রোববার থেকে হরতালসহ আরো কঠোর কর্মসূচি : ২০ দল

ঢাকা : আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি রোববার থেকে একই দাবিতে চলমান অবরোধের সাথে সর্বাত্মক হরতালসহ আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে ২০ দলীয় জোট।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আগামী শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করবে ২০ দলীয় জোট। একইসঙ্গে দেশে চলমান শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ঔদ্ধত্য ভঙ্গিতে ঘোষণা দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে বিএনপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা ইতোপূর্বে অনেকবার দিয়েছে। আওয়ামী মন্ত্রী-নেতারা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে আরো ঔদ্ধত্য, অসংযত ও লাগামহীন আচরণে লিপ্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পিতা সকল দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি, তিনিও পারবেন না।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নৈতিক, সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ও একটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত অবৈধ সরকার বর্গী শাসকদের কায়দায় দেশ শাসন করছে। যেখানে নিরন্তরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে নাগরিকদের সাংবিধানিক ও মানবিক অধিকার। প্রধানমন্ত্রী ‘টক শো’ ওয়ালাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন, ইতোমধ্যে অনেক সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল বন্ধ করে সেসব মিডিয়া মালিকদের গ্রেফতার করেও চিন্তাহীন হতে পারেননি তিনি। বাকশালী কায়দায় সকল সংবাদপত্র ও মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেও তিনি তৃপ্ত হতে পারবেন বলে মনে হয়না।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিনিয়ত বিএনপিকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করার বিরামহীন অপচেষ্টা ও অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে প্রতিদিন সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তদের দিয়ে সহিংসতা ও পেট্রলবোমার নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনা করে বিরোধী দলের ওপর তার দায় চাপিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি আদায়ের নিষ্ফল প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিশিষ্ট কূটনীতিবিদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের ওপর বর্বর হামলা ও হত্যা প্রচেষ্টার দায়ভারও বিএনপি’র ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত এই মামলায় তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। একই কায়দায় বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত সাবিহ উদ্দিন আহমেদের ওপরও ন্যাক্কারজনক হামলা ও তার গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল আরেক উপদেষ্টা দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর ফেনীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও বোমা নিক্ষেপ করেছে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। আমরা এ সকল ঘটনার প্রতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সমগ্র জাতি গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, গতরাতে (বুধবার) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে রাতের খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে সরকারি পেটোয়া পুলিশ বাহিনী। বেগম খালেদা জিয়া এবং কার্যালয়ে অবস্থানরত সকলেই এখনও অভুক্ত অবস্থায় আছেন। এ অবৈধ সরকার ভাতে আর পানিতে মারার নীতি অবলম্বন করে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে, টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট ক্যাবলসহ সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জলকামান, বালির ট্রাক, মরিচের স্প্রেসহ সকল ঘৃণ্য কায়দায় নির্যাতন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে খালেদা জিয়াকে একচুলও সরাতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বর ও হীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আওয়ামী সরকার সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সম্মানকে ভুলুণ্ঠিত করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বেগম খালেদা জিয়ার এবারের সংগ্রাম দেশরক্ষার সংগ্রাম, স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র থেকে দেশের মানুষকে রক্ষার সংগ্রাম, অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করার সংগ্রাম, ভোটের অধিকার, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার  সংগ্রাম। জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়া যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন। দেশের মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। শাসকশ্রেণির নির্মম পতন অবশ্যম্ভাবী। অবৈধ সরকারের ক্ষমতার সূর্য অস্তমিতপ্রায়। নিষ্ঠুর, নির্মম কায়দায় দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখে শাসকশ্রেণী নিজেদের পতন তরান্বিত করছে।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সময় থাকতে গণদাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন, অন্যথায় জনতার রোষানল থেকে কেউ আপনাদের রক্ষা করতে পারবেনা।’

তিনি আরো বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে, দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মাধ্যমে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা এবং গুলি করে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে পঙ্গু ও আহত করার প্রতিবাদে, দেশব্যাপী বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীসহ নিরীহ জনগণকে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পূণ:রুদ্ধারের দাবিতে, বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও কুক্ষিগতকরণের প্রতিবাদে, সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে, অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার দেশের সকল থানা, উপজেলা, পৌরসভা ও জেলা সদরে এবং সকল মহানগরের প্রতি ওয়ার্ডে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকার গণদাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা না দিলে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি রোববার থেকে একই দাবিতে চলমান অবরোধের সাথে সর্বাত্মক হরতালসহ আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীসহ দুর্বৃত্তদের কর্তৃক পেট্রলবোমা নিক্ষেপে যেসমস্ত নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন। গণআন্দোলনে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি। চলমান অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও স্বত:স্ফুর্তভাবে পালন করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আমি বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের সকল নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

৭ thoughts on “রোববার থেকে হরতালসহ আরো কঠোর কর্মসূচি : ২০ দল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *