না। ম্যাচটা হাইভোল্টেজ ম্যাচই হবে। পুরো বাংলাদেশের মানুষ এই ম্যাচটার জন্য অপেক্ষা করছে।

বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে ১৪ তারিখে। কেটে গেছে ৪টি দিন, হয়ে গেছে ৬টি ম্যাচ। এই ম্যাচগুলো বাংলাদেশের শিক্ষক হতে পারে অনেকাংশেই। সম্প্রতি যে ৪টা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি আমরা, সেখানে প্রস্তুতির বহিঃপ্রকাশ ভাল হয়নি। সবার মধেই একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে- আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে জিততে পারব কিনা। আমার কাছে মনে হয়, হয়তো প্রস্তুতি ম্যাচে ভাল খেলিনি আমরা; কিন্তু এখান থেকে ভুলগুলো শুধরে নিতে পেরেছি। এ ছাড়া আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা বিশ্বকাপে ইতোমধ্যে হয়ে যাওয়া ৬টা ম্যাচ দেখতে পেয়েছি। তাতে করে উইকেটে কেমন আচরণ করছে তা বেশ খানিকটা উপলব্ধি করা গেছে। যা বাংলাদেশের কাজে লাগতে পারে।
যে ম্যাচগুলো হয়েছে সেখান থেকে শিখতে চাইলে অনেক কিছুই শেখার আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচটা দেখলে আমরা দেখব, আয়ারল্যান্ড দলে যাদের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে তারাই কিন্তু ভাল ক্রিকেট খেলেছে। ওদের ৪ জনের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল; ওরা ৪ জনই কিন্তু ভাল খেলেছে। ৪ জনই এনজয় করেছে খেলাটাকে। ওরা রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা করেনি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সাকিব-তামিম-মাশরাফি-মুশফিক-রিয়াদকে এমন দায়িত্ব নিতে হবে।
আমার মনে হয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সবাই চেষ্টা করবে ম্যাচটি এনজয় করার; বাড়তি চাপ নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। একদম রিলাক্সভাবে যার যার দায়িত্বগুলোর দিকে মনোযোগ দিলেই হবে। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের প্রসেসগুলো যদি ঠিক থাকে তবে আমি মনে করি, আফগানিস্তানের সঙ্গে জয় পাওয়াটা খুব কঠিন হবে না।
শুধু একা সাকিব পার্থক্য গড়ে দিতে পারবে না। দলের ১১ জনকেই খেলতে হবে। তাহলেই জয় ধরা দেবে। আমাদেরকে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং এই ৩টা বিভাগে ভাল খেলতে হবে; যদি ওদের সঙ্গে জেতার ইচ্ছা থাকে। যদি আমরা একটা বিভাগেও মোটামুটি খেলি, তবে আমার মনে হয় ম্যাচটা জেতা কঠিন হবে।
অধিনায়ক ও কোচ মিলে কালকের ম্যাচের জন্য একটা কম্বিনেশন দাঁড় করাবেন। তবে আমার দৃষ্টিতে এই ম্যাচে ওপেনিংয়ে এনামুল হক বিজয় ও তামিম ইকবাল পারফেক্ট। ৩ নাম্বারে সৌম্য সরকারকে খেলাবে মমিনুলের জায়গায়। কারণ, সৌম্য সরকার অনুশীলন ম্যাচে ভাল করেছে এবং ওর পেস বোলিংটা আমরা পাব। এই কারণে আমি মুমিনুলের চেয়ে সৌম্যকে এগিয়ে রাখব। সৌম্য টানা ভাল খেলছে। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে ওর উচ্চতাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাউন্সি ট্র্যাকে সৌম্যের উচ্চতাটা হবে প্লাস পয়েন্ট। ৪ নাম্বারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অটোমেটিক চয়েজ। রিয়াদ অলরাউন্ডার, অফ স্পিন বল করতে পারে। এছাড়া ভাল ফর্মেও আছে রিয়াদ। নাম্বার ৫-এ নিশ্চিতভাবে সাকিব আল হাসানকে রাখব।

সে ৩ ফরম্যাটেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। যদিও অনুশীলন ম্যাচে অতটা ভাল হয়নি। তবে তার জন্য এটা কোনো সমস্যা নয়। সাকিব বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। আমার বিশ্বাস, কালকের ম্যাচে সাকিব ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠবেন। ৬ নাম্বারে মুশফিকুর রহিম; উইকেট কিপার কাম ব্যাটসম্যান। ওর কাছ থেকে আমরা আশা করব বড় ইনিংস। যদি আমাদের দ্রুত উইকেট পরে যায় তাহলে সাকিব ও মুশফিকের কাছ থেকেই আমরা আশা করব বড় পার্টনারশিপ। নাম্বার সেভেনে আসবে সাব্বির রহমান রুম্মন। রুম্মন অলরাউন্ডার, সঙ্গে ভাল ফিল্ডারও। ৮ নাম্বারে নাসিরকে আমি চয়েজ করব। নাসিরকে রাখার যুক্তিটা হচ্ছে, তার আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। নাসির আমার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ট্যুর করেছিল। বাউন্সি উইকেটে সে অসাধারণ ব্যাটিং করেছিল।

আমার বিশ্বাস, নাসিরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগবে। এ ছাড়া সে ভাল ফিল্ডার, সঙ্গে অফ স্পিন বোলিংও করতে পারে। ৯ নাম্বারে আসবে মাশরাফি। আমাদের দলের পেস বোলার এবং অধিনায়ক। দলের প্রয়োজনে আগে ব্যাটিং কিংবা কম বলে রান সবকিছুই মাশরাফির দ্বারা হবে। দশে আসবে রুবেল হোসেন। আমি তাকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো, সে অভিজ্ঞ বোলার। মাশরাফির পরই তার অভিজ্ঞতা বোলিংয়ে। নতুন কিংবা পুরাতন বলে সে ভাল বল করতে পারে। সেই সঙ্গে আমি আরও একটা স্পিনার খেলাব। আরাফাত সানি ও তাইজুল ইসলামের মধ্য থেকে আমি তাইজুলকেই বেছে নেব।

আমাদের দলে প্রচুর স্পিনার আছে। রিয়াদ-সাকিব-নাসির-সাব্বির ৪ জন স্পিনার। এদের মধ্যে সাকিব রিয়েল স্পিনার; ১০ ওভার বল করবে। এছাড়া, সাব্বির-রিয়াদ-নাসিরকে দিয়েও বল করানো যেতে পারে। তারপরও আমি তাইজুলকে নেব; এর কারণ, তাইজুল একজন সত্যিকারের বাঁহাতি স্পিনার। ওকে নিলে দলে থাকবে ৫টা স্পিনার। এ ছাড়া পেস বোলার হলো মাশরাফি-রুবেল। সেই সঙ্গে সৌম্য সরকারকে দিয়ে ৪-৫ ওভার করিয়ে নেওয়া যাবে। যেহেতু আমরা স্পিনে শক্তিশালী। এটা নিয়েই খেলা উচিত। আর এটাই হলো আমার কাছে আজকের ম্যাচের জন্য কাঙ্খিত একাদশ।

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *