রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভোগান্তি চরমে

রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্থলোভী কয়েকজন ডাক্তার আর বহিরাগত দালাল চক্রের কার্যকলাপের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি চরমে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিকরা একাধিকবার দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করলেও জবাবদিহিতা ও প্রশাসনিক তদারকি না থাকায় অর্থলোভী ডাক্তার ও বহিরাগত দালালরা বেআইনি কার্যকলাপে আরো উৎসাহীত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের দুর্ভোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার দৈন্যদশার চিত্র পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ডাক্তাররা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত থেকে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশীর ভাগ ডাক্তার তা মানছেন না। তারা অনেকেই ১০টার পরে এসে আবার ১টার আগেই চলে যান। ডাক্তাররা সঠিক সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না আসলেও কাউকে যেন জবাবদিহিতা করতে হয় না। অর্থলোভী কয়েকজন ডাক্তার প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ফোন আসা মাত্রই রোগীদের বসিয়ে রেখেই সেখানে ছুটে যান।

সোমবার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার মো. নাজমুল হকের চেম্বারে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন রোগী ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে আছেন। ডাক্তার চেম্বারে না থাকার কারন জানতে চাইলে রোগীরা বলেন, স্যারের মোবাইলে ফোন এলে প্রায় এক ঘন্টা আগে তিনি আমাদের বসিয়ে রেখে হাসপাতালের বাহিরে চলে যান।

পরে সূত্রে জানা যায়, ডাক্তার মো. নাজমুল হক ওই সময়ে হাসপাতাল সংলগ্ন মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাইভেট রোগী দেখছেন। সত্যতা যাচাই করতে স্থানীয় সাংবাদিকরা মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর তিনি ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বের হওয়ার সময় তার ছবি তুলতে গেলে তিনি মুখ ডেকে হাসপাতালের দিকে দ্রুত চলে যান। এসময় তিনি দম্ভ করে সাংবাদিকদের বলেন, পত্রিকায় রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অনেক সংবাদ প্রকাশ করেছেন, কই আমাদেরতো কিছুই হয়নি। এখনো লিখলে কিছুই হবে না।

বিষয়টি তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুবুল আলম ও লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জেন ডা. এম.জি. ফারুক ভূঁইয়াকে জানানো হলে তাঁরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

সংবাদটি ৭/৮টি দৈনিক ও ৫/৬টি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও এ যাবত তদারকি ও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডাক্তার মোজাম্মেল হক ও মেডিকেল অফিসার ডাঃ নাজমুল হকসহ কয়েকজন ডাক্তারকে এখনো অফিস চলাকালিন সময়ে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখতে ছুটে যেতে দেখা গেছে।

এছাড়াও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ থেকে শুরু করে ডাক্তারদের চেম্বারে প্রতি মুহুর্তে দেখা যায় দালালদের আনাগোনা। ডাক্তারদের চেম্বার থেকে রোগীরা বের হতে না হতে এক শ্রেণীর দালাল চক্র ডাক্তারদের দেয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য তাদেরকে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। এতে রোগী ও অভিভাবকগন হয়রানির শিকার হচ্ছেন অহরহ।

সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার ২দিন দেখা যায় ডাক্তারদের রুমের ভিতরে রোগী থাকাকালীন সময়ে বাহিরের বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ভীড়। এ কারণে রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় ডাক্তাররা দুঃস্থ রোগীদের না দেখে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ আলোচনা নিয়েই বেশী ব্যস্ত থাকেন। ফলে দূর দুরান্ত থেকে আসা রোগীদেরকে ডাক্তারদের অবহেলার কারণে চিকিৎসা ছাড়াই বাড়ি ফেরত যেতে হয়।সুত্র,রামগঞ্জ নিউজ

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *