‘বসন্ত বাতাসে’ উৎসবের রঙ

“ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/আজ বসন্ত” – কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের চরণ দুটি সত্যি করেই এসে গেছে ঋতুরাজ। ১৪২১ বাংলা অব্দের পঞ্জিকা বলছে, শুক্রবার ফাল্গুনের প্রথম দিন। অতএব নিসর্গে বসন্তের শাসন শুরু।

এ শাসন দমনের-পীড়নের না, এ শাসন সাজিয়ে তোলার, এ শাসন নতুনের জয়গানের, এ শাসন ঐশ্বর্যশালী হওয়ার।

বসন্তের আগমনী দিনটি নিয়ে তাই মেতেছে বাঙ্গালি। উৎসবের মৌতাত আজ ঢাকা শহরজুড়ে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, আবির মাখামাখি, হাসি-ঠাট্টা, আড্ডাবাজি সবই চলছে বসন্তের রীতি মেনে।

বরাবরের মতো বসন্ত উৎসবে কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলা। বিকাল ৪টা থেকে শহরের চারটি মঞ্চে একযোগে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চারুকলার বকুলতলায়, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে, উত্তরার সেক্টর ৩-এর উন্মুক্ত মঞ্চে ছিল বসন্ত বরণের আয়োজন।

চারুকলার বকুলতলায় বিকালের অনুষ্ঠান শুরু হয় দলীয় নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে। এরপর আবৃত্তি পরিবেশন করেন তামান্না সারোয়ার। তিনি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘চৈত্রদিনের গান’ আবৃত্তি করে শোনান। আরও পরিবেশিত হয় একক ও সম্মেলক গান, নাচ এবং আবৃত্তি।

উৎসব উদযাপনকারীরা একবার চারুকলায় ঢু মারবেন না, তা হয়না। দিল্লীবাসী মুহিম সরকার জাতে বাঙ্গালি, কলকাতায় তার জন্ম। চাকরির সূত্রে ঢাকায় আসা-যাওয়া করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। প্রথমবারের মতো বসন্ত উৎসব পালন করলেন এদেশে।

আয়োজন, লোক সমাগম, পোশাক-পরিচ্ছদ, রুচির প্রকাশ- সবই তাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেন, “ঢাকাবাসীর বসন্ত উৎসব দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে।”

রবীন্দ্রসরোবরে উৎসব মঞ্চে সন্ধ্যা নামছে, জলকে পেছনে রেখে সাজানো মঞ্চে ধ্রুবশিশু শিল্পী সংগঠন দলীয় নৃত্য পরিবেশন করছিল এ সময়। এরপর মহাদেব ঘোষের গান। এরপরই পরিবেশিত হয় ‘ধনধান্যে পুষ্পেভরা আমাদের বসুন্ধরা’ গানের ছন্দে নাচ।

‘জাতীয় বসন্ত উৎসব পরিষৎ’ ১৪২১ আয়োজিত সবকটা মঞ্চের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা রাত ৮টার মধ্যে।

ছায়ানট এদিন আয়োজন করেছে তাদের বার্ষিক লোকসংগীতানুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। এবছর তারা গীতিকবি কাঙ্গাল দীনহীন, আরকুম শাহ, একেএম আব্দুল আজিজ, সিরাজুল ইসলাম ও শমসের আলীর গান পরিবেশন করছে। সংগঠনটি ২৭শে ফেব্রুয়ারি বসন্তোৎসব পালন করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গনের বটতলায় সমগীতের আয়োজনে পরিবেশিত হয় দেশীয় নাচ, গান।

তিন দিনব্যাপি ‘মাটির মেলা’ শুরু করেছে বুটিক পণ্য বিপণন সংস্থা যাত্রা। মেলায় প্রতিদিনের বিশেষ আকর্ষণ পুতুলনাচ।

ফাগুনের প্রথম দিনে বসন্তের রঙ লেগেছে বইমেলায়ও। ১৯৫২ সালে এমনই এক বসন্তের দিনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেক ভাষা শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালির রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা আদায় হয়েছিল।

২ thoughts on “‘বসন্ত বাতাসে’ উৎসবের রঙ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *