অনেক আগ্রহ-আকর্ষণের বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে শনিবার থেকে। আগের বিশ্বকাপগুলোতে বুঝতে পারতাম কোন কোন দল ফেভারিট। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কাউকে আগাম ফেভারিট বলা মুশকিল।
কয়েকটি ম্যাচ পার হলেই বোঝা যাবে কাদের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। তবে নিজেদের মাটিতে খেলছে বলে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড কিছুটা এগিয়ে থাকবে। এদের সঙ্গে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকারও ভালো করার জোরালো সম্ভাবনা।
অবশ্য ইংল্যান্ড ও ভারতকে খুব বেশি পিছিয়ে রাখা যাবে না। এই দুই দলেরও ভালো করার সামর্থ্য আছে। বেশ কয়েকজন মেধাবী ক্রিকেটারকে নিয়ে গড়া শ্রীলঙ্কাও একেবারে দুর্বল নয়।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে আমাদের এই অঞ্চলের দলগুলোর ভালো করা কিছুটা কঠিন হলেও এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলকে আলাদা চোখে দেখতে হবে। এই দলটির ব্যাটিং গভীরতা অনেক বেশি। তরুণ এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যানের দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলার ক্ষমতা আছে।
পাকিস্তানের শক্তির জায়গা হচ্ছে মিডল অর্ডার ব্যাটিং। তরুণ ব্যাটসম্যান শোয়েব মাকসুদের মধ্যে ইনজামাম-উল-হকের ছায়া খুঁজে পাচ্ছি। তাদের বোলিং আক্রমণও ভালো।
এই অঞ্চলের আরেক পরাশক্তি ভারত বেশ কিছুদিন ধরেই অস্ট্রেলিয়া সফরে আছে। টেস্ট সিরিজে হেরে যাওয়ার পর ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজেও ভালো করতে পারেনি তারা। ভারতের খেলোয়াড়দের মনোবলও তেমন ভালো জায়গায় নেই। তাই বলে তাদের ভালো করার সম্ভাবনা যে নেই, তা আমি বলব না। সেই সামর্থ্য তাদের আছে।
শনিবার দুই স্বাগতিক দলই মাঠে নামছে। নিজেদের মাটিতে খেলছে বলে নিউজিল্যান্ড কিছুটা চাপে থাকবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। যদিও কিছুদিন আগে হোম সিরিজে তারা এই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চটা আলাদা। নিজেদের মাঠ, নিজেদের দর্শক সবকিছুর একটা চাপ থাকবে কিউইদের ওপর। তা ছাড়া শ্রীলঙ্কা ভারসাম্যপূর্ণ দল। তাই সব মিলিয়ে এই ম্যাচটি উপভোগ্য হবে।
যদিও আমার বিশ্বাস অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এই দুই দলের মধ্যে শক্তিগত তেমন পার্থক্য নেই। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপ যেমন শক্তিশালী, তেমনি ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ বেশ ভালো। তাই লড়াইটাও বেশ জমজমাট হবে।
এত কিছুর মাঝে বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে থাকবে আমাদের দলের দিকে। জাতীয় দলের একজন নির্বাচক এবং একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমারও ভীষণ আগ্রহ দলকে নিয়ে। দেশের সেরা ১৫ জন ক্রিকেটারকেই আমরা পাঠিয়েছি। তাদের সাফল্য কামনা করি।
দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচেই হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা বেশ চাপে আছে। বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর মানসিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে তারা। যত দ্রুত খেলোয়াড়রা এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে, ততই দলের জন্য মঙ্গল।
গত এক বছর আমাদের দল বিদেশের মাটিতে কোনো সিরিজ খেলেনি। এটি আমাদের জন্য ‘মাইনাস পয়েন্ট’। তেমনি অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনও আমাদের বিরুদ্ধে। প্রথম ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয় পেলেই খেলোয়াড়রা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে। হাতে থাকা বাকি সময়ের মধ্যে আশা করি খেলোয়াড়রা নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারবে। আশা করছি, আমাদের শুরুটা ভালো হবে।
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু: জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচ।