চলমান সংকট সমাধানে তীব্র হচ্ছে সংলাপের তাগিদ। ২০ দলের টানা অবরোধে জীবন যাত্রা অচল এবং ভেঙে পড়া অর্থনীতি সচল করতে সংলাপের উদ্যোগ নিতে সোমবার নাগরিক সমাজের পক্ষে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিঠি দেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখার স্বার্থে আওয়ামী লীগ এ চিঠিতে ‘ভিন্ন মতলব’ খুঁজলেও জোরালো হচ্ছে সংলাপের দাবি। দেশের সুশীল সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী দেশগুলো রক্তপাত বন্ধ করে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে সংলাপের তাগিদ দিচ্ছে। ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা এ দাবিতে সোচ্চার। গতকালও ইইউ রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্রুত সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।
সংলাপ ইস্যুতে ক্ষমতাসীনরা নাগরিক সমাজের উদ্যোগকে নেতিবাচক হিসেবে দেখলেও নাগরিক সমাজ, সুজন এবং বিশিষ্টজনরা সমঝোতার লক্ষ্যে সংলাপের নানা ফর্মুলা হাজির করছেন। বিলম্বে হলেও নাগরিক সমাজের এ উদ্যোগকে বিএনপি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করছে। আর ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সংলাপের তাগিদে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা পজেটিভ হিসেবে দেখছেন। এর আগে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ চলমান সংকট সমাধানে নির্বাচনকালীন সময়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তার প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। অতঃপর তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে লেখা পত্রেও জাতীয় স্বার্থে সংকট সমাধানের উদ্যোগের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিছু সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবী এই পদক্ষেপকে বাঁকা চোখে দেখলেও সঙ্কট সমাধানে ব্যাকুল জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে তার উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দ্য ডেইলি স্টার পরিচালিত এক জনমত যাচাইয়ে দেখা যায়- দেশের শতকরা ৫৭ ভাগ মানুষ তার উদ্যোগের পক্ষে রয়েছে।
৭ ফেব্রুয়ারি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন। সেখানে সংলাপের জন্য দুই পক্ষকে রাজি করানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে দেয়া হয়। চিঠি দেয়ার পর নাগরিক সমাজের উদ্যোগকে বিতর্কিত হিসেবে অবিহিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে গতকাল বলেছেন, কার সঙ্গে আলোচনা করব? হত্যাকারীর সঙ্গে? আগুনে যে পুড়িয়ে মারে, তার সঙ্গে? নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নেয়া সংলাপের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা এগুলো বলছেন, তারা দেখছেন না যারা সন্ত্রাস করছে, জঙ্গিবাদ করছে? তারা আগে খালেদা জিয়াকে মানুষ খুন করা থেকে বিরত থাকতে বলুক। এ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, পেট্রোলবোমা হামলা কারা করছে তা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু সংলাপ কেন নয়? আওয়ামী লীগ কী শান্তি বাহিনীর নেতা সন্তু লারমার সঙ্গে সংলাপ করেনি? পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যাকারী বিডিআরের অফিসারদের সঙ্গে আলোচনায় বসে নি? সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, সংকটের সমাধানের জন্য সংলাপের বিকল্প নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান বলেন, দেশের কল্যাণের চেয়ে একে-অপরের দোষত্রুটি ধরতেই বেশি ব্যস্ত বড় দুই দল। এক জোটকে তীব্র হচ্ছে সংলাপের তাগিদ পাকিস্তানের দালাল আখ্যা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলতে চাই। আরেক জোটকে বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করে ভারতে পাঠাতে চাই। দেশের শান্তি রক্ষায় দুই দলকে সংলাপে বসতে হবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির গায়ে সন্ত্রাসীর লেবেল এঁটে তাদের সঙ্গে সংলাপে রাজি হচ্ছে না। সারা দেশে আড়াই থেকে তিন কোটি ভোটার সমর্থকের দল বিএনপিকে সন্ত্রাসীর আখ্যা দেয়া ঠিক নয়। বর্তমানে দেশে যে সহিংসতা চলছে, পেট্র্ােলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, তার দায় কোনো দলই স্বীকার করছে না। অথচ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে সন্ত্রাসের সঙ্গে আপোষ না করার কথা বলা হচ্ছে। আদালতে প্রমাণ ছাড়া কোনো দল বা গোষ্ঠী সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা এক ধরনের অপরাধ। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। অথচ সরকার সেটা করতে ব্যর্থ। দেশের শান্তি রক্ষায় দু’দলকে অবশ্যই সংলাপের দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে লগিবৈঠা দিয়ে মানুষ খুনের দৃশ্য প্রমাণিত। আর বিএনপির টানা অবরোধে কারা পেট্রোলবোমা মারছে তা পরিষ্কার নয়। কাজেই কোনো দলের গায়ে সন্ত্রাসীর লেবেল পড়ে সে বিচার কোনো পক্ষ নয়, জনগণকে করতে হবে। সংলাপে না বসলে দেশ ও গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষমতাসীনদের চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনরত বিএনপিকে নিজ নিজ গতিপথ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সরকারের উচিত ভিন্ন মতের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং বিএনপির উচিত রাজপথের সহিংসতা বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করা। এ প্রেক্ষিতে সঙ্কট সমাধানে তিনদফা প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকায় কর্মরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা যে বৈঠক করেছেন সেখানেও সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের তাগিদ দেয়া হয়। সরকারের মন্ত্রী ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের যারাই বৈঠক করছেন তারাই সংকট সমধানে সংলাপের তাগিদ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে সে তাগিদ স্বীকার না করার কৌশল আওয়ামী লীগ নিলেও বিএনপি তা স্বীকার করছে।
