প্রতিপক্ষ যেই-ই হোক প্রথম ম্যাচে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ

এক সময়ে ছিলেন শ্রীলংকার শ্যাডো কোচ। তবে অস্ট্রেলিয়ায় কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে, এটাই হাতুরুসিংহের প্রোফাইল দিয়েছে বাড়িয়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বলেই শেন জার্গেনসেন উত্তর হেড কোচ নির্বাচনে হাতরুসিংহকেই পছন্দ করতে হয়েছে বিসিবিকে। ৮ মাস আগে হাতুরুসিংহকে হেড কোচের দায়িত্ব দেয়ার পেছনে অস্ট্রেলিয়ায় তার কোচিং ক্যারিয়ারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে বিসিবি।

অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে বাংলাদেশ দলের ২ সপ্তাহের বেজ ক্যাম্প, ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচ- এটাও হাতুরুসিংহের প্রেসক্রিপশনে। সব কিছুই বাংলাদেশ দলের ভাল’র জন্য। কিন্তু যার ব্যবস্থাপত্রে আইসিসি’র অফিসিয়াল আতিথ্যের ২ সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ দলের অস্ট্রেলিয়ায় আগমন, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রাক বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে কিন্তু আশাব্যঞ্জক পারফর্ম করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। উল্টো সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে হারটাই যে মনোবলে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে।

নিজের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী এতো কিছু বিসিবি করেছে বলেই শিষ্যদের হতাশ পারফরমেন্সকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দামী এই শ্রীলংকান কোচ। গতকাল দুপুরে ক্যানবেরার কিপাক্স ওভালে অনুশীলন শেষে কোচের কথায় সেটাই প্রতীয়মান হয়েছে- ‘পরিষ্কার ভাষায় যদি বলতে হয়, তাহলে যে চারটি অনুশীলন ম্যাচ খেলেছি, ওই প্রস্তুতি ম্যাচগুলোর পারফরমেন্সকে আদর্শ প্রস্তুতি বলা যাবে না। এখন ফাইন টিউনিং করছি দলটিকে। ৪টি ম্যাচে ভাল করিনি তা ঠিক, তবে ব্রিসবেনের অনুশীলনে যে সব সুবিধা পেয়েছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট।’

প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বলে নয়, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ যে কোন দলের জন্যই চাপের, তা মনে করছেন হাতুরুসিংহে- ‘বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে প্রথম ম্যাচ যে কোন দলের জন্যই চাপ। কারণ, প্রতিটি দলেরই প্রত্যাশা থাকে অনেক, চায় জয় দিয়ে শুরু করতে। তা নিয়ে স্নায়ুচাপ থাকবেই। প্রথম ম্যাচে লক্ষ্যটাও নির্ধারণ করেছেন হাতুরুসিংহে- ‘প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানই হোক কিংবা অস্ট্রেলিয়া, প্রত্যাশা থাকবে ভাল করা এবং তা আমাদের জন্য কঠিন কিছু হবে না। প্রথম ম্যাচে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা সেরাটা খেলতে পারি, তাহলে তা অসম্ভব হবে না। ’

বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে সাকিব, তামীম, মুশফিকুর, মাশরাফির। আবার ৯ ক্রিকেটার বিশ্বকাপে অভিষেকের সামনে দাঁড়িয়ে। এই সব তরুণদের মেলে ধরাটাই এখন কাম্য হাতুরুসিংহের- ‘দলে বেশ ক’জনের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তবে তরুণরা এই পর্যায়ে এসে কি করতে পারে, সেটাই দেখতে চাই। দলে এমন একদল তরুণ আছে, এটাই তাদের প্রথম বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ায় এর আগে কখনোই খেলেনি তারা।’ সাকিবের পারফরমেন্সে হোমে সর্বশেষ টেস্ট ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ দল।

বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে সাকিব তিন ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেরা অল রাউন্ডারের মুকুট মাথায় দিয়ে। সে কারণেই দলের প্রান ভোমরা সাকিবের দিকে তাকিয়ে কোচ হাতুরুসিংহে। কি ব্যাটিং, কি বোলিং, সামনে থেকে পারফর্ম করে দিবেন নেতৃত্ব সাকিব, এটাই মনে-প্রাণে কামনা হাতুরুসিংহের- ‘আমার দলে ক’জন অল রাউন্ডার আছেন। যার মধ্যে আছেন সব ফরমেটে সেরা অল রাউন্ডার। সাকিবের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে সে, সেটাই প্রত্যাশা করছি। অস্ট্রেলিয়ায় বিগ ব্যাশে মেলবোর্ন রেনিগেডসের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। সে একজন চতুর বোলারও। এখন তার ফর্মে ফিরে আসাটাই জরুরী। ’

বাংলাদেশ দলের মধ্যে সবার আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রেখে নিজের প্রস্তুতিটা নিতে পেরেছেন সাকিব। বিগ ব্যাশে মেলবোর্ন রেনিগেডসে খেলতে এসে তার যাদুর স্পর্শে এই দলটিকে ২টি ম্যাচে জিতিয়ে যোগ দিয়েছেন ব্রিসবেন ক্যাম্পে। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারার এমন সুযোগের পরও কিন্তু বিশ্বকাপের প্রাক প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে নিজেকে সেভাবে চেনাতে পারেননি সাকিব। বলার মতো ব্যাটিং (৩১ রান) কেবল পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনীতে অনুশীলন ম্যাচে। ব্রিসবেনে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ইকোনমি বোলিংও যা কিছু উল্লেখ করার মতো (১/২৭)। মেলবোর্ন রেনিগেডস টীমমেট অ্যারন ফিঞ্চ মেলবোর্নে উদ্বোধনী ম্যাচে সেঞ্চুরিতে যেভাবে নিজেকে চিনিয়েছেন, তার পারফরমেন্স থেকে প্রেরণা পেতেই পারে বাংলাদেশ দল।

৪টি অনুশীলন ম্যাচের পারফরমেন্স মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দলকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন ম্যানেজার সুজন। টীম বাংলাদেশকে ফিরে পেতে এখন কামনা সবার একটাই- দলকে ছন্দে ফেরানো। গতকাল অনুশীলন শেষে ক্যানবেরা প্রবাসীদের যেভাবে অটোগ্রাফ দিয়েছে বাংলাদেশ দল, তাতে কিন্তু হতাশা ভুলে দারুণ কিছুর প্রত্যয়ের অভিব্যক্তি পেয়েছে ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে প্রকাশ। পেছনে এতো দর্শক সমর্থন থাকবে যাদের, তাদের তো এগিয়ে থাকারই কথা।

আতিক /প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *