সবকিছু ছেড়ে মঙ্গলে যাওয়ার অপেক্ষা!

মঙ্গল গ্রহে যেতে আগ্রহী আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ১০০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা আগামীকাল সোমবার প্রকাশ করা হবে। মার্স ওয়ান নামের একটি অলাভজনক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পরিচালিত এই যাত্রা হবে একমুখী। অর্থাৎ মার্স ওয়ানের মহাকাশযানে চড়ে মঙ্গলে শুধু যাওয়া যাবে, পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না।
পৃথিবীর জীবন বাদ দিয়ে মঙ্গলে পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রথমে প্রায় দুই লাখ মানুষ মার্স ওয়ানে আবেদন করেন। চিকিৎসক, উকিল, ছাত্রছাত্রী এবং বিজ্ঞানী—সবাই যেতে চান। আপাতত বাছাই করা হয়েছে ১০০ জনকে। তাঁদের মধ্যে ২৪ জন মঙ্গলযাত্রার চূড়ান্ত সুযোগ পাবেন। প্রথম তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে মহাকাশে, সেখান থেকে ‘লাল গ্রহে’। ওই পরিবেশে তাঁদের স্বাভাবিক আয়ু যাতে বজায় থাকে, সেই চেষ্টা করা হবে।
চূড়ান্ত দলটিতে স্থান পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী প্রার্থীদের ৬৩ জনের পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে। আছেন ১২ জন চিকিৎসকও। মঙ্গলে পাড়ি দিতে চান বৈমানিক, প্রবীণ সৈনিক এবং ব্যবসায়ীরা। সারা বিশ্ব থেকেই তাঁদের বাছাই করা হয়েছে। সবচেয়ে তরুণ প্রার্থীর বয়স ১৮, আর প্রবীণতম ব্যক্তিটির বয়স ৭১ বছর। তাঁদের ইচ্ছেগুলো নানা রকমের। রায়ান ম্যাকডোনাল্ডস নামের একজন এ অভিযানে অংশ নিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের চেয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে বেশি কিছু অর্জন করতে পারবেন—এমন স্বপ্ন দেখেন। যুক্তরাজ্যের কভেন্ট্রির ২৪ বছর বয়সী ম্যাগি লিউ বলেন, তিনি মঙ্গলে প্রথম মানবসন্তানের জন্ম দিতে চান।
তবে মার্স ওয়ানের এই প্রকল্প বাস্তবসম্মত কি না, তা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। ফিজিক্স ফোকাস ব্লগের লেখক অ্যামি শিরা টিটেল মনে করেন, অভিযানটিতে এত বেশি অজানা বিষয় এবং এত বেশি সম্ভাব্য পথ আছে যে সব মিলিয়ে পুরো প্রচেষ্টাই ভেস্তে যেতে পারে। তবে ব্যাপারটা অবশ্যই মজার।
নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তা বাস ল্যানসড্রপ প্রথম মার্স ওয়ান প্রকল্পটি নিয়ে চিন্তা করেন। প্রকল্পের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা আর্নো উইল্ডার্স মহাকাশ পর্যবেক্ষণকারী শক্তিশালী টেলিস্কোপ এবং ওজোন স্তর নিয়ে গবেষণায় অভিজ্ঞ। তাঁরা মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে যে অভিনব কাজ শুরু করেছেন, তা কোনো দেশের সরকারও করেনি। অভিযান কীভাবে সম্পন্ন হবে, তার ব্যাখ্যায় মার্স ওয়ান বলেছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনসহ বিভিন্ন অভিযানের অভিজ্ঞতায় মহাকাশ ও ভিনগ্রহের পরিবেশ সম্পর্কে যেসব ধারণা ও তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলোই মঙ্গলে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় কাজে লাগানো যেতে পারে।
কিন্তু ৩ কোটি ৩০ লাখ মাইল পেরিয়ে মঙ্গলে প্রতি দফায় চারজন মানুষ পরিবহনের ব্যাপারটা কীভাবে সম্ভব হবে? শুধু তাই নয়, ওই গ্রহে পৌঁছানোর পর মানুষগুলোর নিরাপদ অবতরণ নিশ্চিত করতে হবে। আর তাঁদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোও সেখানে থাকতে হবে।
২৪ জনের চূড়ান্ত দলটিকে ছয়টি দলে ভাগ করা হবে। প্রতিটি দলে থাকবেন চারজন করে। প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির জন্য তাঁরা পাবেন নয় বছর সময়। কোন দলটি প্রথমে মঙ্গলে যাবে, সে জন্য তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও হবে। এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ লাখ ডলার জোগাড় হয়েছে। তহবিল সংগ্রহের জন্য টেলিভিশনে প্রচার চালানো হবে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) মঙ্গল নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করলেও ২০৩০-এর দশকের আগে গ্রহটিতে মানুষ পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা এখনো করেনি। আর তারা কোনো দিন সেখানে মানুষ পাঠালেও অভিজ্ঞ মহাকাশচারীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু মার্স ওয়ান নভোচারীদের বাইরে সাধারণ মানুষজনকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে লাল গ্রহে যাওয়ার সুযোগ দিতে চায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মানুষবাহী মার্স ওয়ানের প্রথম মহাকাশযানটি ২০২৫ সালে মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.