হঠাৎ এনামুল হক বিজয়ের কণ্ঠে বেজে উঠল- ‘আমরা করব জয়’, এই গানটি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিং রুমে এটাই টিম সং। এই গানেই নাকি বাংলাদেশ দল হয় উদ্দীপ্ত। মানুকা ওভালে সিনিয়র টিমমেট মাহামুদুল্লাহ’র কাঁধে এক হাত, আর অন্য হাত সৌম্য সরকারের কাঁধে রেখে এনামুল বিজয়ের এই গানটিতেই প্রকাশ পেয়েছে ফুরফুরে বাংলাদেশ দলের অভিব্যক্তি! আগামীকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এই গান গেয়ে উদ্দীপ্ত হতে চান বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা, গাইয়ে চান সমস্বরে ১৮ ফেব্রুয়ারির ম্যাচ শেষে।
মাঠে বিজয়ের গান, ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল যতোটা না সিরিয়াস, তার চেয়েও ফিল্ডিং অনুশীলনে সিরিয়াস বেশি হেড কোচ হাতুরুসিংহে। সঙ্গে রুয়ান কালপাগেও স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্বের বাইরে হয়ে গেলেন ফিল্ডিং কোচ। মানুকা ওভালের কার্পেট সদৃশ মাঠে কে কতো ড্রাইভ দিয়ে বল ধরতে পারেন, চললো সেই প্রতিযোগিতা। স্কাই ক্যাচগুলোও কতো নিখুঁতভাবে নিতে পারা যায়, সেটাও পরখ করে দেখলেন এই কোচত্রয়ী। মাঠে বিজয়কে লম্বা সময় রেখে উইকেট কিপিং অনুশীলনটাও করিয়ে রাখলেন হাতুরুসিংহে।
মাঠের এই চিত্র দেখে অনেক কৌতুহলই জন্ম দিতে পারে। নেটে পর্যায়ক্রমে ব্যাটিং অনুশীলনের দৃশ্যও কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে। ওপেনিং ব্যাটসম্যান বলে সবার আগে নেটে যাওয়ার কথা তামীম, বিজয়ের। অথচ, তামীমকে নেটে পাঠানো হলো দেরিতে। ঠাট্টার বশে হাতুরুসিংহের একটি থ্রোতে তামিম আউট। সঙ্গে সঙ্গে নেট থেকে বেরিয়ে গেলেন তামিম, সাইড আর্ম ডেলিভারি বৈধ না হয়েও নেটে অনুশীলন বলে ঠাট্টার ছলে করেছিলেন এমন বল হাতুরুসিংহে। পিচে বল পড়ে রূপ নিয়েছে তা ইয়র্কারে, সেই বলে বোল্ড তামিম। নেট থেকে বেরিয়ে নাসিরের সঙ্গে লম্বা সময় ধরে গল্পে সময় কাটল তামিমের। মাথা বিগড়ে না ফেলে মনস্থির করে খেলার উপদেশটাও দিলেন কোচ তামিমকে। কারণ, এই কোচই কভার ড্রাইভ, স্ট্রেইট ড্রাইভ, অন ড্রাইভ, পুলের প্রশংসা করেছেন কোচ। এটাকে নিছক এক হাসি-তামাশার মধ্যেই দেখছেন মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম।
মানুকা ওভালে বাংলাদেশ দলের প্রথম অনুশীলনটা আসলেই ছিল সিরিয়াস। রুবেলের একটি কুইকেস্ট ডেলিভারিতে মাহামুদুল্লাহ’র লেগ স্ট্যাম্প গেছে উড়ে, তাসকিন, আল আমিন একটার পর একটা বাউন্সি ডেলিভারিতে নিজেদের ভয়ংকর রূপের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। অনুশীলনে যোগ দিয়ে ম্যানেজার খালেদ মেহমুদও কিছুক্ষণ করলেন নেটে বোলিং! নেটে ব্যাটিংয়ে শুরুতে পাঠানো হলো মুমিনুল, মুশফিকুর, সৌম্য, মাহামুদুল্লাকে। নতুন বল সামাল দেন কীভাবে হয়ে গেল সে পরীক্ষা। দ্বিতীয় ব্যাচে সাকিব, নাসির, রুম্মান, মাশরাফি। মাঠে দীর্ঘক্ষণ উইকেট কিপিং অনুশীলন করে সবার শেষে নেটে বিজয়। সর্বশেষ হোম সিরিজে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের পর অস্ট্রেলিয়ায় প্রাক বিশ্বকাপ অনুশীলন ম্যাচগুলোতে বলার মতো স্কোর নেই বলেই মুশফিকুরকে নিয়ে নেটে একটু বেশি সময়ই ব্যয় করলেন কোচ। কোচকে আশ্বস্ত করতে ফুল ডেলিভারিতে স্কুপ পর্যন্ত করেছেন মুশফিকুর। বাউন্সি ডেলিভারিতে মুমিনুলের হুক শটও পেলো কোচের প্রশংসা। শেষ ৩ বলে টার্গেট ১২, এমন সময়ে মুশফিকুরের স্কুপ, তাও আবার মাশরাফির ফুল ডেলিভারিকে! এক বলে দরকার যখন ২, তখন তাসকিনের ইয়র্কারকে মিস মুশফিকুর!
চাপ কাটিয়ে দলকে ফুরফুরে রাখতে এতোটা সিরিয়াস অনুশীলনের মাঝে হাসি ঠাট্টা-পুরো ক্রিকেট দলকে একটি ইউনিটে পরিণত করতে ম্যাচের ২ দিন আগে মানুকা ওভালে তৈরি করেছেন হাতুরুসিংহে এমন আবহ। কিন্তু ক্রিকেটারদের এমন অনুশীলন দেখা দূরে থাক, জানতেও পারেনি ক্যানবেরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ। প্রবেশাধিকার না থাকায় মানুকা ওভালের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রিয় ক্রিকেটারদের এক নজর দেখতে কি প্রতীক্ষাই না তাদের। আগামীকাল এসব সমর্থকই হবে বাংলাদেশ দলের প্রেরণা।
আতিক/প্রবাস