এদিকে টানা অবরোধে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। ঢাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সারাদেশ থেকে। সর্বমহলে ত্রাহি অবস্থা। তারপরও সরকার রাজনৈতিক সংকট স্বীকার না করে র্যাব-পুলিশ আর বিজিবি দিয়ে জুলুম-নির্যাতন, হামলা-মামলার মাধ্যমে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার পথে হাঁটছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। ব্যবসায়ীরা সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমধানের দাবি জানিয়েছে। প্রয়োজনে আইন করে আগামী ২০ বছর হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার দাবি জানায় তারা। প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে তারা তথ্য দিচ্ছে। অথচ সরকার দাবি করছে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে। অবরোধের প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়ছে না। কর্মদিবসে এসএসসি পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পুলিশ প্রহরায় এবং নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েও বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে পারছে না। অতঃপর রাত ৯টার পর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী, এমপি, নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক দাবি করলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বীকার করেছেন ঢাকার অবস্থা ভাল হলেও সারা দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দেরিতে হলেও নাগরিক সমাজ সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণে দুই পক্ষকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সরকার এ উদ্যোগকে বাঁকাচোখে দেখছে। শামসুল হুদার চিঠি দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এ উদ্যোগকে কঠোর সমালোচনা করে বিবিসিকে বলেন, এ উদ্যোগে শামসুল হুদা ছাড়া অন্য সবার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। এদের নিশ্চয়ই এজেন্ডা আছে। যে রাতে এইচটি ইমাম বিবিসির সঙ্গে এ প্রতিক্রিয়া দেন সেদিন দিনের বেলা মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিকদের ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলব বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই কুশীলবরা সংলাপের এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সংলাপ উদ্যোক্তাদের মধ্যে ‘ভিন্ন মতলব’ রয়েছে দাবি করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এরা সবাই দলীয়। এরা নিরপেক্ষ মনোভাব পোষণ করে না। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, নাগরিক সমাজের সংলাপের প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। পেট্রোলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যাকারীদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। সন্ত্রাস, নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতাকে আড়াল করতে এবং একটি গণতান্ত্রিক দলকে তাদের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে তারা। এ প্রসঙ্গে সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আওয়ামী লীগ অবশ্যই গণতান্ত্রিক দল। কিন্তু ৫ জানুয়ারির যে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন তাতে কি জনগণ ভোট দিতে পেরেছে? সংকট সমাধানে সংলাপ হতে হবে। এ মুহূর্তে দেশে সংলাপের পরিবেশ না থাকায় রাষ্ট্রের অভিভাবক প্রেসিডেন্টকেই এগিয়ে আসতে হবে। ৫ জানুয়ারি আমরা ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছি। এই বঞ্চিত হওয়ার জন্য এই দুই দলই দায়ী। তিনটি বিষয়ে আমাদের ঐকমত্য হতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার কী ধরনের হবে? নির্বাচনকালীন আইন-কানুন, বিধি-বিধান ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই আসুক তাদের কতগুলো সংস্কার করতে হবে। নতুন সামাজিক চুক্তি গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় সনদ তৈরি করে সবাইকে স্বাক্ষর করতে হবে। প্রেসিডেন্ট উদ্যোগ নিলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথ বের হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দেশে যা চলছে কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে তা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আমরা দেশের শান্তি চাই। বিবেকের তাড়নায় দুদলকে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছে দিতে চিঠির মাধ্যমে শান্তি সংলাপের আহবান জানিয়েছি। দেশের অর্থনীতির বিপুল ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ লিখেছেন, যে অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশ যাচ্ছে, তা কোনোভাবে সুস্থ বলা যাবে না। একটা অসুস্থ অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিটি মানুষ আতঙ্কে, প্রতিটি মানুষ নিরাপত্তাহীন, মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত। অর্থনীতিও ভেঙে পড়ছে। এ অবস্থা দেশকে সম্মুখ পতনে ঠেলে দিচ্ছে। বিদেশের কাছে বাংলাদেশ এখন সংঘাতের দেশ, সহিংসতার দেশ। এই মুহূর্তে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। সংলাপ হলেই দেশ স্বাভাবিক হবে। একমাত্র সংলাপের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা সংলাপের কথা শুনলেই ভূত দেখার মতো আতকে উঠলেও আন্দোলনরত বিএনপি জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের পাশাপাশি সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধান করার পক্ষ্যে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপ ব্যর্থ হলে, ফের সংলাপের মাধ্যমেই এ সঙ্কটাবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। দিল্লীর ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসা উচিত। সংলাপে সুশীল সমাজের উদ্যোগের পাশাপাশি জাতিসংঘও ভূমিকা রাখলে বিএনপি ‘না’ করবে না। কারণ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থেই বাংলাদেশে বর্তমানে যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে, তা দ্রুত সমাধানে নজর দিতে হবে।
দুই দলের সংলাপের উদ্যোগ নেয়া প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, এটা নেহায়েতই একটি নাগরিক দায়িত্ববোধ। একজন মানুষ সমাজ বা রাষ্ট্রের তেমন কেউ নয়, তিনি কি এরকম বোধে জাগতে পারেন না? সঙ্কট সমাধানে জাতীয় কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল এক দলের বদলে আরেক দল ক্ষমতায় আসে। এমন চললে দেশ এগোবে না। সব পক্ষকে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার কর্মসূচি এখনই হাতে নিতে হবে। দুটি দল বা দুই জোটের সঙ্গে নয়, সংলাপ হতে হবে জাতীয়। দেশের চলমান সঙ্কট মোকাবিলায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান মান্না লিখেছেন, সংলাপ এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। একেবারেই রাম-শ্যাম, যদু-মধু যদি দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে কিছু বলতে চায়, তবে কি বলব নাকি, এই বেটা তুই কেরে? তোর ন্যাশনাল আইডি দেখা। সংলাপের প্রস্তাবে সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে তা সচেতন মহলকে রীতিমতো বিস্মিত করেছে। সংলাপের প্রয়োজন। কোনো শর্ত নেই। উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ বলছে সরকার পক্ষ বলুক তারা সংলাপ করবে। আন্দোলনকারীরা বলুক তারা সংলাপের ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার পক্ষ তো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে না। উল্টো তারা বলছেন, আঁততায়ীর সঙ্গে সংলাপে বসা যেতে পারে না। কী অদ্ভূত কথা। আপনারা শান্তি বাহিনীর সঙ্গে বসতে পেরেছেন, বিডিআরের বিদ্রোহীদের সঙ্গে বসতে পেরেছেন আর এখন বেগম জিয়াকে আঁততায়ী বলছেন। এই বেগম জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা আগে বসেননি? আবদুল জলিল-আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সংলাপ তো ইতিহাস। বলবেন সেই সংলাপ তো সফল হয়নি। কিন্তু ১৯৮৭ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর ৮৭ পর্যন্ত দুই নেত্রী এককভাবে অথবা তাদের সহযোগীসহ যে বৈঠকগুলো হয়েছিল তা তো সাফল্যের পালকে ভরপুর। জাসদ সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, অবশ্যই সংলাপ হতে হবে। তবে দুই দলের মধ্যে নয়, জাতীয় সংলাপ হতে হবে। বল এখন সরকারের হাতে। বিরোধী দলের হাতে সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই। নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন গঠনসহ যা যা করার, সরকারকেই করতে হবে।
রাজনীতিকরা সবাই দাবি করেন প্রতিপক্ষ নয়; তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও সিবিপি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রায় দু’টি ঘটনার কথা টকশোতে উত্থাপন করেন। আসিফ নজরুল বলে থাকেন, ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও ’১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অগ্রহযোগ্য। জনগণ এসব নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। তবে ’৯৬ সালের নির্বাচন ও ’১৪ সালের নির্বাচনের পর যা ঘটেছে তা সবাই জানেন। আর মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রায়ই সবার জানা কাজীর বিচারের গল্প শোনান। দুই নারী একটি ছেলেকে নিজের ছেলে দাবি করায় এলাকাবাসী বিপদে পড়ে যায়। কোনোভাবেই দুই নারীকে মানাতে না পেরে সবাই কাজীর দরবারে হাজির হন। কাজী সব শুনে ঘোষণা দেন দুই নারীই ছেলেকে নিজের দাবি করছেন। কাজেই ছেলেটিকে দুই টুকরো করে দু’জনের হাতে দিয়ে দেয়া হবে। কাজীর এ ঘোষণা শোনার পর এক মহিলা নীরব হয়ে যান। অন্য মহিলা হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, সন্তানের দরকার নেই। ওনাকেই ছেলেকে দিয়ে দেন। আমাদের নেতানেত্রীদের নিখাদ দেশপ্রেম নিয়ে এক অধ্যাপক আর এক রাজনীতিকের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য।
আতিক/প্রবাস