রশাসননির্ভর আওয়ামী লীগ, দলের কর্মসূচি নেই

চলমান রাজনৈতিক সংকটেও সারা দেশে প্রায় নিষ্ক্রিয় আওয়ামী লীগ। প্রশাসননির্ভর আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী সাংগঠনিক তৎপরতা দূরে থাক বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারি দলের কর্মসূচিও অনেকটা অনুপস্থিত। সারা দেশে প্রশাসনের ওপর নির্ভরতা বেড়ে গেছে আওয়ামী লীগের। প্রভাবশালী মন্ত্রীরা নেই নিজ নিজ এলাকায়। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বেশির ভাগ সদস্যের দেখা মেলে না রাজপথে। অবরোধ-হরতালের নামে দেশব্যাপী যখন সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের দানবতা সেই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় আর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন ব্যানারে কিছু চেনামুখের প্রতিবাদ। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুর্বল উপস্থিতিতে বোঝা যায় সংগঠনটি কতটা ক্ষয়িষ্ণু পর্যায়ে। মাঝে-মধ্যে মহানগর সাধারণ সম্পাদক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী রাজপথ গরম করলেও ক্ষণিকের জন্যই এই প্রতিবাদী সভা, সমাবেশ। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আর বঙ্গবন্ধু একাডেমির নিয়মিত শোডাউনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতাদের উপস্থিতিও যেন অনেকটা টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ দেখানোর মতোই। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নেই স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি। তবে গত রবিবার রাজধানীতে ১৪ দলের মানববন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে অদৃশ্য সন্ত্রাসী ও বোমাবাজদের টনক নড়েছে অনেকটা। এ অবস্থার ধারাবাহিকতা দেখতে চায় নিরীহ জনগণ। পরিস্থিতি ক্রমাগত নাজুক হলেও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতারা এলাকা ছেড়ে রাজধানী ঢাকায়। দলের প্রায় আড়াই শতাধিক এমপির অধিকাংশই চলমান সংকট মোকাবিলায় পা রাখেননি নিজ নিজ এলাকায়। জেলা ও উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের তৃণমূল আওয়ামী লীগেও নেই কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা। প্রশাসনকে রাজনৈতিক সহায়তা দিতে খোদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশও উপেক্ষিত হচ্ছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন যখন চিন্তিত সেই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের এমন নীরবতা দলের অভ্যন্তরেই প্রতিনিয়ত প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। অনেকের মুখেই উচ্চারিত হচ্ছে দলের হাইব্রিড ও সুবিধাবাদীদের বিষয়টি। সূত্রমতে, বিএনপি-জামায়াত আহূত অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির এক মাস অতিক্রম করলেও কেন্দ্র থেকে দেওয়া নির্দেশনা মানছে না তৃণমূল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নীরবতার কারণেই বিএনপি-জামায়াত প্রভাবিত এলাকায় সুযোগ নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা। প্রতিদিনের ব্যবধানে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের তালিকা। পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে দেশ। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চলমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দলীয় এমপিরা অনেকটাই দর্শকের ভূমিকায়। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সরাসরি দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন এমপিদের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও দলীয় এমপিদের অনেকেই এলাকামুখী হননি। প্রভাবশালী মন্ত্রী, সিনিয়র নেতা এবং এমপিরা কেবলই ব্যস্ত গণভবনে চেহারা দেখাতে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অনেকের ওপর বিরক্ত। সূত্রমতে, টানা এক মাসেরও বেশি সময় বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও মনে করছেন, চলমান সংকট মোকাবিলায় প্রশাসনের জন্য রাজনৈতিক সহায়তা জরুরি। আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ নেতারাও মনে করছেন এই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের মাঠে থাকা জরুরি। সূত্রমতে, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও দলীয় এমপিদের এলাকায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিকূল হাওয়ায় দলের অধিকাংশ এমপির এলাকার পরিবর্তে ঢাকায় থাকাটাই পছন্দের। মাঠপর্যায়ের আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের অভিমত, বিএনপি-জামায়াতের বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সবার আগে দলীয় কর্মীদের মাঠ দখল জরুরি। প্রশাসনেরও একই অভিমত। প্রশাসন মনে করে, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও জোটের সমর্থকরা পাশে থাকলে প্রশাসনও কাজ করতে পারে নির্ভয়ে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয়ভাবেই আমাদের সিদ্ধান্ত রয়েছে দলের এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ এলাকায় মাঠে সক্রিয় থাকবেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিকভাবে ভূমিকা রাখবেন। এমনকি সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দলের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে এমপিরা এলাকায় যাওয়া শুরু করেছেন। আশা করি আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বাকিরাও এলাকায় যাবেন।

৪ thoughts on “রশাসননির্ভর আওয়ামী লীগ, দলের কর্মসূচি নেই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *