ভোটের তালিকার মত বাংলাদেশে এখন মৃতের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ইমরুল কায়েদের নামে কোন মামলা ছিলনা। আত্মীয়ের বাসা থেকে ইমরুলকে ধরে নিয়ে যেয়ে হত্যা করা হয়। এ পর্যন্ত যাদেরকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে তাদের সবাইকে তালিকা ধরেই হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ জানত ইমরুল কায়েস কার বাসাতে ঊঠবে। ইমরুল কায়েস হয়তো ভেবেছিল যেহেতু সে কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয় তাই সে স্বচ্ছন্দে আত্মীয়ের বাসাতে বেড়াতে যেতে পারবে। কে কোথায় কার বাসাতে কখন বেড়াতে যাচ্ছে সেটা পুলিশের জানার কথা না। মৃতের তালিকা প্রস্তুত করার কারনেই তালিকা ধরে মৃত্যু এসে সময়মত পৌছে যাচ্ছে।
বিরোধীদলের কর্মীরা কে কখন কোথায় থাকে সেটা পুলিশ বা আওয়ামীলীগের সদস্যরা কিভাবে জানে ?
জামাত শিবিরের ভেতরে অনেক আওয়ামীলীগের সদস্য আছে যারা গোয়েন্দা হিসাবে কাজ করে এবং বিরোধীদলের সদস্যরা কে কখন কোথায় থাকবে সেই খবর খুনীর কাছে পৌছে দেয়। শিকারের খবর খুনী জানে কিন্তু খুনীর খবর শিকার জানেনা বা রাখেনা।
বিএনপীর অনেক সদস্য আছে যারা আওমীলীগের সাথে বিবাহসূত্রে জড়িত। এমন অনেক সদস্য আছে যারা আওয়ামীলীগের সদস্যদের সাথে এক সাথে বড় হয়েছে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্রে একসাথে থেকেছে। একজন অন্ধভাবে মুজিবকে ভালবাসে অন্যজন অন্ধভাবে জিয়াকে ভালবাসে। অন্যজন অন্ধভাবে অধ্যাপক গোলাম আজমকে ভালবাসে। একজন মুজিবের সমালোচনা সহ্য করতে পারেনা। অন্যজন জিয়ার সমালোচনা সহ্য করতে পারেনা। আর একজন অধ্যাপক গোলাম আজমের সমালোচনা সহ্য করতে পারেনা। এরা সবাই অন্ধকারে বাস করে। ওরা সবাই শিক্ষিত, স্মার্ট ও জ্ঞানী কিন্তু মুজিব বা জিয়া বা অধ্যাপক গোলাম আজম প্রসংগে ওরা সম্পুর্নভাবে অন্ধ। ওরা ওদের প্রিয় নেতার প্রশ্নে কোন সময় আপোষ করেনা। মুজিবের প্রসংগে আজ আর কিছু লিখবনা। জিয়ার প্রসংগে লিখি। জিয়ার ভুলের কারনেই আমরা এখন ১৯৭১ সালের গনহত্যার বছরকে আবার আলিঙ্গন করে নিয়েছি।
এইবারে একটু বিশ্ব ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়ি। ৯/১১ এর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ভেতর দিয়ে সাই সাই করে রিমোট কন্ট্রোলড প্লেন চলে গেলো সকালে। সাথে সাথে অফিস বন্ধ হয়ে গেল। বাসায় ফিরে এসে টিভিতে চোখ এটে বসে রইলাম। কিছুক্ষন পরে দেখি সন্ত্রাসীদের গ্রুপ ছবি দেখানো হচ্ছে। এই গ্রুপ ছবি দেখে আমার মনে হয়েছিল যে ৯/১১ হবার অনেক আগেই এই ছবিগুলো কম্পোজ করে রাখা হয়েছে। এই সন্ত্রাসীগ্রুপের ছেলেরা কে কোথায় ছিল কিভাবে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের বিভিন্ন জাগাতে ট্রেনিং নেয় সব কিছুর এত বিস্তারিত ও নিখুঁত বর্ণনা শুনে মনে হয়েছিল এইসব কাহিনী অনেক আগেই তৈরি করে রাখা ছিল। টেলিকাস্ট করা হয়েছিল ৯/১১ এর পরে। এত কম সময়ের ভেতরে এত সব খবর ওরা বের করতে পারলো কিন্তু এইটা জানতোনা যে এরা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আক্রমণ করবে? শুধু এই খবর ছাড়া আর সব খবরই সিআইএর কাছে ছিল। বিশেষ প্লেনে করে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র থেকে বিন লাদেন পরিবারকে নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া, আফগানিস্তান আক্রমণ করা, আফগানিস্তান থেকে যাকে পেয়েছে তাকে বন্দী করে এনে গুয়ানতানামো বে কিউবাতে রাখা ও নির্যাতন করা। সব কিছুই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত । সাজানো। সাড়া বিশ্বের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মুসলমানদের উপরে নির্যাতন ও নিপীড়নের হিড়িক দেখে বিশ্বাস করেছিলাম যে এইসব কিছুই ছিল সাজানো নাটক। ৯/১১ এর সাথে জড়িত সন্ত্রাসী গ্রুপের যে ছবি সাড়া বিশ্বকে দেখানো হয় বাস্তবে এইসব মানুষগুলোর আদৌ কোন অস্তিত্ব ছিল কিনা বা অনেক আগের কিছু মৃত মানুষের ছবি সাজিয়ে এই গল্প তৈরী করা হয়েছিল কিনা সেটা বলা মুশকিল। ৯/১১ নাটক মঞ্চস্থ হবার আগে মস্ত লম্বা এক মৃত্যু তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সাড়া বিশ্বের পুঁজিপতিদের সব শত্রুদেরকে এক ঢিলে ঘায়েল করার জন্য ৯/১১ নাটকের সাথে আক্রমন, বোমাবর্ষন, ও ধ্বংস করা হয়েছিল দুইটা দেশকে আর হত্যা করা হয়েছিল পাঁচ থেকে ছয় মিলিয়ন নিরীহ মানুষকে। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি এই দুইটি শহরে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের আনবিক বোমার প্রতিক্রিয়ার কারণে এখনও এই দুই শহরে পঙ্গু সন্তানের জন্ম হয় ঠিক তেমনি ৯/১১ এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে সাড়া বিশ্বে এখনও ইরাকে শিইয়া, সুন্নি, কুর্দ, আরবেরা হানাহানি করছে। আফগানিস্তানে মোজাহেদীনদের সাথে সন্মিলিত মিলিশিয়ারা এখনও যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। পাকিস্তানের সোয়াতে মার্কিন সৈন্যরা দ্রোনে করে বোমা ফেলে একইভাবে ভিতি সৃষ্টি করছে যাতে খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকা থেকে লোকজন অন্য কোথাও চলে যায়।
এইবারে ফিরে আসি ১৯৭১ সালে যখন বুদ্ধিজীবিদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। বেশীরভাগ বুদ্ধিজীবির মৃত্যু হয় অক্টোবর, নভেম্বর, ও ডিসেম্বরে। সিআইএ আর “র” সব সময়ই বন্ধু ছিল। “র” কে সিআইএ পেন্টাগনে ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করেছে। এরা একে অন্যের সাথে তথ্য শেয়ার করে। পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ও ভারতের এই দুইটি গোয়েন্দা প্রতিষ্টান সর্বকালেই বাংলাদেশে পাশাপাশি থেকে সহকর্মীর মত কাজ করেছে। এদের মূল উদ্দেশ্য হলো পুঁজিপতিদের স্বার্থ সংরক্ষণ । এরা যা কিছুই করে সব কিছুই করে পুঁজিপতিদের মুনাফাকে বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ করার জন্য। ৯/১১ বা ১৯৭১ বা ১৯৭২-২০১৫ সালগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন। নেতা হত্যা, নেতা বদল, সরকার বদল, মানুষ হত্যা, জিয়া হত্যা, বিডিয়ার হত্যা, সীমান্তে “ট্রিগার হ্যাপী”, ১৯৭৫ সালের বীর হত্যা, সব হত্যা, সব পরিবর্তন, সবকিছুই সরাসরি এদের দালাদের মাধ্যমে এদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মোদ্দা কথা হলো পুঁজিপতিরা যেখান থেকে সম্পদ লুট করবে সেখানে এমন কেউ বেঁচে থাকতে পারবেনা যারা সেই সম্পদ লুটের বিরোধিতা করতে পারে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ক্রশফায়ারে হত্যা করা হচ্ছে ভয় দেখানোর জন্য । অপরাধীদের সাথে সবাই হাত মেলাবে। আলোচনাতে বসবে । সেজন্য হাজার খানেক মানুষ হত্যা করা কোন ব্যাপার না। বাংলাদেশ জনবহুল। ঘরে ঘরে একটা লাশ ফেললেও আরো চার পাঁচজন বাকী থাকবে । ক্রশফায়ার থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রতিবেশী সব বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের কার্যকলাপের উপরে চোখ রাখতে হবে। কারুকেই বিশ্বাস করা যাবেনা। খুনী যদি তার শিকারকে অনুসরণ করে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে তাহলে শিকার কেন আগে থেকেই খুনীকে সনাক্ত করতে পারবেনা ?
খুনী যদি শিকারের তালিকা বানিয়ে তালিকা অনুযায়ী শিকারকে অনুসরণ করে জাগা মত পৌছাতে পারে তাহলে শিকার কেনো বুঝতে পারবেনা যে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে ?
মৃত্যু আপনাকে খুঁজে নেবার আগে আপনি কেনো খুনীকে খুঁজে পাচ্ছেন না? আপনারা যারা ইসলামে বিশ্বাস করেন তাদের তো জান বাঁচানোর জন্য চেস্টা করা উচিৎ। মুসলমান মাথায় কাফন বেঁধে জন্ম নেয় কিন্তু অন্যায়কে নিশ্চিহ্ন করার জন্য, অপরাধীকে পরাভুত করার জন্য মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপরাধীর সাথে লড়াই করে । যারা অপরাধীর কাছে আত্মসমর্পন করে তারা কাপুরুষ, তারা দুর্বল। একজন অপরাধী সব সময়ই দুর্বল থাকে। যিনি সত্যের পথে আছেন তিনি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন সেটাই স্বাভাবিক কারণ তিনি বীর তিনি নৈতিকভাবে দুর্বল নন।
অবরোধের ফলে অবৈধ সরকার হত্যাযজ্ঞ শুরু করবে এটা সবাই জানে। অথচ এরা সবাই খালি হাতে মাঠে নেমেছে। হয়তো ভেবেছে – বাস, ট্রেন, গাড়ী জ্বালিয়েই ক্ষমতা দখল করে ফেলবে। খুনীদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য বিশদলের কর্মীদের কারু কোন প্রশিক্ষণ নাই। বিশদলের বড় বড় নেতারা দূরে আছে। দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত যারা তারা ক্রশফায়ারের বলি হচ্ছে প্রতিদিন। খুনীরা সংখ্যায় কম – শিকারেরা সংখ্যায় বেশী। খুনীদের হাতে মৃতের তালিকা। শিকারেরা বাঁচার উপায় জানেনা। শিকারেরা ভীত। যেকোন সময় মৃত্যু এসে হাত রাখবে কাঁধে। অথবা শরিরের উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দেবে। প্রতিরক্ষার কোন ব্যবস্থা নাই। সাড়া দেশ অরক্ষিত। সাড়া দেশ কারাগার। বিশদল খালি হাত। অবৈধ সরকার সশস্ত্র। ঢাল নেই তলোয়ার নেই বিশদল নিধিরাম সর্দার। তালিকা ধরে এগিয়ে আসছে খুনীরা। সেই ১৯৭১ সালের মত। সাড়া দেশ থেকে বিরোধিতাকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। বিরোধিতাকে হত্যা করতে হবে। হয় ভয় করো, আপোষ করো না হয় মরো। খালি হাত মানুষের উপর দিয়ে উঠে যাচ্ছে ট্রাক। একের পর এক লাশে ছবি আসছে পত্রিকাতে।
বাংলাদেশ সরকার হিসাবে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামীলীগ কার প্রতিনিধিত্ব করবে? লাশের ?