প্রতিবন্ধিদের কাছ থেকে “সাড়া” পাওয়া গেছে

সভ্য সমাজকে সবসময় সভ্যতার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখতে হলে এই সমাজের দ্বিপদ প্রানী যাদের চেহারা ও আচার আচরণ কিছুটা মানুষের মত তাদের কিছু দায়িত্ব থাকে । কিছু কর্তব্য থাকে। এই দ্বিপদ প্রানীরা যতই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে বিরত থাকবে ততই সমাজের উপর থেকে সভ্যতার চাদর সরে যাবে আর সমাজের ভেতরে বিদ্যমান পাশবিকতা ও অসভ্যতা কঙ্কালের মত দাঁত দেখিয়ে বের হয়ে আসবে।

অনেকের মতে খালেদা ও হাসিনা এই দুইনেত্রী যদি না থাকতো তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। আসলেই কি তাই? হাসিনা ও খালেদাকে যারা রাজনৈতিক নেত্রী করে গড়ে তুলেছে, কারা তারা? বাংলাদেশের জনগন যদি বলে “ভারত” তাদের জন্য “স্বাধীনতা” এনে দিয়েছে তাহলে ভারত তাদের জন্য “রাজনৈতিক নেত্রীও কোলে পিঠে করে গড়ে দিয়েছে। ভারত তাদের জন্য “সীমান্তে মৃত্যু” এনে দিয়েছে। ভারত তাদের জন্য টেলিভিশন চ্যানেলে ” নাটক, গান, সিনেমা” এনে দিয়েছে। ভারত তাদের জন্য গরু, পেঁয়াজ, রসুন,চাল,ডাল,তেল, নুন, গহনা,গাড়ি,চিকিৎসা, সব এনে দিয়েছে। বিনিময়ে ভারত কিছু নেয়নি। শুধু খালেদা ও হাসিনার নির্দেশে বিভিন্ন সময়ে জনগনকে বিভিন্নভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বা হচ্ছে।

ভারত জানে যে বাংলাদেশের জনগন অপরিনত বা শিশু বা প্রতিবন্ধী তাই ওরা নিজেদের জন্য নিজেরা সরকার নির্বাচিত করতে পারেনা। তাই  সরকার নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশের জনগন মার্কিনযুক্তরাস্ট্র ও ভারতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করে। ভারত জানে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবন্ধি, দাস, অসভ্য, বিদেশী প্রভুদের উপরে নানাভাবে নির্ভরশীল। মানসিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে, জৈবিকভাবে, সামরিকভাবে, প্রতিদিনের জীবিকা নির্বাহের জন্য নির্ভরশীল। সেজন্য  হাসিনা নিজেকে নিজেই বাংলাদেশের সরকার হিসাবে নির্বাচিত করেছে কারন সেটা ছিল ভারত ও মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের সিদ্ধান্ত । বাংলাদেশের জনগন তাদের নিজেদের জন্য একটি সরকার নির্বাচিত করতে পারেনা। ওরা নিজেরা কিছুই করতে পারেনা। শিশুর মত ওরা শুধু অনুকরণ করতে পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচী দেবার আগে খালেদা জিয়াকে সব সময়ই বিদেশীদের গ্রিন সিগনালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশের জনগনের মতই খালেদা বা হাসিনা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের উপরে নির্ভরশীল। ওদের নিজস্ব কোন চিন্তাভাবনা, বিচারবুদ্ধি নাই তাই সিদ্ধান্ত নেবার বা দেবার ক্ষমতা ওদের নাই। তবে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাস্ট্র তাদের সেবকদের জন্য কিছুটা নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা দিয়েছে। যাকে বলা হয় মানবাধিকার ও স্বাধীনতা ।  “ক্রশফায়ার” একটি মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নাম।

মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হলে শিশুর মত বা রোবটের মত বা প্রতিবন্ধির মত বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা ক্যামেরাতে এই মৃত্যু রেকর্ড করে রাখে। ফিনকি দিয়ে রক্ত উঠছে সেটা মনোযোগ দিয়ে ক্যামেরা দিয়ে ছবি উঠিয়ে রাখে। একজন মানুষকে কোপানো হচ্ছে । এক এক কোপের ছবি ওরা ক্যামেরার লেন্সে তুলে রাখে এক এক এঙ্গেল থেকে। সেই মানুষের যন্ত্রনা ও আর্তনাদের আওয়াজগুলো সুন্দর করে গানের মত রেকর্ড করে রাখে। এই রেকর্ড বাজিয়ে সবাইকে শোনায় এই ভিডিও প্লে করে সবাইকে দেখায়। গর্ব অনুভব করে। বাংলাদেশের ফটো সাংবাদিকের সব চাইতে বড় সাফল্য হলো ছাত্রলীগের পশুরা যখন মানুষ কুপিয়ে হত্যা করে তখন সেইসব পাশবিক দৃশ্যগুলো ক্যামেরাতে রেকর্ড করে রাখা। সাংবাদিকদের মনে অনেক দুঃখ ওরা এই রকমভাবে মানুষ জবাই করতে পারেনা। তাই এই মানুষ জবাইকের দৃশ্য ক্যামেরাতে বন্দী করে ওরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটায়। অথবা পুলিশে যখন নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করে জখম করে বা হত্যা করে সেইসব ছবি উঠিয়ে তা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের দ্বারা প্রকাশ করার জন্য বিক্রি করে সাংবাদিকেরা খ্যাতি অর্জন করে। এই হত্যার যিনি নির্দেশ দিয়েছেন তিনিও এই রেকর্ড দেখে সাংবাদিকের যৌনাঙ্গ ধরে একটু আদোর করে দেন। টাকা কড়ি বেতন বৃদ্ধি করে দেন। মানুষ হত্যা করার জন্য পুলিশ টাকা পায়। মানূষ হত্যার দৃশ্য ক্যামেরাতে রেকর্ড করে ফটো সাংবাদিক টাকা পায়। মানুষ জবাই করা ও তা বিভিন্ন পত্রিকাতে প্রকাশ করার ফলে বাংলাদেশের অনেক পাশবিক জনগন উল্লাসিত হয়। বিভিন্ন সামাজিক প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে তারা তাদের এই উল্লাস বা মনের পাশবিক ভাব বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যম প্রকাশ করতে পেরে গর্ব অনুভব করে। মানুষ হিসাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন না করতে পারলেও পশু হিসাবে তো উল্লাস করতে পারলো। সেটাই বা কম কি ?

জনগনের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো নিজেদের বাঁচিয়ে রাখা। যারা এইসব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেনা তারা ঝুঁকি নেয়। প্রান হারায়। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বা মিছিলে বা মানুষের মুখে একটা শ্লোগান শোনা যায় – “আমাদের গনতন্ত্র ফিরিয়ে দাও” । কার কাছে এই দাবী আমি বুঝিনা। খালেদা জিয়া সম্ভবত এই দাবী করার জন্য বলেছে তাই সবাই দাবী করছে। কার কাছে দাবী করছে কেউ জানেনা। একজন মানুষকে হত্যা করার পরে সে মরে যায়। “আমার জীবন ফিরিয়ে দাও” এই বলে সে আর দাবী করতে পারেনা। কিছুক্ষন আগে একটা সংবাদ পড়লাম। ডঃ কামাল হোসেন নাকি “সাড়া” পাচ্ছেন। তার মানে কি বুঝিনি। তবে বুঝার চেস্টা করছি। “সাড়া” অর্থাৎ “রেসপন্স” পাচ্ছে। কিন্তু কোথা থেকে? কেনো? কারা এই রেসপন্স দিচ্ছে? যারা রেসপনসিবিলিটি বলতে কিছু বুঝেনা তারা কেমন করে রেসপনস দিবে? রেসপনসিবিলিটি মানে হলো “দায়িত্ব” । একজন মানুষের দায়িত্ব অন্য একজন মানুষের জীবন বাঁচানো। একজন মানুষের জন্ম হয় অন্য একজন মানুষের “জীবন” বাঁচানোর জন্য। আল্লাহ্‌ মানুষের সৃষ্টি করেছেন এঁকে অন্যকে রক্ষা করার জন্য। মানুষ পরিবার গঠন করে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য।

১৯৭১ সালে যখন গনহত্যা শুরু হয় তখন পূর্ব বাংলাতে অনেক মানুষই রেসপন্স বা সাড়া দেয় এবং নিজেদের দেশের মানুষের জীবন ও দেশকে বাঁচানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। কিন্তু ডঃ কামাল হোসেনের নিম্নাঙ্গ অবশ হবার কারণে ১৯৭১ সালে পূর্ব বাংলাতে গনহত্যা শুরু হবার সাথে সাথে অবস নিম্নাংগ নিয়ে ডঃ কামাল হোসেন নিজেকে বাঁচানোর জন্য পাকিস্তানে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আর্মী এসে পূর্ব পাকিস্তানে গনহত্যা চালায় আর ডঃ কামাল হোসেন পাকিস্তান আর্মীদের গনহত্যায় “সাড়া” দিয়ে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায়। সেই ডঃ কামাল হোসেন এখন “সাড়া” পাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে যারা এর আগে কোন দিন বা এখন – “মানুষ হত্যা” হতে দেখে “সাড়া” দেয়নি।

“সাড়া” দেবার জন্য শরীরে কিছু সেন্স কাজ করে। প্রতিবন্ধিরা অন্যভাবে সাড়া দেয়। প্রতিবন্ধিদের “সাড়া” বুঝবার জন্য “প্রতিবন্ধি” সম্পর্কে অনেক গবেষনা করা দরকার। দল, মত, রাজনৈতিক মতবাদ,ধর্ম, বর্ণ, দেশ, কাল, পাত্র, নির্বিশেষ যেকোন নিরীহ মানুষকে অকারনে গুলি করে মেরে ফেলতে দেখলে বা ট্রাকের নীচে পিষ্ট করে মেরে ফেলতে দেখলে বা পিটিয়ে বা কুপিয়ে মেরে ফেলতে দেখলে বা পেট্রোল বোমা দিয়ে জ্বালিয়ে মেরে ফেলতে দেখলে – মানুষ হিসাবে আমি আতংকিত হই। এটা আমার “সাড়া”। বাংলাদেশে যেকোন নেতা বা রাস্ট্র প্রধানের নির্দেশে যেকোন পুলিশ, র‍্যাব, আর্মী, সোনার ছেলে বা রুপোর ছেলে দ্বারা কৃত জায়েজ বা নাজায়েজ “হত্যাকান্ড” হতে দেখলে আমি আতংকিত হই। এটা আমার “সাড়া”।
অন্য কারুকে আতংকিত হতে না দেখলে নিজেকে বড় একা মনে হয়। মনে হয় মানুষের কোন “সাড়া” পাচ্ছিনা। তাহলে কি যাদের আমি মানুষের মত মনে করছি তারা  “মানুষ” নয় ? মানুষের মত আচার আচরণ মানুষের মত চেহারার অন্য এক ধরনের আজব “পশু” । আমি “সাড়া” দিলে অনেক পশু আবার প্রশ্ন করে “এত ক্ষেপছেন কেনো” ।

ডঃ কামাল হোসেন “সাড়া পাচ্ছেন” অবশেষে । প্রতিবন্ধিরা “সাড়া” দিচ্ছে।  উনার শরীরের রেসপন্স সেন্টারগুলো উনার মৃত্যুর আগে দিয়া অতঃপর সচল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। উনি সাড়া দিছেন তাই উনি সাড়া পাইছেন।

আমি দিশেহারা। এই “সাড়া” যারা দিচ্ছে তারা কারা? তারা আগে কেনো “সাড়া” দেয়নি। ওরা গনতন্ত্র চায় কিন্তু “গনহত্যা” সম্পর্কে ওদের শরীরের রেসপন্স সেন্টারগুলো এখনও অবশ তাই সেসম্পর্কে ওদের কোন “সাড়া” পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশে “নাগরিক হত্যা” বন্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনাসহ সকল হিংস্র পশু যারা “নাগরিক হত্যার” সাথে জড়িত অনতিবিলম্বে সমাজ থেকে তাদের অপসারন করার জন্য কেউ কেনো “সাড়া” না দিয়ে বা পদক্ষেপ না নিয়ে এই পশুদের সাথে আলোচনাতে বসার জন্য ডঃ কামাল হোসেনকে “সাড়া” দিয়েছে সেটা ভেবে আমি উপসংহারে সাড়ি – হিংস্র পশু হিংস্র পশুর ভাষা বুঝে হিংস্র পশু আওয়াজ দিলে হিংস্র পশু আওয়াজ দেয় – “সাড়া” দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *