সংকট নিরসনে এবার আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত

দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবার আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে মহাসচিব খুব শিগগির তার বিশেষ দূত পাঠাচ্ছেন। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম-সংক্রান্ত দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ সপ্তাহেই ঢাকায় আসছেন। এর আগে ২০১২ ও ২০১৩ সালে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তারানকো তিনদফা ঢাকা সফর করেছেন। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সংলাপের বিষয় নিয়ে তাদের মতামত চাওয়া হয়েছে।
সংকট নিরসনের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে কোনো চিঠি দিয়েছেন কি না, তা এক সাংবাদিক জানতে চাইলে মহাসচিবের দপ্তরের উপ-মুখপাত্র এরি কানেকো ই-মেইল বার্তায় জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশ ইস্যুতে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন। গত বৃহস্পতিবারও জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিচের নিউইয়র্কে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ওঠে আসে। সেখানে তারানকোর দায়িত্বের বিষয়টি পুনরায় উল্লেখ করে ডুজারিচ বলেন, বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারানকোকে।
ঢাকা ও নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারানকো ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম-সংক্রান্ত দপ্তরের দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে তিনি সংস্থাটির রাজনীতিবিষয়ক দপ্তরের সহকারী মহাসচিব থাকাকালে বাংলাদেশ পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। পরে দপ্তর পরিবর্তন হলেও জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ নির্দেশনায় তিনি এখনো বাংলাদেশ বিষয়ে ঢাকা ও নিউইয়র্কের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করছেন। মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে বাংলাদেশের সংকট নিরসনে তিনি চলতি সপ্তাহে ঢাকায় আসতে পারেন।
গত বুধবারের ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের চলমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে শুধু উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়াই কি জাতিসংঘের জন্য যথেষ্ট? নাকি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে জাতিসংঘের বেশি কিছু করা উচিত?
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, তারানকোকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। তিনি (তারানকো) সেই কাজটি করছেন। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও ইতিবাচক উন্নয়নের ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিব ব্যক্তিগতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারও বাংলাদেশ। স্টিফেন ডুজারিচ বলেন, এখানে যে বিষয়টি বেশ কয়েকবার গুরুত্ব দিয়ে বলেছি, গত বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশের সহিংসতা এবং এর কারণে লোকজনের প্রাণহানিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত ব্রিফিংয়েও বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, প্রধান দুই দলের নেতাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। দুই দল যাতে তাদের মতপার্থক্যের অবসান ঘটাতে পারে, সে চেষ্টা করবে জাতিসংঘ।
মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করছে জাতিসংঘ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, কানাডাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের প্রস্তাব দেন। এর আগে বান কী মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি দেন।

অতঃপর তিনি দুই দফায় টেলিফোন করে দুই নেত্রীকে সমঝোতার পরামর্শ দেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও দুই নেত্রীকে টেলিফোন করে সংকট সমাধানের পরামর্শ দেন। জাতিসংঘ মহাসচিব তার বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে ঢাকায় পাঠান সংকট সমাধানের সংলাপের জন্য। তিনি দুই দলের মহাসচিব-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করলেও সফলতা আসেনি। এ অবস্থায় বর্তমানে গত কয়েকদিনে দেশে পেট্রল বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা, পুলিশের গুলি, ক্রসফায়ার ইত্যাদিতে ৭০/৭৫ প্রাণ ঝরে গেছে। শত মানুষ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। গুম, খুন, গ্রেফতার এবং সরকারের জুলুম-নির্যাতন বেড়েই চলছে।

সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর প্রধানদের বক্তব্যে বিচলিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তাই জাতিসংঘ সদর-দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক প্রেস-ব্রিফিং করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ও দেশটির ইতিবাচক উন্নয়নে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর এবং আতঙ্কিত এই পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যেই আমেরিকা, ব্রিটিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অধিকাংশ দেশই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খোদ জাতিসংঘও। বাংলাদেশের বর্তমান সহিংস অবস্থা নিরসনে এবং সকল দলের অংশগ্রহণের একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতিসংঘ ফের সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

আতিক /প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.