আজ ভারত পাকিস্থান ফাইনালের আগে ফাইনাল

ফাইনালের আগে ফাইনাল। এক কদম বেড়ে তার চেয়ে বেশি বলা যায়। আপাতত ভারত ও পাকিস্তানের সমর্থকদের কাছে এর চেয়ে বড় কোন ম্যাচ আর হয় না। প্রতিপক্ষকে হারাতে পারলে দুই দলের সমর্থকরা বিশ্বকাপ শিরোপার চেয়ে বেশি কিছু মনে করেন। আর আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসরে গ্রুপ পর্বের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচটি হতে যাচ্ছে আজ। অ্যাডিলেডে মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বকাপের সূচি ঠিক হওয়ার পর থেকে এ ম্যাচ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। উত্তেজনার পারদ ঊঠছেই।

এ ম্যাচ জিততে করণীয় নিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের উপদেশের পর উপদেশ শুনতে হচ্ছে। অহমের ম্যাচ জিততে দুই দলের খেলোয়াড়, অধিনায়ক ও কোচদের পরিকল্পনার শেষ নেই। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ভারতের বিপক্ষে সম্পূর্ণ ব্যর্থ পাকিস্তান। ১৯৯২ থেকে পাঁচ বারের মুখোমুখিতে প্রতিবারই হেরেছে তারা। ১৯৯২-তে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতলেও আজহার উদ্দিনের ভারতের সঙ্গে পারেনি পাকিস্তানের অধিনায়ক ইমরান খান। ১৯৯৬-তে ওই আজহার উদ্দিনের সঙ্গে পেরে ওঠেননি ওয়াসিম আকরাম। ১৯৯৯ বিশ্বকাপেও আজহারের শিকার হন ওয়াসিম আকরাম।

২০০৩ বিশ্বকাপে সৌরভ গাঙ্গুলিকে হারাতে ব্যর্থ হন ইনজামাম-উল-হক। আর সর্বশেষ ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির কাছে হেরে বিদায় নেন শহীদ আফ্রিদি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের নেতৃত্বে এবারও ধোনি। তবে পাকিস্তানের নেতৃত্বে এসেছে পরিবর্তন। আফ্রিদির বদলে ধীর মস্তিষ্কের মিসবাহ-উল-হক। পাকিস্তান তাকিয়ে মিসবাহ’র দিকে। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের প্রত্যাশায় তারা। অন্যদিকে ভারত হাফ ডজন জয় পূর্ণ করতে চাইছে। বিশ্বকাপে যা কোনদিন হয়নি তারা তা হতে দিতে চায় না তারা। ভারতের সাবেক খেলোয়াড়দের প্রায় সবাই ভারতকে আজ ফেভারিট মনে করছেন। যদিও অস্ট্রেলিয়ায় গত তিন মাসের সফরে প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়া তাদের জয় অধরা।

কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ঠিকই তারা জ্বলে উঠবে বলে আশা করছে। ব্যাটিংটা তাদের বরাবরের মতোই দুর্দান্ত। তবে বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। বিশেষ করে ইশান্ত শর্মার ইনজুরিতে তাদের পেস অ্যাটাক বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি ও উমেশ যাদবকে পেস অ্যাটাকের দায়িত্ব নিতে হবে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সমস্যা দুই দিকেই। কোন টুর্নামেন্টের আগে পাকিস্তান বোলার সঙ্কটে ভুগছে এমনটা খুব কমই শোনা গেছে। কিন্তু এবার তাই হয়েছে। জুনাইদ খান, উমর গুল ও সাঈদ আজমলের দলে না থাকায় পেস অ্যাটাকে নেতৃত্বে দিবেন সাতফুটে মোহাম্মদ ইরফান। সঙ্গে থাকবেন তরুণরা। আর স্পিনে শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে বিষ ছড়াতে থাকবেন তরুণ লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ্‌। ইদানিং ব্যাট হাতে অধিনায়ক মিসবাহ ও উমর আকমল ছাড়া আর কারও ব্যাট কথা বলছে না। অভিজ্ঞ ইউনুস খান মলিন।

সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১২৬ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। ভারতের ৫০ জয়ের বিপরীতে পাকিস্তানের জয় ৭২। আর ফলহীন থেকেছে ৪ ম্যাচ। দুই দলের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচেও জয়ের পাল্লা ভারী পাকিস্তানের। ২০১২-এর ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৩ ম্যাচ জিতেছে পাকিস্তান। সর্বশেষ গত বছর এশিয়া কাপে ঢাকার মিরপুরে ভারতের ১ উইকেটে হারায় পাকিস্তান। বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানের পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটি সেঞ্চুরি হয়েছেন।

২০০৩ সালে ১২৬ বলে ১০১ রানের সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেন পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার। একই বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৮ রান করেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। দুই দলের লড়াইয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের তালিকার শীর্ষ ৭ জন এখন দুই দলে নেই। বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৬ রান আছে পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হকের। তিনি ২০০১ বিশ্বকাপে এই রান করেন। আর পূর্বসূরিরা না পারলেও এবার ভারতের বিপক্ষে গেরো খুলতে চান এই মিসবাহ্‌। অন্যদিকে ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি জয়ের ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে মরিয়া।
পুল ‘বি’তে ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও আরব আমিরাত। আজ অপর খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ের।

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.