জাতীয় সংলাপ বিষয় নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা

দেশের চলমান সংকট ও সংঘাতপূর্ণ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় সংলাপের বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উঠে এসেছে। এ বিষয়ে কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী সরব ছিলেন বলে বেঠক সূত্রে জানা গেছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় সংলাপের বিষয়টি উঠে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী জানান, বৈঠকে কয়েকজন মন্ত্রী বিশিষ্ট নাগরিকদের সংলাপের উদ্যোগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, আজকে যেসব বিশিষ্ট নাগরিক জাতীয় সংলাপের কথা বলছেন-তাদেরকে আমরা চিনি। এসব বিশিষ্ট নাগরিকরাই ১/১১ আগে সংলাপ নিয়ে সরব ছিলেন। এদের অনেকেই ছিলেন ১/১১-এর কুশীলব। আজ আবার তারাই সংলাপের নামে মাঠ গরম করছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশিষ্ট নাগরিকরা সংলাপের কথা বলেন, কিন্তু সহিংসতা বন্ধের জন্য কথা বলেন না। তাদেরকে সহিংসতা বন্ধের জন্যও সোচ্চার হতে হবে। উল্লেখ্য, প্রধান দুই দলের অনড় অবস্থানের মধ্যে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। এরই অংশ হিসেবে তারা গত শনিবার রাজধানীতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
তিন আইনের কঠোর প্রয়োগে নাশকতা বন্ধ করবে সরকার : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের লাগাতার অবরোধ-হরতালের মধ্যে চলমান নাশকতা বন্ধে একসঙ্গে তিনটি আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। সন্ত্রাস দমন আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দ্রুত বিচার আইনের প্রয়োগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মত এসেছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এ বিষয়ে একাধিক মন্ত্রী কথা বলেন বলে জানিয়েছে বৈঠক সূত্র।
এছাড়া প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও নাশকতা মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা হয় মন্ত্রিসভায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। সূত্র জানায়, দেশব্যাপী চলমান নাশকতা নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনার সূত্রপাত করেন কয়েকজন মন্ত্রী। পরে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে আইনের বিষয়ে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, এসব নাশকতা মোকাবিলায় নতুন করে আইন প্রণয়নের কোনো প্রয়োজন নেই। সন্ত্রাস দমন আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দ্রুত বিচার আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে নাশকতা বন্ধ করা যাবে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন বলে জানায় বৈঠক সূত্রটি। এছাড়া দেশব্যাপী পেট্রোলবোমায় আহতদের সুচিকিৎসার ব্যাপারেও মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়।
অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যা : সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘মারাত্মক’ ক্ষতি হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই দিয়েছেন বৈঠকে। একজন মন্ত্রী বলেন, আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় সবজি, মালামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষতি হওয়ার বিষয়টিও তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন।
টেলিযোগাযোগ অধিদফতর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন : মন্ত্রিসভার বৈঠকে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কার্যসম্পাদনে পেশাগত ও কারিগরি সহায়তা দেবে ওই অধিদপ্তর।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা জানান, নবগঠিত এ অধিদপ্তরে বিলুপ্ত বিটিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয় করা হবে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (বিটিটিবি) বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লি. (বিটিসিএল) এবং বাংলাদেশ সাব-মেরিন কেবল কোম্পানি লি. (বিএসসিসিএল) গঠন করা হয়। বিলুপ্ত বিটিটিবির সব সম্পদ, দায় ও জনবল এক চুক্তির মাধ্যমে বিটিসিএলে স্থানান্তর করা হয় এবং বিলুপ্ত বিটিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোম্পানিতে ২৪ মাস চাকরি বাধ্যতামূলক করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিসিএস (টেলিকম) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। এছাড়া বিসিএস টেলিকম ক্যাডারের ২১ জন কর্মকর্তা অন্য ক্যাডারে আত্তীকরণের নির্দেশ চেয়ে আরও দুটি রিট করেন। এ সমস্যা সমাধানে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের এক পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়।
পরামর্শক কমিটি বিলুপ্ত বিটিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং টেলিযোগাযোগ-সংক্রান্ত সরকারের নীতি প্রণয়ণে কারিগরি, বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদানকল্পে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে স্থায়ী কাঠামো হিসেবে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠনের প্রস্তাব করে। কমিটির প্রস্তাব এবং আদালতের নির্দেশনার আলোকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৫৫ টি স্থায়ী পদ এবং সাত হাজার ৫১৯টি পর্যায়ক্রমে বিলোপযোগ্য পদসহ মোট সাত হাজার ৭৭৪টি পদের সমন্বয়ে অধিদপ্তর গঠনে সম্মতি জ্ঞাপন করে। বিটিটিবির অনুমোদিত জনবলকাঠামো অনুযায়ী অবশিষ্ট ১১ হাজার ২৫৫ টি পদে কোনো জনবল কর্মরত না থাকায় এসব পদ বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু অর্থ বিভাগে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ মোট পদের সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখে স্থায়ী পদ ২৩৮টি ও পর্যায়ক্রমে বিলোপযোগ্য সাত হাজার ৫৩৬টি পদের সংখ্যা নির্ধারণ করে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, অধিদপ্তর গঠনের বিষয়টি সাধারণত মন্ত্রিসভায় আসার কথা নয়। কিন্তু ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সভায় সরকারি করপোরেশন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় আইনের খসড়া উত্থাপন করা হলেও তা মন্ত্রিসভা ফেরত পাঠিয়েছে। মন্ত্রিসভা বলেছে, প্রত্যেক করপোরেশনের নিজস্ব আইন আছে। তাই সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে কিনা, তা যাচাই করতে ছয় মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *