বিতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় কবিরাজের কাছে ভাঙা পায়ের চিকিৎসা করার মাশুল হিসেবে বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে হারান আরিফুল ইসলাম (২৫)। এরপর থেকে এক পায়ে ভর করেই জীবন চলছে তার। কষ্ট হলেও থেমে যাননি আরিফুল। এক পায়ে ভর করেই প্রতিটি সিঁড়ি পার করে এখন তিনি রাজশাহী কলেজের স্নাতকত্তোর শ্রেণীর শিক্ষার্থী। পা হারানোর যন্ত্রণা থাকলেও শিক্ষার আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে পেরে খুশি তিনি।
আরিফুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহী বাঘা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে। হাশেম আলী ও সায়রা বেগমের চার ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। দূরন্তপনায় কেটে যাচ্ছিল শৈশবের প্রথম ধাপ। তবে মাঝখানে একটা ভুল তার সব স্বপ্নকে এলোমেলো করে দেয়।
আরিফুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় গ্রামের অন্য শিশুদের নিয়ে বিকেলে গোল্লাছুট খেলায় যখন ব্যস্ত, এমন সময় হঠাৎ বাম পা গর্তে ঢুকে ভেঙে যায় তার। ভাঙা পা ভালো করার জন্য কবিরাজের কাছে নেয়া হয়। কয়েকদিন পরেই পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কবিরাজের ভুলের মাশুল হিসেবে পা হারান তিনি।
তিনি জানান, বন্ধুদের মাঠে খেলতে দেখে কান্নায় চোখ ভিজে আসতো তার। এক পায়ে কোনো কিছুই করা সম্ভব হচ্ছিল না। ছোট্ট বয়সে জীবনের একান্ত আপনজন হয়ে যায় পায়ের বদলে লাঠি। তারপর থেকেই এক পায়ে চলার জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। চলার সঙ্গী হয় বাশের লাঠি। বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে তেঁতুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পর তেঁতুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। প্রায় হেটে যাওয়া আসা করলেও বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিল না তার।
অষ্টম শ্রেণীতে থাকাকালীন ২০০২ সালে যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের অধীনে বাঘা উপজেলায় কবিতা আবৃত্তিতে প্রথম স্থান লাভ করে সনদ পান তিনি। ২০০৪ সালে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে (বি) গ্রেডে পাশ করে তেঁতুলিয়া কলেজে ভর্তি হন। ২০০৬ সালে বাণিজ্য বিভাগে (এ) গ্রেডে পাশ করেন। নিজেকে আরও শিক্ষিত করে তুলতে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসেন। অনার্সে সুযোগে না পাওয়ায় ভর্তি হন ডিগ্রিতে। ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে (বিবিএস) দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে ওই কলেজেই তিনি স্নাতকত্তোর শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
আরিফুল ইসলাম জানান, পরিবারের ইচ্ছা ও নিজের প্রচেষ্টায় শিক্ষা জীবনের শেষ পর্যায়ে এখন তিনি। থাকছেন কলেজ হোস্টেলের নিউ ব্লকে। ক্রিকেট খেলতে না পারলেও, খেলা দেখতে ভালবাসেন। তাই সময় পেলেই ছুটে আসেন কলেজের মাঠে।
পড়ালেখার খরচ চালানোর বিষয়ে তিনি জানান, পরিবার থেকে কিছু অর্থ নিয়ে পড়ালেখার খরচ মেটান তিনি। দুটি টিউশনি করান। বাড়তি কোনো চাহিদা নেই বললেই চলে।
আরিফুল জানান, একটি পা নেই তাতে কিছুটা কষ্ট থাকলেও শিক্ষা থাকায় অনেক খুশি তিনি। প্রতিবন্ধী যে কেউ হতে পারে, তাই বলে অন্যের কাছে হাত পাতা ঠিক না। কঠোর পরিশ্রম দিয়ে মানুষের মত মানুষ হতে হবে। ঘরের কোণে নিজেকে বন্দি না করে স্বাভাবিক জীবনে আসার চেষ্টা থাকলে সবার মধ্যে থেকে নতুন কিছু বের হতে পারে।
আরিফুলের ইচ্ছা পড়ালেখা শেষে ছোটখাটো একটা সরকারি চাকরি হলেই হবে। সেক্ষেত্রে সুবিধা বঞ্চিত প্রতিবন্ধীদের পড়ালেখায় জোর দিতে চান। এছাড়া শিক্ষাকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে শিক্ষার আলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর তিনি।
Atiq Rahman liked this on Facebook.
Mohammed Younus liked this on Facebook.
Monirul Islam liked this on Facebook.
Rashed Jamal liked this on Facebook.
Anwar Bhuiyan liked this on Facebook.
রুদ্র আরাফ liked this on Facebook.